বিশ্ব বাণিজ্য মার্কিন খবরদারির নমুনা
ডোনাল্ড ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
‘গ্লোবাল বাণিজ্য’ শব্দটা শুনলে বিরাট দুনিয়াব্যাপী কোনো ঘটনা মনে হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা একেবারেই দূরের কিছু না। এখানে বাণিজ্য মানে লেনদেন; অর্থাৎ আপনি আপনার পণ্য দেবেন আর অন্যের পণ্য নেবেন। কিন্তু না, অনেকের মনে হতে পারে এর আরেকটা মানে আছে। সেটা হলো, বাণিজ্য মানে পণ্য দিয়ে মুদ্রা নেবেন। হ্যাঁ, এই কথাও ঠিক; তবে এটা পুরো ঘটনার অর্ধেকটা। আপনি পণ্য দিয়ে যে মুদ্রা নিয়ে ফিরলেন সেই মুদ্রা দিয়ে আবার অন্য পণ্য বা কাঁচামাল কিনবেন। মানে, কিনতে হবে আপনাকে। যেটা শেষ বিচারে পণ্য বেচে আরেক পণ্য কেনার ঘটনায় দাঁড়াবে। এ জন্য বাণিজ্য মানে, পণ্য লেনদেন। এটাই পণ্য কেনাবেচা মানে বিনিময়, ইংরাজিতে এক্সচেঞ্জ। তাই গ্লোবাল বাণিজ্য মানে একটা গ্লোবাল এক্সচেঞ্জ, দুনিয়াব্যাপী পণ্য বিনিময়।
কথাগুলো ধারণা হিসেবে ঠিক আছে, তবুও একটা বিষয় এতে আড়ালে থেকে গেছে, সেটা সামনে আনতে হবে। সে বিষয়টা হলো মুদ্রা। পণ্য কেনাবেচা করতে গেলে মুদ্রা লাগবে। কথা আরো আছে। পকেটে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে আপনি বাংলাদেশের যেখানেই যান যেকোনো পণ্য কিনতে পারবেন। টাকার বিনিময়ে বিক্রেতা আপনাকে পণ্য দেবে। তবে আবার সেই ‘কিন্তু’! বাংলাদেশের সীমান্ত পার হলে? না, এইবার আর কেউ আপনাকে কোন পণ্য বেচবে না। কারণ আপনারটা বাংলাদেশের মুদ্রা, তাই বাংলাদেশের ভেতরে থাকলে যেকোনো বিনিময় সম্ভব হলেও সীমান্ত পার হলে কিন্তু আর ওই মুদ্রা চলবে না। প্রত্যেকটা স্থানীয় মুদ্রার সীমাবদ্ধতা হলো, দেশের সীমানা পার হলে ওই মুদ্রায় কোনো বাণিজ্য, পণ্য কেনাবেচা বা বিনিময় আর চলে না। তাহলে?
দেশের বাইরেও বাণিজ্য বা বিনিময় করতে চাইলে এবার প্রয়োজন ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা’। এমন এক মুদ্রা, যা দেশের সীমানা পার হয়ে গেলেও যেকোনো দেশেই ওই মুদ্রায় পণ্য বাণিজ্য বা বিনিময় তখনো বিক্রেতারা করবেন। তাই এবার সোজা মানে হলো, আন্তর্জাতিক মুদ্রায় যে বাণিজ্য সম্পন্ন করা যায় তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। এটাকেই গ্লোবাল বাণিজ্যও বলে। বাংলাদেশের বাইরে থেকে কোনো কিছু বেচাকেনা, বাণিজ্য করে আসা-এটাই গ্লোবাল বাণিজ্য। আমাদের সীমান্তের বাইরের ভারত থেকে কোনো কিছু বাণিজ্য করে আসাও তাই গ্লোবাল বাণিজ্যের অংশ। কাজেই ‘গ্লোবাল বাণিজ্য’ বলতে সুদূরের কোনো ঘটনা নয়। বাংলাদেশের সীমান্ত পার হলেই এর শুরু।
এখন ‘আন্তর্জাতিক মুদ্রা’ আবার কী? গ্লোবাল বাণিজ্য মানে আদতে আন্তঃরাষ্ট্রীয় পণ্য বেচাকেনার বাণিজ্য। আর এটাই সম্পন্ন করার একটা সিস্টেম বা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে যে বহুরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেটাই আইএমএফ। ফলে যেসব দেশের মুদ্রাকে আইএমএফ আন্তর্জাতিক মুদ্রা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে (তাদের শর্ত পূরণের কারণে), যে মুদ্রার বিনিময় হার (কনভারশন রেট) আইএমএফ নির্ধারণ করে দিয়েছে, এমন মুদ্রাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা। যেমন- ডলার, পাউন্ড, ইউরো, ইয়েন ও ইউয়ান আন্তর্জাতিক মুদ্রা। তবে মনে রাখতে হবে এগুলো কিন্তু প্রধানত দেশীয় মুদ্রা বা নিজ নিজ দেশের স্থানীয় মুদ্রা যাকে আবার ‘ডাবল রোল’ হিসেবে কাজ করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রারও স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
এখন এতে দুনিয়াতে যে বিরাট পরিবর্তন এসেছে তা হলো- একটা ‘গ্লোবাল অর্ডার’ বা ব্যবস্থাপনা চালু হয়ে গেছে যার কারণে আমরা নিজ দেশের ভেতরের মতোই দেশের বাইরেও বাণিজ্য-বিনিময় বা গ্লোবাল বাণিজ্য সহজেই করতে পারি।
কিন্তু এ তো গেল ইতিবাচক দিক। এবার নেতিবাচক দিক থেকে দেখা যাক। যেমন ইরান কোন কোন দেশের সাথে বাণিজ্য করতে পারবে বা আদৌ কারো সাথে পারবে কিনা এটা ডিকটেট করার ক্ষমতা এসে গেছে আমেরিকার হাতে। এটাকে আমরা ইরানের ওপর আমেরিকার ‘অবরোধ’ বলে জানি। কিন্তু এটা আমেরিকা কার্যকর করে কী করে? সোজা। আমেরিকার ‘অবরোধ’ কথার প্রাকটিক্যাল মানে হলো, যেন আমেরিকা বলছে, ইরান তুমি কোনো কেনাবেচা ডলারে করতে পারবে না; মানে, ইনভয়েসে মূল্যটা ডলারে লিখতে পারবে না। করলে কী হবে, আমেরিকা বাধা দেবে কিভাবে? ইনভয়েসে বিলে ডলারে দাম লেখার মানে হলো, ওই কেনাবেচা সম্পন্ন করতে আপনার বা ক্রেতার ব্যাংক আর বিক্রেতরা ব্যাংকের মাঝখানে একটা আমেরিকান ব্যাংকের সাহায্য লাগবেই। না হলে কেনাবেচায় মূল্যের অর্থ-স্থানান্তর ঘটবে না। আর ট্রাম্প তার ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যাদের অবরোধ তালিকায় ফেলেছি এদের দেশের কোনো কোম্পানির অর্থ ছাড়ে জড়িত হবে না, হলে ওই আমেরিকান ব্যাংককেই আমেরিকা-রাষ্ট্র বিলিয়ন ডলারের জরিমানা করবে।’ এভাবেই অবরোধ কার্যকর করেছে আমেরিকা।