৫০ বছর পর উদ্ধার হলো সিরিয়াল কিলারের কোডেড মেসেজ!
৫০ বছর পর উদ্ধার হলো সিরিয়াল কিলারের কোডেড মেসেজ! - ছবি : সংগৃহীত
দীর্ঘ ৫০ বছরের অপেক্ষা। অবশেষে পরিষ্কার হলো রহস্যময় জোডিয়াক কিলারের ‘কোডেড’ মেসেজের অর্থ। শুক্রবার এমনই দাবি করেছে ক্রিপ্টোগ্রাফারদের একটি দল। তারা জানিয়েছে, সিরিয়াল কিলার ওই মেসেজে প্রশাসনকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
হত্যাকারী লিখেছে, ‘আপনারা আমাকে ধরার চেষ্টা করছেন। আশার করি, এই কাজে আপনাদের খুব মজা হচ্ছে। তবে আমি গ্যাস চেম্বারকে একটুও ভয় করি না। কারণ এটি আমাকে স্বর্গে পৌঁছে দেবে।’ পাশপাশি, তাকে ধরে ফেললেও বিশেষ লাভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল সরকারি হিসেবে পাঁচজনের হত্যাকারী। তার কথায়, ‘আমার কাজ করার জন্য অসংখ্য ভৃত্য রয়েছে। আমি খুন করতে ভালোবাসি। কারণ এ কাজে আমার খুব মজা লাগে।’
সিরিয়াল কিলারের এই হাড়হিম করার মেসেজ ‘ডিকোড’ করাকে বড় সাফল্য হিসেবেই দেখছে বিভিন্ন মহল। কিন্তু, কেন? আর কেনই বা এই মেসেজকে এত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে? তার জন্য ফিরে যেতে হবে ৫০ বছর আগে।
সময়টা ১৯৬৮-৬৯ সাল। স্থান উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া। ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘাতক ‘জোডিয়াক কিলার’। শহরের বুকে ঘটে চলেছে একের পর এক খুন। এক, দুই করে পর পর পাঁচটি। বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছেন জনা কয়েক। এ তো সরকারি হিসেব। তবে ঘাতকের দাবি, সবমিলিয়ে খুনের সংখ্যা ৩৭। আর তিনি একা নন, খুনে সাহায্য করার জন্য রয়েছে ‘ভৃত্যের দল’। ভয়ে রাতের ঘুম ছুটেছে আমজনতার। কিন্তু, পুলিস-প্রশাসনের দুঁদে কর্মকর্তারাও সিরিয়াল কিলারের টিকি ছুঁতে পারছেন না। নাম-ধাম তো দূরের কথা, খুনের কারণও অজানা।
এর মধ্যেই ১৯৬৯-এ একটি মার্কিন সংবাদপত্রের অফিসে পৌঁছল সিরিয়াল কিলারের বেশ কয়েকটি ‘কোডেড মেসেজ’। প্রশাসন ভাবল, এবার বুঝি রহস্য থেকে পর্দা সরবে। হাতকড়া পরানো যাবে ঘাতককে। কিন্তু, ভাবাই সার। ওই কোডেড মেসেজের মাথা-মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলেন না পুলিশকর্তারা। একদিন, দু’দিন করে কেটে গেল ৫০টা বছর। এর মাঝে দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু লাভ হয়নি। এত দিন পর সেই মেসেজের রহস্যভেদ করার দাবি করেছেন আমেরিকার ওয়েব ডিজাইনার ডেভিড ওরানচক। ২০০৬ সাল থেকে এই রহস্য থেকে পর্দা সরাতে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন তিনি। তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন অস্ট্রেলিয়ান গণিতবিদ স্যাম ব্ল্যাক এবং বেলজিয়ামের লজিস্টিশিয়ান জা ভ্যান এয়েকচে। ওরানচক জানিয়েছেন, ওই কোডেড মেসেজে ১৭টি কলমে বিভিন্ন সংকেত ও অক্ষর মিলিয়ে মোট ৩৪০টি ক্যারেক্টার রয়েছে। একে ৩৪০ সাইফারও বলা হয়। এটি আর পাঁচটি কোড থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। উপরের বাঁদিক থেকে আড়াআড়িভাবে সংকেতগুলি পড়তে হবে। কিন্তু, কীভাবে এই অসাধ্য সাধন হল?
ওরানচক জানিয়েছেন, বিভিন্ন কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, কোড লেখার প্যাটার্ন খুঁজে বার করার ফলেই সাফল্য মিলেছে। ১৯৫০ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যরা এক ধরনের ক্রিপ্টোগ্রাফি ম্যানুয়াল মেনে কোড তৈরি করতেন। এখানেও সেই প্যাটার্নই ব্যবহার করা হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইও জোডিয়াক কিলারের মেসেজের অর্থ উদ্ধারের কথা সরকারিভাবে জানিয়েছে।
৫০ বছর পর একটি মেসেজের মানে তো বোঝা গেল। সেই রহস্যময় সিরিয়াল কিলারের খোঁজ কী মিলবে, সে জবাবও অজানা। এফবিআই বলছে, তদন্ত চলছে। আর মৃতের পরিজনরাও বিচারের আশায় দিন গুনছেন...।
সূত্র : বর্তমান