ট্রাম্প না হারলে বিশ্বে কী হতে পারত
ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
আমেরিকার নভেম্বর নির্বাচন সমাপ্ত এবং ফলাফল ইনফরমালি ঘোষিত হয়েছে। তাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে জো বাইডেন বিজয়ী হতে যাচ্ছেন জানা গেছে। ফলাফল নিয়ে সব আপত্তির নিষ্পত্তি এখনো শেষ হয়নি। তবে সবাই প্রায় মেনে নিয়েছেন, বাইডেনই আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষিত হবেন। গ্লোবাল মিডিয়াতে বাইডেনকে নামের আগে রীতি অনুযায়ী ‘প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট’ শব্দ যোগ করেই পরিচিত করানো হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বড় কথা, বাইডেন তার হবু নতুন সরকারে মানে আমেরিকান ভাষায়, বাইডেন প্রশাসনে কাদেরকে মন্ত্রী, উপদেষ্টা বা প্রধান কর্মকর্তা করবেন এই বাছাইও শুরু হয়ে গিয়েছে। বেছে নেয়া ব্যক্তিদের নাম ক্রমশ আসছে।
হবু বাইডেন প্রশাসনে এক গুরুত্বপূর্ণ পদ ‘সেক্রেটারি অব স্টেট’ বা আমাদের ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী’। এক হিসাবে এটা প্রশাসনের দ্বিতীয় প্রধান গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই পদে বাইডেন যে নাম বেছে নিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ব্লিঙ্কেন এর আগে ওবামা আমলে একসময় উপ-নিরাপত্তা মন্ত্রী (২০১৩-৫) আর উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী (২০১৫-৭) হিসেবে কাজ করেছেন। অর্থাৎ বাইডেন তখন উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন বলে তার সাথে কাজ করেছেন। অনুমান করা হচ্ছে, সেই সূত্রে ব্লিঙ্কেন এবার হবু বাইডেন প্রশাসনে বাছাইয়ে টিকেছেন।
ট্রাম্পের আমলেই একটা নতুন শব্দ চালু হয়েছিল ‘ডি-কাপলিং’। ইংরেজি ‘ডি-কাপলিং’ শব্দের অর্থ কঠিন কিছু নয়। এটা আসলে কাপলের উল্টা শব্দ। কাপলের একটা অর্থ, দম্পতি (স্বামী-স্ত্রী)। মানে, কারো সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হয়ে যাওয়া।
এরই উল্টা শব্দ হলো, ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ককে বিচ্ছিন্ন করা বোঝাতে ডি-কাপলিং। ট্রাম্পের আমলে শেষের দিকে এই শব্দটা ব্যবহার করে বলা হতো ট্রাম্প চীনকে ডি-কাপলিং করার নীতি নিয়েছে। মানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক থেকে আলাদা করে দূরে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাচ্ছে, চীনের সাথে তার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে। যেমন যেসব আমেরিকান কোম্পানি চীনে গড়ে তোলা হয়েছে তা স্থানান্তর করে দেশে ফিরিয়ে না আনলেও চীনের বাইরে অন্য দেশে নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন। আর তাতে ওই স্থানান্তরের খরচও ট্রাম্পের সরকার বহন করবে। এই ছিল, ট্রাম্পের ডি-কাপলিং। এমনকি