এবার ইসরাইলের সাথে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করল দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভূটান। শনিবার দিল্লিতে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ভারতে নিযুক্ত ওই দুই দেশের রাষ্ট্রদূত পরস্পরের মধ্যে এই সংক্রান্ত নথিপত্র স্বাক্ষর করেন।

ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বহু বছর ধরে গোপনে আলোচনা চালানোর পরই এই সমঝোতা সম্ভব হয়েছে।’ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও টুইটারে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে লিখেছেন, ‘এটা হলো শান্তি সমঝোতাগুলোর বাড়তি সুফল!’

মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সম্প্রতি আমেরিকার প্রচ্ছন্ন মদতে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা শুরু করেছে। তবে তার সাথে এই পদক্ষেপের সরাসরি সম্পর্ক নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। বরং এখানে ভারত একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে বলেই পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

১৯৪৯ সালে স্বাক্ষরিত ফ্রেন্ডশিপ ট্রিটি বা মৈত্রী চুক্তি অনুযায়ী ভূটানের পররাষ্ট্রনীতির বিষয়টি অনেকাংশেই ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন। তেল আবিবে ভারতীয় দূতাবাস স্থাপনের মধ্যে দিয়ে ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল ১৯৯২ সালের জানুয়ারিতে।

তবে ভারতের প্রভাব বলয়ে থাকা ভুটানের সাথে ইসরাইলের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে তার পরও প্রায় তিন দশক সময় লেগে গেল।

গত আগস্ট মাস থেকে অন্তত চারটি দেশ ইসরাইলকে কূটনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যে তালিকায় সবশেষ সংযোজন ছিল মরক্কো। আর এখন এতে যুক্ত হলো ভুটানও। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মনে করছেন, সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক স্থাপনও এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

এই পটভূমিতে ভুটানের সাথে সমঝোতার পর ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাবি অ্যাশকেনাজি বলেছেন, ‘ইসরাইলের স্বীকৃতির পরিধি ক্রমশ বাড়ছে ও নানা দিকে বিস্তৃত হচ্ছে।’ এশিয়ার সাথে ইসরাইলের সম্পর্ককে আরো গভীর করে তুলতেও এই পদক্ষেপ একটি ‘মাইলফলকে’র কাজ করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত রন মালকাও ভুটানের সঙ্গে সমঝোতার দিনটিকে তার দেশের জন্য এক ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি শনিবারের অনুষ্ঠানের যে সব ছবি পোস্ট করেছেন, তাতে ভুটান ও ইসরাইলের কর্মকর্তাদের নানা নথিপত্র স্বাক্ষর করতে ও করমর্দন করতে দেখা যাচ্ছে।

একাত্তরের ডিসেম্বরে প্রথম যে দেশটি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল সেটি হল ভুটান। বস্তুত ভারতেরও আগে তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় বলে অনেক ঐতিহাসিক জানিয়েছেন।

তবে সেই সিদ্ধান্তের পেছনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীরও অবদান ছিল বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশ ও ইসরাইলের মধ্যে অবশ্য আজও কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। অদূর ভবিষ্যতে তা হবে, এমন কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।

সূত্র : বিবিসি