মুখে দুর্গন্ধ? যেভাবে সারবে এই সমস্যা
মুখে দুর্গন্ধ? যেভাবে সারবে এই সমস্যা - মুখে দুর্গন্ধ?
আপনি কথা বললেই গা গুলিয়ে ওঠে। সবাই তখন এড়িয়ে পালায়। যখন-তখন প্রেস্টিজ পাংচার। লজ্জায় মুখ বন্ধ রেখে লাভ নেই। মুখের দুর্গন্ধ এড়াবেন কীভাবে সেই উপায় জানাচ্ছেন স্মাইল অ্যান্ড প্রোফাইলের ডিরেক্টর, ডেনটিস্ট ডাঃ তাপস সিনহা ও সুরক্ষা পলিক্লিনিকের জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশিস মিত্র।
দামি জামা, ব্র্যান্ডেড পারফিউম। কোথাও কোনো খামতি নেই। কিন্তু মুখ খুললেই ইমপ্রেশন জিরো। আপাতদৃষ্টিতে শরীর একেবারে সুস্থ থাকলেও মুখের দুর্গন্ধই যেকোনো জায়গায় নেগেটিভ ইম্প্রেশন তৈরি করে। কিন্তু আর পাঁচটা রোগের মতো মুখে দুর্গন্ধকে অনেকে তোয়াক্কাই করেন না। কেউ কেউ আবার কিছু প্রচলিত টোটকা ব্যবহার করে সাময়িক অস্বস্তি কাটান। কিন্তু যেকোনো অসুখের মতো এক্ষেত্রেও সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন। আর জীবনযাপনে একটু সজাগ হলেই সহজে মুখের দুর্গন্ধ কাটিয়ে ওঠা যায়।
দুর্গন্ধের কারণ :
১. প্রতিদিনের খাবারের অংশ অনেক সময় দাঁতের মধ্যে আটকে থাকে। পরে লালার মধ্যে থাকা জীবাণু ওই জমে থাকা খাবারের সঙ্গে ক্রিয়া করে মাড়ি ও দাঁতকে সংক্রামিত করে তোলে। ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয়।
২. নিয়মিত এবং ঠিকভাবে দাঁত না মাজলে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় যা মাড়িকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দাঁত ও মাড়ির মাঝে ফুটো করে দেয়। এর থেকে মুখে গন্ধ হয়।
৩. মিষ্টি জাতীয় খাবার, চকোলেট, লজেন্স খাওয়ার পর মুখ না ধুলে মুখে জীবাণুর সংক্রমণ হয়। ফলে কিছুক্ষণ পর থেকেই মুখে দুর্গন্ধ হতে থাকে।
৪. বেশিক্ষণ কথা বললে ডায়াবেটিস, কিডনি, হার্ট ও আর্থ্রাইটিসের রোগীদের জিভ, মুখের ভিতর শুকিয়ে যায়। আবার মুখ খুলে ঘুমোলেও মুখের ভিতরে শুকিয়ে যায়। এইসব ক্ষেত্রে মুখে দুর্গন্ধ হয়।
৫. ক্রনিক সাইনাসের সমস্যা হলে কিংবা সংক্রমিত হয়ে নাক বন্ধ থাকলে।
৬. শরীরে ভিটামিনের অভাব হলে।
৭. জিভে কিংবা মুখে ইনফেকশন হলে।
৮. অ্যাজমা সংক্রান্ত শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ইনহেলার ব্যবহারের পরে ভালো করে মুখ না ধুলে মুখে গন্ধ হতে পারে।
৯. বয়সজনিত কারণে খাবার ঠিকমতো হজম না হলে অম্বল, গ্যাসট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় মুখে দুর্গন্ধ হতে দেখা যায়।
১০. সহজপাচ্য খাবার না খেয়ে বেশি তৈলাক্ত খাবার খেলেও মুখে বাজে গন্ধ হয়।
১১. যে সকল বাচ্চা দুধ খায় তাদের মুখেও দুধ থেকে দুর্গন্ধ হতে পারে।
১২. ধূমপান কিংবা যে কোনও তামাকজাতীয় দ্রব্য খেলে মুখে দুর্গন্ধ হতে দেখা যায়।
ঠিক কারণটি জেনে চিকিৎসা :
মুখে দুর্গন্ধ হলেই প্রাথমিকভাবে দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি মাড়ি কিংবা দাঁতের কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে ঠিক কোন কারণের জন্য দুর্গন্ধ হচ্ছে তা চিহ্নিত করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অযথা দুশ্চিন্তা না করে আপনার দীর্ঘ দিনের কোনো রোগের চিকিৎসা করলেই হয়তো পুরোপুরি মুখের দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পেতে পারেন।
কীভাবে প্রতিকার :
১. নিয়ম করে অন্তত দু’বেলা ভালো করে দাঁত মাজতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে আঙুল দিয়ে দাঁত মেজে নিন। পরে ব্রেকফাস্ট করে ভালো করে ব্রাশ করুন।
২. পারলে ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনার খাওয়ার পর দাঁত মাজার অভ্যাস করুন। এতে খাবারের কোনো অংশ দাঁতের মাঝে জমে থাকবে না এবং মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হবে না।
৩. দাঁত ও মাড়ির পরিচর্যা ঠিকভাবে করে করুন। বছরে অন্তত একবার স্কেলিং করে দাঁত পরিষ্কার করা উচিত। এতে দাঁতের স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে এবং মুখে কোনো রকম দুর্গন্ধ হবে না।
৪. দাঁত মাজার ঠিক পরামর্শ নিন। অনেক সময় দিনে দু’-তিনবার ব্রাশ করলেও আদৌ কোনও লাভ হয় না। কারণ ঠিক পদ্ধতিতে দাঁত মাজা হয় না। তাই বছরে অন্তত একবার দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. খাবার পর দু’বার গরম পানিতে নুন কিংবা ফটকিরি দিয়ে কুলকুচি করুন। অন্তত রাতে শোওয়ার আগে এটি করলে মুখে কোনো ইনফেকশন ও দুর্গন্ধ হবে না।
৬. মুখ বার বার শুকিয়ে গেলে কিছুক্ষণ বাদে বাদে পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। পারলে সাময়িক দুর্গন্ধ দূর করতে সুগার ফ্রি চিউইংগামও চিবোতে পারেন।
৭. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবু, পেয়ারা, আমলকী খান। রোজের মেনুতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের পরিমাণ যথাযথ পরিমাণে রাখুন। সহজপাচ্য খাবার খান। এতে বদহজম হয়ে মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
৮. চকোলেট কিংবা মিষ্টি জাতীয় কোনো খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্তত পানি দিয়ে মুখ কুলকুচি করে নিন।
৯. মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু বেশি নয়। মাউথ ওয়াশ বেশি ব্যবহার করলে মুখে এক ধরনের ছত্রাক জন্মানোর আশঙ্কা থাকে।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন