মূর্তিপূজারী বনি ইসরাইলিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি

গোলাম মাওলা রনি | Dec 10, 2020 09:31 pm
হজরত মূসার আ. একটি ঘটনা

হজরত মূসার আ. একটি ঘটনা - ছবি : সংগৃহীত

 

হজরত মূসা আ:-এর জমানার সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও বিপদসঙ্কুল সময়ে ঘটা একটি কাহিনী বলা যাক । ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল তখন যখন হজরত মূসা আ: তার বংশীয় ১২ লাখ বনি ইসরাইলিকে নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়েছিলেন। আল্লাহর হুকুমে যখন বনি ইসরাইলিদের জন্য সমুদ্রের মধ্যে রাস্তা তৈরি হয়ে গেল অলৌকিকভাবে, তখন ১২ লাখ মানুষ প্রাণের ভয়ে স্থান-কালপাত্র ভুলে দৌড়ে সমুদ্র পাড়ি দিতে লাগল। কারণ ফেরাউন সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাদের পেছনে এমনভাবে তাড়া করছিল যার পরিণতি কল্পনা করতে গিয়ে ওই সময়ে সমুদ্র পাড়ি দেয়া লোকজনের হুঁশ ছিল না। সমুদ্রের মধ্যে সৃষ্ট পথটিকে চিনিয়ে দেয়ার জন্য স্বয়ং হজরত জিবরাইল আ: ঘোড়া ছুটিয়ে হজরত মূসা আ:কে অনুপ্রেরণা দিচ্ছিলেন। হজরত জিবরাইল আ: এবং তার ঘোড়া সাধারণ বনি ইসরাইলিদের দৃষ্টিগোচর না হলেও ঘোড়ার খুরের আঘাতে মাটিতে যে দাগ হচ্ছিল তা মুহূর্তে স্বর্ণ রেণুতে পরিণত হয়ে যাচ্ছিল তা কারো কারো দৃষ্টিতে পড়ে।

উল্লিখিত আশ্চর্য ঘটনা হারুন আস সামেরি নামক জনৈক বনি ইসরাইলির নজরে এলো। তিনি কৌতূহলবশত সেখান থেকে কিছু স্বর্ণালি মাটি তুলে নিলেন এবং যথারীতি সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তিহ ময়দানে উপস্থিত হলেন। পরবর্তী সময়ে বহু ঘটনা পরিক্রমা এবং অসংখ্য কার্যক্রমের মাধ্যমে হারুন আস সামেরি হজরত মূসা আ:-এর বড় ভাই হজরত হারুন আ:-এর নৈকট্য লাভ করলেন। একদিন হজরত হারুন আ: কোনো একটি সেবার কারণে হারুন আস সামেরির প্রতি অতিশয় দয়ার্ত হয়ে তার একটি ইচ্ছা পূরণের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে চাইলেন। হারুন আস সামেরি হজরত হারুন আ:-এর কাছে নিবেদন করলেন যে, এই মুহূর্তে তার মনে কোনো ইচ্ছা জাগছে না। সুতরাং আগামী দিনে যখন তার মনে কোনো ইচ্ছা জাগবে তখন সেটি যেন আল্লাহ কবুল করেন এমন দোয়ার জন্য তিনি হজরত হারুন আ:কে অনুরোধ করেন এবং আল্লাহর নবী সেভাবেই দোয়া করেন।

তিহ ময়দানে যখন নজিরবিহীনভাবে ১২ লাখ বনি ইসরাইলি সম্প্রদায়ের মানুষ আশ্রয় নিলো তখন সেখানে বাস্তব জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক হাজারো সমস্যা দেখা দিলো। হজরত মূসা আ: এবং তার ভাই হজরত হারুন আ: সাধ্যমতো চেষ্টা করলেন তাদের জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। কিন্তু কলহপ্রিয় বনি ইসরাইলিরা বিভিন্ন রকম অহেতুক কথাবার্তা বলে এবং মন্দ কাজ করে সার্বিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে আরম্ভ করল। তাদের একটি ঐশী কিতাবের বিধানের আওতায় আনার জন্য আল্লাহ তায়ালা হজরত মূসা আ:কে ৪০ দিনের জন্য নির্দিষ্ট পাহাড়ে যেতে বললেন। হজরত মূসা আ: আল্লাহর নির্দেশে সেখানে যাওয়ার আগে তার কওমের নেতৃত্ব বড় ভাই হজরত হারুন আ:-এর ওপর ন্যস্ত করলেন।

হজরত হারুন আ: নরম প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। ফলে হজরত মূসা আ:-এর অবর্তমানে বনি ইসরাইলিরা যে যার ইচ্ছেমতো চলতে আরম্ভ করল এবং ফেরাউন রাজ্যে তারা যেসব কুকর্ম করত সেগুলোর পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন শুরু করল। ঠিক এই সময়ে হারুন আস সামেরি যে কিনা ফেরাউন রাজ্যে মূর্তির কারিগর ছিল সে ছোট-বড় আকর্ষণীয় মূর্তি বানাতে আরম্ভ করল। হঠাৎ তার মনে পড়ল সুমুদ্র পাড়ি দেয়ার সময় সংগৃহীত স্বর্ণমাটির কথা। হারুন আস সামেরি সেই মাটি দিয়ে একটি গরুর মূর্তি তৈরি করল এবং হজরত হারুন আ:-এর দোয়ার কথা স্মরণ করে সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল যে, তার তৈরি গরুর মূর্তিটি যেন হাম্বা হাম্বা রবে ডাকতে পারে। আল্লাহ তার প্রার্থনা কবুল করলেন আর অমনি হারুন আস সামেরির গরুর পুতুলটি হাম্বা হাম্বা রবে ডাকতে আরম্ভ করল।

সোনালি রঙের একটি গরুর পুতুল হাম্বা হাম্বা করছে এই খবর মুহূর্তের মধ্যে বনি ইসরাইলিদের মধ্যে রাষ্ট্র হয়ে গেল। দলে দলে লোক ভিড় করল। তাদের মধ্যে কোনো এক ফন্দিবাজ বলে উঠল, মূসা যে খোদার কাছে গিয়েছে সেটি আসল খোদা নয়, আসল খোদা হলো হাম্বা হাম্বা ডাক দিতে সক্ষম এই স্বর্ণের গরু। ফুর্তিবাজ এবং দুরাচার বনি ইসরাইলিরা গরুর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে আদিম রীতিতে গরুপূজা শুরু করল। অতি অল্প সময়ের মধ্যে গরুপূজারীদের সংখ্যা এতটা বেড়ে গেল যা কিনা হজরত হারুন আ:-এর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। তিনি আর বাধা দিতে পারলেন না। মূর্তিপূজারীদের দৌরাত্ম্যে তিনি যখন রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়লেন, ঠিক সেই সময়ে তাওরাত কিতাবসহ হজরত মূসা আ: ফিরে এলেন। তিনি দেখলেন মহা সর্বনাশ হয়ে গেছে। অনেক মেহনত করে তিনি বনি ইসরাইলিদের ওপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেন এবং আল্লাহর হুকুমে মূর্তিপূজারী বনি ইসরাইলিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us