ইয়োভনি রিডলির ইসলাম গ্রহণ : একটি বিরাট পরিবর্তন
ইয়োভনি রিডলির ইসলাম গ্রহণ - ছবি : সংগৃহীত
পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম সম্পর্কে নানা ধরনের আতঙ্ক ছড়ানোর পরও ইসলামের আবেদন দিন দিন বাড়ছে । অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা নাগরিকদের ইসলাম গ্রহণের হার বেড়েছে।
নাইন ইলেভেনের পর ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেও অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের ইসলাম গ্রহণ ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
ইসলাম গ্রহণ করা এসব পশ্চিমা নাগরিক শুধু ইসলাম প্রশ্ন নয়, বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ওপর অন্যায় আচরণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসলাম গ্রহণ করা পশ্চিমা নাগরিকরা অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ফিলিস্তিনিদের জন্য এখন যে ধরনের সহানুভুতি লক্ষ করা যাচ্ছে তাতে এই মুসলিমরা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।
এ ধরনের একজন ইসলাম গ্রহণ করা প্রভাবশালী ব্যক্তি হচ্ছেন ইয়োভনি রিডলি। ব্রিটিশ এই নারী সাংবাদিক কাজ করেছেন। ব্রিটেনের সানডে টাইমস, দ্য ইন্ডিপেডেন্ট, দ্য অবজারভার, দ্য মিরর এবং নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড পত্রিকার হয়ে কাজ করছেন।
২০০১ সালে নাইন ইলভেনের পর কর্মরত পত্রিকার পক্ষ থেকে তাকে প্রথমে পাঠানো পরিকল্পনা করা হয়েছিলো নিউইয়র্কে। কিন্তু টুইন টাওয়ার হামলার পর জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে প্লেন উঠা নামা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তাকে নির্দেশ দেয়া হয় আফগানিস্তানে যাওয়ার জন্য। কারণ আফগানিস্তানে মার্কিন হামলা তখন প্রায় নিশ্চিত ছিলো।
তিনি চলে যান পাকিস্তানে। সেখান থেকে আফগানিস্তানে ঢোকার চেষ্টা করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি আফগানিস্তানে প্রবেশ করেন।
সেখানে তিনি তালবান যোদ্ধাদের হাতে আটক হন।
এরপর বেশ কিছু দিন তিনি তাদের হাতে আটক থাকেন। তিনি সেখানে ইসলাম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। তিনি স্বীকার করেছেন অনেক তালেবানের আচরণে তিন প্রভাবিত হন। ইসলাম সম্পর্কে জানার আগগ্রহ বেড়ে যায়। এক সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
তার ইসলাম গ্রহণের চমকপ্রদ বর্ণনা লোকজনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তিনি নিয়মিত ইসলাম সম্পর্কে বক্তব্য রাখছেন। ইয়োভনি রিডলি ব্রিটেনের প্রভাবশালী এমপি জর্জ গ্যালাওয়ের রেসপেক্ট পার্টির সাথে সম্পৃক্ত আছেন।
বর্তমানে তিনি ইহুদিবাদী তৎপরতা ও পশ্চিমা গণমাধ্যমে ভূমিকা নিয়ে তিনি লিখে থাকেন।
নেদারল্যান্ডসের বক্সিং চ্যাম্পিয়ন নারীর ইসলাম গ্রহণ
সারা বিশ্বে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে ইসলাম ধর্ম তথা মুসলমানদের নিয়ে নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা ও ইসলাম ভীতি ছড়ানোর কারণে ইসলাম বিদ্বেষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পাশ্চাত্যের বেশিরভাগ মানুষ অজ্ঞানতা ও সঠিক জ্ঞানের অভাবে মুসলিমদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকে। তবে দেশে দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও গণমাধ্যম-সংবাদমাধ্যমে ইসলাম বিদ্বেষী প্রচারণার পরও এখনো সারা বিশ্বের বেশিরভাগ অমুসলিম ইসলাম ধর্মকে সম্মান করেন ও তাদের অনেকেই স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করছেন।
এমনি একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন ইউরোপের দেশে নেদারল্যান্ডস-এর বক্সার রুবি জেসিয়াহ মেসু। সম্প্রতি তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। আর এই সংবাদটি তিনি তার ইনস্টাগ্রাম অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সবাইকে জনিয়েছেন। মূলত মেসু ইতোপূর্বে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন। কিন্তু তিনি ইসলাম তথা শান্তির ধর্মের শিক্ষায় ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি মুসলিম হয়েছেন বলে জানান।
বক্সার রুবি জেসিয়াহ মেসু আরো বলেন, কয়েক বছর ধরে ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা ও চর্চার পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং এতে তিনি গর্ব বোধ করছেন।
সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের একটি মসজিদে গিয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কারও চাপে নয় বরং তিনি স্বেচ্ছায় ইসলাম কবুল করেছেন বলে জানান রুবি জেসিয়াহ।
এদিকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য নেদারল্যান্ডসের শীর্ষ এই বক্সিং তারকাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মুসলিমরা। তারা বলছেন, একজন শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদের ইসলাম গ্রহণ এবং বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা মুসলমানদের জন্য আনন্দের। সারাবিশ্বের মুসলিমর সোশ্যাল মিডিয়ায় নবমুসলিম রুবিকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি ইসলাম ধর্মে তাকে স্বাগত জানান। একই সাথে তার ব্যক্তি ও কর্মজীবনে সফলতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের দোয়া করেন করেন অনেকে।
এদিকে অমুসলিম তারকা খেলোয়াড়দের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। চলতি বছর এপ্রিল মাসে উইলহেলম ওট নামে এক ক্রীড়াবিদ জানান, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। উইলহেলম ওট অস্ট্রিয়ার পেশাদার মিক্সড মার্শাল আর্ট ফাইটার। তিনি জানান, কোভিড ১৯-এর কারণে লকডাউনের সময় তিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং ইসলামের মধ্যেই শান্তির সন্ধান পেয়েছেন।
এর আগে রোজি গ্যাব্রিয়েল নামে কানাডিয়ান এক নারী অ্যাডভেঞ্চারার ২০১৮ সাথে পাকিস্তান সফরকালে ইসলাম গ্রহণ করেন। সেসময় তিনি বলেছিলেন, মুসলিমদের আচরণ, ভ্যাতৃত্ব ও একে অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
সূত্র : দ্যা ইসলামিক ইনফরমেশন