কানে কোন সমস্যায় কী করবেন
কানে কোন সমস্যায় কী করবেন - ছবি সংগৃহীত
কানে ময়লা জমেছে! অযথা খোঁচাখুঁচির স্বভাব রয়েছে? তাহলে এখনই সেটা বন্ধ করুন৷ কারণ কানের ময়লা পরিষ্কারের বাতিক মারাত্মক৷ আর তাই শ্রবণশক্তি ঠিক রাখতে এই বদ অভ্যাস ছাড়ার পরামর্শ দিলেন সিএমআরআই-এর ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. সব্যসাচী চক্রবর্তী৷
আজকাল কান নিয়ে অনেকেই সমস্যায় ভোগেন। বেশিরভাগ মানুষেরই সমস্যা কানে কম শোনা। বিশ্বাস হচ্ছে না? কিন্তু এটাই সত্যি৷ পরিবেশ, লাইফস্টাইল বদলে যাওয়ায় ছোট থেকে বড় সবাই অল্পবিস্তর কানে কম শুনছে৷ বিশেষ করে ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে কানে কম শোনার প্রবণতা বাড়ছে৷ সমীক্ষা রিপোর্ট তেমনই বলছে৷ আবার কান খুঁচিয়ে ময়লা পরিস্কার করতে গিয়ে নিজের হাতেই শ্রবণেন্দ্রিয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলছেন অনেকে৷
খোঁচা নয়
বাডস দিয়ে কান পরিষ্কার করার পদ্ধতি একেবারেই ঠিক নয়৷ অনেক সময় আচমকা ধাক্কা লাগলে, নিজের অসতর্কতায় বাডস থেকে কানে ইনফেকশন হয়৷ কানের পর্দাও ফেটে যায়৷ তাহলে কানের ময়লা কীভাবে পরিষ্কার করবেন? ডাক্তারি মতে, মানুষের শরীরে কানের গঠন এমনভাবেই হয়েছে যেখানে তুলোর বাডসের মতো কোনো কিছু দিয়ে পরিষ্কার করার প্রয়োজন পড়ে না৷ কানের ময়লা আপনাআপনি শরীর থেকে তরল অবস্থায় বেরিয়ে যেতে পারে৷ প্রয়োজনে মোটা কাপড় আঙুলে লাগিয়ে আলতো করে কানের ভিতরে পরিষ্কার করতে পারেন৷ কিন্তু মাথার ক্লিপ, সেফটিপিন, দেশলাই কাঠি অথবা বাডস দিয়ে কান খোঁচাবেন না৷ সামান্য অসাবধানতায় কানের ভিতরে রক্ত পড়া, পুঁজ হওয়া, ইনফেকশন কিংবা পর্দা ফেটে যেতে পারে৷
হেড ফোন কিংবা হর্ন থেকে সাবধান
কানে হেডফোন, রাস্তায় গাড়ির হর্ন, কারখানায় যন্ত্রপাতির আওয়াজ – সব আঘাত করছে শ্রবণেন্দ্রিয়ে৷ তাই খেয়াল রাখতে হবে হেডফোন ব্যবহার করলে তার আওয়াজ যেন কম হয়৷ শব্দতরঙ্গ কানের মধ্যে অনেক স্তর ভেদ করে ইন্দ্রিয়তে পৌঁছয়৷ দীর্ঘক্ষণ তীব্রস্বরে হেডফোন ব্যবহার করলে কিংবা ৯০-১০০ ডেসিবেলের বেশি আওয়াজ শব্দবাজি কানের প্রতিটি স্তর ভেদ করে সরাসরি ইন্দ্রিয়কে আঘাত করে৷ শ্রবণশক্তি এক ধাক্কায় অনেকটা কমজোরি হয়ে যায়৷ কম বয়সীদের জন্য ১০০-১১০ ডেসিবেল ও বয়স্কদের জন্য ৮৫-৯০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রার শব্দ কানের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ ৯০ ডেসিবেলের বেশি আওয়াজের শব্দবাজি বর্জন করতে হবে৷ কারখানায় যন্ত্রপাতির আওয়াজ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে কি না সেবিষয়ে শ্রমিকরা খোঁজ নিন৷ ৮০-৮৫ ডেসিবেলের বেশি আওয়াজের মধ্যে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা থাকলে অবশ্যই কানে প্রোটেকশন থাকা দরকার৷ গাড়ির হর্নও যত্রতত্র বাজাবেন না৷ দরকার না পড়লে অযথা জোরে হর্ন নয়৷
কানের রোগ হলে ভারসাম্য হারাতে পারে শরীর
শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে কান৷ কড়া ওষুধ খেলে, কানে ইনফেকশন হলে বা নার্ভ শিথিল হলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে৷ উচ্চতায় উঠলেও অনেক সময় ভারসাম্য নষ্ট হয়৷ তাই কানের যেকোনো সমস্যায় অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷ মাথা ঘুরলে কিংবা শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারছেন না বলে মনে হলে কানের ডাক্তার দেখান৷
চিকিৎসা
ইন্দ্রিয় সতেজ রয়েছে অথচ বাইরের জগত্ থেকে শব্দ কানে পৌঁছতে বাধা পেলে, ময়লা জমলে, কানের পর্দায় ফুটো হলে কিংবা কোনওভাবে আঘাত লাগলে কানের পর্দায় প্রভাব পড়ে৷ এক্ষেত্রে মাইক্রোসার্জারি করলে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে সঠিক ওষুধ, কানের ড্রপ প্রয়োগ করা যায়৷ ইন্দ্রিয় কমজোর হয়ে গেলে ওষুধ দিয়ে কিংবা অপারেশন করে লাভ হয় না৷ তখন একমাত্র কানের মেশিন বসিয়ে বাইরের জগতের আওয়াজকে কৃত্রিমভাবে জোরে শোনানো হয়৷
সাবধানতা অবলম্বন
* ডাক্তার না দেখিয়ে বাজারচলতি কোনো ড্রপ কানে ব্যবহার করবেন না৷ ভুল ড্রপ ব্যবহার করলে কানের * পর্দা ফেটে যেতে পারে, ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷
* সঠিক লাইফস্টাইল মেনে চলুন৷ সামগ্রিকভাবে সুস্থ থাকবেন৷
* কয়েক দিন কান বন্ধ কিংবা স্বাভাবিকভাবে শুনতে না পেলে তুচ্ছ মনে করে এড়িয়ে যাবেন না৷ দ্রুত * ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷ কারণ দেরি হয়ে গেলে পুরোপুরি শ্রবণশক্তি হারানোর ভয় থাকে৷
* রক্ত বা পুঁজ বেরোলে কিংবা ইনফেকশন হলে অযথা আতঙ্কিত হবেন না৷ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ওষুধ খান৷
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন