ইতিহাস গড়লেন কৃষ্ণাঙ্গ নার্স স্যান্ড্রা লিন্ডসে

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Dec 16, 2020 07:43 am
স্যান্ড্রা লিন্ডসে

স্যান্ড্রা লিন্ডসে - ছবি : সংগৃহীত

 

মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধান। জর্জ ফ্লয়েড-হত্যা যদি আমেরিকার কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়, তবে অবশ্যই এক নয়া গৌরবগাথার সূচনা করলেন মার্কিন মুলুকের আরএক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী স্যান্ড্রা লিন্ডসে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি একজন প্রথম সারির সৈনিক। নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালের নার্স। তাকে দিয়েই আমেরিকায় শুরু হল কোভিড মোকাবিলায় টিকাকরণ কর্মসূচি।

রীতিমতো লাইভ ভিডিও করে দেখানো হলো ওই নার্সকে টিকা দেয়ার রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত। শিরদাঁড়া টান করে সেই ভিডিও দেখলেন হাজার হাজার মানুষ। শুভেচ্ছা জানালেন। হাততালি দিলেন। অনেকের আবার দু’চোখ বেয়ে নামল আনন্দাশ্রু। টিকা নেয়ার পর লিন্ডসে জানিয়েছেন, দারুণ লাগছে। আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে, একটা লম্বা যন্ত্রণার অবসান ঘটতে চলেছে। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই তিন লাখ মানুষের মৃত্যুর পর...।

টিকা হাতে পেয়েও তা প্রয়োগের মুহূর্তে বেশকিছু সংশয় ছিল মার্কিন প্রশাসনের। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে একাংশের মনে ভিড় করতে থাকে নানা প্রশ্ন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না তো? উঁকি দেয় এমন সংশয়ও। ফলে টিকা দেয়া শুরু হলেও সবাই কি তা নিতে এগিয়ে আসবে, এ বিষয়ে রয়ে যায় বড় প্রশ্ন চিহ্ন। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই প্রস্তাব এসেছিল কুইনসের লং আইল্যান্ড জিউইশ মেডিক্যাল সেন্টারের আইসিইউতে কর্মরত নার্স স্যান্ড্রা লিন্ডসের কাছে। কর্তৃপক্ষ জানতে চান, এই হাসপাতালের কর্মীদের মধ্যে কে প্রথম স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী? কথাটা শোনার পর সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহূর্ত দেরি করেননি স্যান্ড্রা।

হয়তো তিনি এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন। মহামারীর বিরুদ্ধে দিন-রাত এক করে লড়তে গিয়ে মনের কোণে স্বপ্ন বুনেছিলেন ইতিহাস গড়ার। সেটাই হলো। আর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সেই টিকা নিজের শরীরে নিয়ে লিন্ডসে শুরু করলেন এক নতুন অধ্যায়। ২১ দিনের ব্যবধানে নিতে হবে এই টিকার দু’টি ডোজ। তাকে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দিয়েছেন নিউইয়র্কের গর্ভর অ্যান্ড্রু কুমো। প্রথম টিকা প্রয়োগের পর উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্যুইটবার্তায় তিনি জানিয়েছেন, ‘অভিনন্দন আমেরিকাকে।’ একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেন ট্যুইট করে বলেন, ‘আশাবাদী থাকুন। সামনেই উজ্জ্বল দিন।’ ফাইজারের সিইও অ্যালবার্ট বউরলা জানিয়েছেন, তিনিও এই ভ্যাকসিন নেবেন।

সোমবার সকাল ৯.২০। এটাই ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ৫২ বছরের লিন্ডসে নিউইয়র্কে একজন খ্যাতিমান নার্স। টিকা নেয়ার পর গর্বে তার দু’চোখ চিকচিক করে ওঠে। ফোন-সাক্ষাৎকারে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ যেন লক্ষ্য পূরণ হলো। আমি বরাবরই বিজ্ঞানে বিশ্বাস করি।’ স্যান্ড্রার বড় হয়ে ওঠা জামাইকায়। ছোটবেলায় দাদির শ্রুশূষার মধ্যে দিয়েই তার ‘নার্সিং’য়ের হাতেখড়ি। তখন তিনি প্রাথমিকের পাঠ নিচ্ছেন। একদিন স্কুলে শিক্ষক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বড় হয়ে কী হতে চাও। ঠোঁটের ডগাতেই যেন ছিল উত্তরটা। বলেছিলেন—নার্স। স্বপ্নটা তখনই বোনা হয়ে গিয়েছিল। এর পর বড় হয়ে নিউইয়র্কে পা রেখে ভর্তি হন কমিউনিটি কলেজে। সেখান থেকে ব্রোনক্সের লেহম্যান কলেজ। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার ‘নাইটিঙ্গল’ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করে। চাকরি নিয়ে প্রথমে তিনি চলে যান ম্যানহ্যাটনের লেনক্স হিল হাসপাতালে। তার পর সেখান থেকে ২০১৬ সালে লং আইল্যান্ডের জিউইশ মেডিক্যাল সেন্টার। একেবারে ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্সিংয়ের ডিরেক্টর। কিন্তু সেখানেই যে তার জন্য অপেক্ষা করছে ইতিহাস...তা হয়তো জানা ছিল না ওই কৃষ্ণাঙ্গ তরুণীর।

সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us