যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ম্যালকম এক্স

গোলাপ মুনীর | Dec 11, 2020 06:16 pm
ম্যালকম এক্স

ম্যালকম এক্স - ছবি : সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত মানবাধিকার নেতা ম্যালকম এক্স জেলে থাকার সময় জানতে পারেন ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ সম্পর্কে এবং সে সময়েই তিনি এর সদস্য হন। এটি ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের একটি বিতর্কিত আন্দোলন। এর লক্ষ্য ছিল হোয়াইট সুপ্রিমেসির অর্গল ভেঙে এর বিপরীতে ব্ল্যাক সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের মুক্তি অর্জন। ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ নাম থেকে মনে হতে পারে এটি একটি ইসলামি আন্দোলন। কিন্তু এর নীতি ইসলাম ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক। সত্যিকারের ইসলামের সাথে এর সামঞ্জস্য ছিল না। জেলে থাকার সময় তার ভাইয়েরা থাকে চিঠি লিখে জানান ন্যাশন অব ইসলামের কথা। তখন এটি ছিল তুলনামূলক নতুন একটি ধর্মীয় আন্দোলন। এটি প্রচার করত কৃষ্ণাঙ্গদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের কথা। এবং চূড়ান্তপর্যায়ে গোটা আফ্রিকাকে একত্র করে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য এমন এক দেশ গড়া, যা থাকবে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের প্রাধান্য থেকে মুক্ত। প্রথমে ম্যালকম ন্যাশন অব ইসলাম সম্পর্কে সামান্য আগ্রহ দেখান। ১৯৪৮ সালে তার ভাই রেগিন্যাল্ড ম্যালকম চিঠি লিখে নিষেধ করেন আর শূকরের মাংস না খেতে এবং সিগারেট আর পান না করতে। এরপর ম্যালকম সিগারেট ছেড়ে দেন, শূকরের মাংস খেতে অস্বীকার করেন। তার ভাই রেগিন্যাল্ড জেলে দেখা করে তাকে ন্যাশন অব ইসলামের শিক্ষার কথা জানান। সে যা-ই হোক ১৯৫২ সালে প্যারোলে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ম্যালকম এক্স শিকাগোতে গিয়ে দেখা করেন ন্যাশন অব ইসলামের নেতা এলিজা মোহাম্মদের সাথে।

১৯৫৩ সালে ডেট্রয়েটের ন্যাশনস টেম্পল নাম্বার ওয়ানের অ্যাসিস্ট্যান্ট মিনিস্টার ঘোষণা করা হয়। এ বছরের শেষ দিকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বোস্টনের টেম্পল নাম্বার এলিভেন। ১৯৫৪ সালের মার্চে টেম্পল নাম্বার ১২ সম্প্রসারিত করেন ফিলাডেলফিয়ায়। এরপর দুই মাসের মধ্যে তাকে হার্লেমের টেম্পল নাম্বার সেভেনের প্রধান করে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি দ্রুত সদস্যসংখ্যা বাড়াতে সক্ষম হন। অল্প সময়েই তিনি হয়ে ওঠেন ন্যাশন অব ইসলামের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। ১০-১২ বছর এমনিভাবেই চলে। কোরিয়ান যুদ্ধের বিরোধিতা করে এবং নিজেকে কমিউনিস্ট ঘোষণা করে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের কাছে চিঠি লেখার পর এফবিআই ১৯৫০ সালে ম্যালকম একোসর নামে একটি ফাইল খোলে। ১৯৫৩ সাল থেকে এফবিআই তাকে নজরদারিতে রাখে। এফবিআই ধরে নেয় তার দ্রুত ন্যাশন অব ইসলামের নেতা হওয়ার পেছনে কমিউনিস্টদের হাত আছে। ১৯৫৫ সালে এসেও ম্যালকম সংগঠনের সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে তার সাফল্য ধরে রাখতে সক্ষম হন। তিনি টেম্পল নাম্বার ১৩ প্রতিষ্ঠা করেন ম্যাচাচুসেটসের স্প্রিংফিল্ডে। টেম্পল নাম্বার ১৪ প্রতিষ্ঠা করেন কানেকটিকাটের হার্টফোর্ডে, টেম্পল নাম্বার ১৫ জর্জিয়ার আটলান্টায়। প্রতি মাসে শত শত আফ্রিকান-আমেরিকান যোগ দিতে থাকে ন্যাশন অব ইসলামে। একজন বক্তা হিসেবে তার দক্ষতা ছাড়াও তার আকর্ষণীয় একটি দেহ ছিল। তার উচ্চতা ছিল ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি, অন্য হিসাবে ১.৯১ মিটার। ওজন ১৮০ পাউন্ড বা ৮২ কেজি। একজন লেখক তাকে বর্ণনা করেছেন ‘পাওয়ারফুলি বিল্ট’ এবং অন্য লেখক ‘মেসমেরিজিংলি হ্যান্ডসাম’ বলে। একসময় তার বিরোধ দেখা দেয় ন্যাশন অব ইসলামের প্রধান নেতা এলিজাহ্ মোহাম্মদের সাথে। এ সময় সাংবাদিকদের সামনে আপত্তিকর মন্তব্য করার অজুহাতে তার প্রকাশ্য বক্তব্য রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়। এই মতবিরোধের জের ধরেই তিনি ১৯৬৪ সালের মার্চে ন্যাশন অব ইসলাম থেকে বেরিয়ে যান।