এই প্ররোচনায় জাপান এগিয়ে এসেছিল। অবশ্য যুক্তি দিয়েছিল যে, চীনের ভাইরাস থেকে বাঁচতে এটা সে করছে। তবে কোনো বড় কোম্পানির ক্ষেত্রে এমন স্থানান্তর খুবই রুটিন। আর তা মূলত যে কারণে তা হলো, ফেলে আসা দেশে ন্যূনতম মজুরি তুলনায় বেড়ে যাওয়া। বা উল্টা করে বললে, নতুন কোনো দেশ পাওয়া গেছে যেখানে ন্যূনতম মজুরি অনেক কম এবং অবকাঠামোগত সুবিধা অনেক ভালো, প্রশাসন দক্ষ চটপটে ইত্যাদি। এমন পাওয়া গেছে বলেই ফ্যাক্টরি স্থানান্তর করা হচ্ছে, তা। যেমন জাপান বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে বাংলাদেশের এক সিগারেট কোম্পানি কিনে বাংলাদেশের সিগারেট ব্যবসায় ঢুকে গেছে অনেকটা এমনই। তবে মেশিনপত্র নয়, পুঁজি স্থানান্তর করে। আর বিপরীতে, ট্রাম্পের ব্যবস্থাটার উদেশ্য হলো চীনকে একঘরে করা, চীনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে।
হবু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ‘ডি-কাপলিং করা এক অবাস্তবচিত ও উলটা ফল দেবে এমনটা কাউন্টার-প্রডাকটিভ ধারণা।’ এ নিয়ে তিনি আমেরিকান কমার্স চেম্বারে বক্তৃতাও করেছেন।
গ্লোবাল বাণিজ্য
‘গ্লোবাল বাণিজ্য’ শব্দটা শুনলে বিরাট দুনিয়াব্যাপী কোনো ঘটনা মনে হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা একেবারেই দূরের কিছু না। এখানে বাণিজ্য মানে লেনদেন; অর্থাৎ আপনি আপনার পণ্য দেবেন আর অন্যের পণ্য নেবেন। কিন্তু না, অনেকের মনে হতে পারে এর আরেকটা মানে আছে। সেটা হলো, বাণিজ্য মানে পণ্য দিয়ে মুদ্রা নেবেন। হ্যাঁ, এই কথাও ঠিক; তবে এটা পুরো ঘটনার অর্ধেকটা। আপনি পণ্য দিয়ে যে মুদ্রা নিয়ে ফিরলেন সেই মুদ্রা দিয়ে আবার অন্য পণ্য বা কাঁচামাল কিনবেন। মানে, কিনতে হবে আপনাকে। যেটা শেষ বিচারে পণ্য বেচে আরেক পণ্য কেনার ঘটনায় দাঁড়াবে। এ জন্য বাণিজ্য মানে, পণ্য লেনদেন। এটাই পণ্য কেনাবেচা মানে বিনিময়, ইংরাজিতে এক্সচেঞ্জ। তাই গ্লোবাল বাণিজ্য মানে একটা গ্লোবাল এক্সচেঞ্জ, দুনিয়াব্যাপী পণ্য বিনিময়।
কথাগুলো ধারণা হিসেবে ঠিক আছে, তবুও একটা বিষয় এতে আড়ালে থেকে গেছে, সেটা সামনে আনতে হবে। সে বিষয়টা হলো মুদ্রা। পণ্য কেনাবেচা করতে গেলে মুদ্রা লাগবে। কথা আরো আছে। পকেটে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে আপনি বাংলাদেশের যেখানেই যান যেকোনো পণ্য কিনতে পারবেন। টাকার বিনিময়ে বিক্রেতা আপনাকে পণ্য দেবে। তবে আবার সেই ‘কিন্তু’! বাংলাদেশের সীমান্ত পার হলে? না, এইবার আর কেউ আপনাকে কোন পণ্য বেচবে না। কারণ আপনারটা বাংলাদেশের মুদ্রা, তাই বাংলাদেশের ভেতরে থাকলে যেকোনো বিনিময় সম্ভব হলেও সীমান্ত পার হলে কিন্তু আর ওই মুদ্রা চলবে না। প্রত্যেকটা স্থানীয় মুদ্রার সীমাবদ্ধতা হলো, দেশের সীমানা পার হলে ওই মুদ্রায় কোনো বাণিজ্য, পণ্য কেনাবেচা বা বিনিময় আর চলে না। তাহলে?
দেশের বাইরেও বাণিজ্য বা বিনিময় করতে চাইলে এবার প্রয়োজন ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা’। এমন এক মুদ্রা, যা দেশের সীমানা পার হয়ে গেলেও যেকোনো দেশেই ওই মুদ্রায় পণ্য বাণিজ্য বা বিনিময় তখনো বিক্রেতারা করবেন। তাই এবার সোজা মানে হলো, আন্তর্জাতিক মুদ্রায় যে বাণিজ্য সম্পন্ন করা যায় তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। এটাকেই গ্লোবাল বাণিজ্যও বলে। বাংলাদেশের বাইরে থেকে কোনো কিছু বেচাকেনা, বাণিজ্য করে আসা-এটাই গ্লোবাল বাণিজ্য। আমাদের সীমান্তের বাইরের ভারত থেকে কোনো কিছু বাণিজ্য করে আসাও তাই গ্লোবাল বাণিজ্যের অংশ। কাজেই ‘গ্লোবাল বাণিজ্য’ বলতে সুদূরের কোনো ঘটনা নয়। বাংলাদেশের সীমান্ত পার হলেই এর শুরু।
এখন ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা’ আবার কী? গ্লোবাল বাণিজ্য মানে আদতে আন্তঃরাষ্ট্রীয় পণ্য বেচাকেনার বাণিজ্য। আর এটাই সম্পন্ন করার একটা সিস্টেম বা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে যে বহুরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেটাই আইএমএফ। ফলে যেসব দেশের মুদ্রাকে আইএমএফ আন্তর্জাতিক মুদ্রা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে (তাদের শর্ত পূরণের কারণে), যে মুদ্রার বিনিময় হার (কনভারশন রেট) আইএমএফ নির্ধারণ করে দিয়েছে, এমন মুদ্রাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা। যেমন- ডলার, পাউন্ড, ইউরো, ইয়েন ও ইউয়ান আন্তর্জাতিক মুদ্রা। তবে মনে রাখতে হবে এগুলো কিন্তু প্রধানত দেশীয় মুদ্রা বা নিজ নিজ দেশের স্থানীয় মুদ্রা যাকে আবার ‘ডাবল রোল’ হিসেবে কাজ করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রারও স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
এখন এতে দুনিয়াতে যে বিরাট পরিবর্তন এসেছে তা হলো- একটা ‘গ্লোবাল অর্ডার’ বা ব্যবস্থাপনা চালু হয়ে গেছে যার কারণে আমরা নিজ দেশের ভেতরের মতোই দেশের বাইরেও বাণিজ্য-বিনিময় বা গ্লোবাল বাণিজ্য সহজেই করতে পারি।
কিন্তু এ তো গেল ইতিবাচক দিক। এবার নেতিবাচক দিক থেকে দেখা যাক। যেমন ইরান কোন কোন দেশের সাথে বাণিজ্য করতে পারবে বা আদৌ কারো সাথে পারবে কিনা এটা ডিকটেট করার ক্ষমতা এসে গেছে আমেরিকার হাতে। এটাকে আমরা ইরানের ওপর আমেরিকার ‘অবরোধ’ বলে জানি। কিন্তু এটা আমেরিকা কার্যকর করে কী করে? সোজা। আমেরিকার ‘অবরোধ’ কথার প্রাকটিক্যাল মানে হলো, যেন আমেরিকা বলছে, ইরান তুমি কোনো কেনাবেচা ডলারে করতে পারবে না; মানে, ইনভয়েসে মূল্যটা ডলারে লিখতে পারবে না। করলে কী হবে, আমেরিকা বাধা দেবে কিভাবে? ইনভয়েসে বিলে ডলারে দাম লেখার মানে হলো, ওই কেনাবেচা সম্পন্ন করতে আপনার বা ক্রেতার ব্যাংক আর বিক্রেতরা ব্যাংকের মাঝখানে একটা আমেরিকান ব্যাংকের সাহায্য লাগবেই। না হলে কেনাবেচায় মূল্যের অর্থ-স্থানান্তর ঘটবে না। আর ট্রাম্প তার ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যাদের অবরোধ তালিকায় ফেলেছি এদের দেশের কোনো কোম্পানির অর্থ ছাড়ে জড়িত হবে না, হলে ওই আমেরিকান ব্যাংককেই আমেরিকা-রাষ্ট্র বিলিয়ন ডলারের জরিমানা করবে।’ এভাবেই অবরোধ কার্যকর করেছে আমেরিকা।
ডি-কাপলিং
তাহলে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে ‘চায়না ডি-কাপলিং’ এই প্রোগ্রামের আসল মানে কী? মানে হলো, চীনকে একঘরে করা। কিন্তু ‘একঘরে’ মানে? আমাদের গ্রামের একঘরে মানে ওর নুন, পানি বন্ধ করে দেয়া; আর ওর সাথে কেউ কোনো পণ্য বিনিময় করবে না যার ব্যবহারিক মানে ‘নো এক্সচেঞ্জ’-ওকে সমাজ থেকে বের করে দেয়া; যদিও সে আগের বাড়িতেই বসবাস করবে, তার পরেও। কেমন করে এটা ঘটানো সম্ভব হবে? কারণ, ওর সাথে পণ্য বিনিময় না করা মানে, ও যে লবণটা খাবে সেটাও তাকে নিজেই সমুদ্রের পানি জোগাড় করে শুকাতে হবে, না হয় লবণের খনি জোগাড় করতে হবে নিজেই। তাতে সমুদ্র হাজার মাইল দূরে বা লবণের খনি খুঁজতে পাকিস্তানের সিন্ধুতে যেতে হতে পারে। মূল কথায়, যা কিছু সে ভোগ করবে তার সবটার ‘উৎপাদক’ তাকে নিজেই হতে হবে। ‘নো এক্সচেঞ্জ’ কথার মানে তাই। এখান থেকেই ‘সমাজ’ কথাটার মানে কত বিশাল সে হুঁশ আসতে পারে আমাদের। আমরা যারা যারা পণ্য বিনিময় করি-জড়াই তারা এই কাজের মাধ্যমে আসলে একটা সমাজ গড়ে তোলে, অজান্তেই। সমাজ মানে তাই এক অর্থে পণ্য বিনিময়কারীদের সমাজ, পরস্পরকে স্বীকৃতি দেয়ার সমাজ। এমনকি এভাবে ‘আন্তর্জাতিক সমাজ’ও।
আর ঠিক এর উল্টাটাই হলো ‘জাতিবাদী সমাজ’। সে জন্য জাতি-রাষ্ট্র বা বিদেশবিরোধী কথাটার অর্থ এখানেই। তত্ত্ব অনুযায়ী এসব দেশে সবকিছুই নিজেরাই উৎপন্ন করার কথা। তত্ত্বীয়ভাবে বললে এরা আমদানি-রফতানি করতে অপছন্দ করে। সীমান্তে চীনের হাতে মার খেয়ে চীনা-পণ্য বয়কটের হুঙ্কার দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টাটা, চীনা পণ্যের আমদানি বেড়েছে। এটাই মোদির ‘আত্মনির্ভরশীল’ তবে ‘অলীক অর্থনীতি’। গত সপ্তাহে ভারতের নতুন পার্লামেন্ট বিল্ডিং নির্মাণ উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই আত্মনির্ভরশীল (তবে অলীক) অর্থনীতির গড়বেন বলে ‘চাপা মেরেছেন’।
তামাশার কথা হলো, ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছিলেন এমনই এক কল্পিত আমেরিকান জাতিবাদী অর্থনীতি গড়বেন বলে- ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নামে।
সেই ট্রাম্প বলতে চাইছেন, চীন চাক বা না চাক তিনি চীনকে একঘরে জাতিবাদী বানাবেন। তবে এটা হলো খায়েশের কথা। আর বাস্তবে সেটা আসলে উল্টা। তিনি চীনবিরোধী হতে চান এমন বুঝা না বুঝা উসকানি-চুলকানি যাদের আছে এ ধরনের দেশগুলোর একটা আমেরিকান প্রভাবাধীন জোট বানিয়ে চীনকে তা থেকে আলাদা করে দিতে চান। এমনই কল্পরূপের কিছু নমুনা হলো, ‘কোয়াড’ রাষ্ট্র গ্রুপ বা হবু ইন্দো-প্যাসিফিক উদ্যোগ ইত্যাদি।
আপাতত ট্রাম্পের হাত থেকে দুনিয়া বেঁচে গেছে, চায়না অথবা কোনো দেশকে ডি-কাপলিং করা দুনিয়াকে আর দেখতে হচ্ছে না। কারণ ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে গেছেন। আর ব্লিঙ্কেনও দাবি করছেন, তিনি বুঝেছেন ডি-কাপলিং অবাস্তব। কিন্তু ধরা যাক, ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলে কী হতো?
এক কথায় বললে, সেটাই হতো সত্যিকার অর্থে ‘কোল্ড-ওয়ার ২’, যা নিয়ে অনেকে এর আগে আন্দাজে ঢিল মেরেছেন। চীন ও আমেরিকার ঝগড়া-সঙ্ঘাত মারাত্মক হলেই লিখে দিয়েছেন ‘কোল্ড-ওয়্যার ২’ আসছে। গত ১৯৫৩-৯১ সাল, এই সময়কালে দুনিয়াটাকে সোভিয়েত-আমেরিকা এ দুই ব্লকে ভাগ করে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শুধু দুই ব্লক-জোট রাষ্ট্রে দুনিয়া ভাগ করলেই সেটা কোল্ড-ওয়্যার বলে চালানোটা আনাড়িপনা হবে। তাহলে আর কী শর্ত লাগবে? সেটা হলো, যদি একটি ব্লক-জোট ‘গ্লোবাল বাণিজ্যে’ অংশ না নেয়। এটা বুঝা খুবই সহজ। যদি দেখা যায়, যাদের কোল্ড-ওয়্যারে জড়িয়ে যাওয়াকে দুই দেশ বা ব্লক বুঝাতে চাচ্ছি তাদের একটা ব্লক-জোট যদি শুরু থেকেই আইএমএফের সদস্যই না হয় অথবা আগে হয়ে থাকলে এখন সদস্যপদ ত্যাগ করে,। এই ত্যাগ করা মানে, ওসব রাষ্ট্র আর ‘গ্লোবাল বাণিজ্যে’ অংশ নিতে পারবে না। ঠিক এমনটা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সোভিয়েত ব্লকের অনেক রাষ্ট্রের।
আইএমএফের জন্মের সময় ১৯৪৪ সালে আমেরিকার এক ব্রেটনউড হোটেলের ২২ দিনের সম্মেলনে সোভিয়েত ইউনিয়নের মানে, জোসেফ স্টালিনের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু এর জন্ম দলিল তৈরি করা সম্পন্ন হওয়ার পরে ফাইনাল সদস্যপদ নিয়ে যখন চাঁদা দিয়ে স্বাক্ষর করতে হয় তখন থেকে কোনো সোভিয়েত প্রতিনিধি আর উপস্থিত হননি। তাই সোভিয়েত ইউনিয়ন আইএমএফের সদস্য ছিল না। তবে পঞ্চাশের দশকে আইএমএফ ফাংশনাল হলে সোভিয়েত ব্লকের অনেক সদস্যই যেমন- পোল্যান্ড এর সদস্যপদ পেতে আবেদন করেছিল। তাতে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক উভয়েই অনুমোদন করলেও আমেরিকান প্রশাসনের আপত্তিতে তা বাতিল হয়ে যায়। অতএব সোভিয়েত ব্লক-জোটের সাথে আমেরিকার নেতৃত্বে বাকিদের কোনো গ্লোবাল বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল না। তাই পণ্য বিনিময় বাণিজ্য সম্ভব ছিল না।
কাজেই ট্রাম্পের স্বপ্ন অধরা হয়ে থাকার সম্ভাবনাই ছিল প্রচুর। তবু একালে বাইডেনের হবু প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, ডি-কাপলিং ‘অবাস্তব’ ও ‘কাউন্টার-প্রডাকটিভ’। কথাটা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ; যদিও এর মানে বাইডেনের আমলে চীন ও আমেরিকার মাঝে আর কোনো সঙ্ঘাত থাকবে না তা একেবারেই সত্যি নয়। মূল বিষয়, একই গ্লোবাল বাণিজ্য সমাজে থাকছে কিনা। যদি থাকে, তবেই দুনিয়া ফান্ডামেন্টালি ঠাণ্ডা থাকবে!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com