এ সময়ে তিনি পরিচিত হন মূল ধারার ইসলামের সাথে এবং তাতে নিজেকে সমর্পিত করেন। এর পরপরই হজ পালনের জন্য মক্কা যান। সাথে সাথে সফর করেন আফ্রিকা ও মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশ। দেখা করেন সেসব দেশের মুসলমান নেতাদের সাথে। এরপর আমেরিকায় ফিরে আসেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ রূপে। আমেরিকায় ফিরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুসলিম মস্ক, ইঙ্ক’ এবং ‘অর্গানাইজেশন অব আফ্রো-অ্যামেরিকান ইউনিটি’। এবার ভিন্নতর এক মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকেন কৃষ্ণাঙ্গদের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। তার এবারের আন্দোলনের মূল্যবোধ ছিল ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ নামে আন্দোলনের মূল্যবোধ থেকে পুরোপুরি আলাদা। ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ থেকে বেরিয়ে আসার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি ১৯৬৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এর তিন সদস্যের হাতে খুন হন।

সময়ের সাথে ম্যালকম এক্সের প্রকাশিত বিশ্বাসের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। ন্যাশন অব ইসলামের মুখপাত্র হিসেবে তিনি শেখাতেন ব্ল্যাক সুপ্রিমেসি। তখন তিনি প্রচার করতেন কালো ও সাদা আমেরিকানদের বিচ্ছিন্ন করার কথা। পরবর্তী সময়ে এর বিপরীতে তার সিভিল রাইট মুভমেন্টের সময় তিনি জোর দিয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে সংহতি গড়ে তোলার ব্যাপারে। ন্যাশন অব ইসলাম থেকে বেরিয়ে এসে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘একজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমান হিসেবে আমি এমন অনেক কিছুই করেছি, যার জন্য এখন আমি দুঃখিত। তখন আমি ছিলাম একজন জম্বি, অর্থাৎ একজন মেধাহীন, চিন্তাশূন্য ও অবিবেচক ব্যক্তি।’

একজন সুন্নি মুসলমান হওয়ার পর তিনি বর্ণবাদী ধ্যানধারণা ছেড়ে নাগরিক অধিকার আদায়ে আন্দোলনরতদের সাথে একসাথে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এর পর থেকে তিনি অব্যাহতভাবে জোর তাগিদ দেন প্যান-আফ্রিকানিজম, কৃষ্ণাঙ্গদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও আত্মপ্রতিরক্ষার ওপর।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us