ভারত কি চীন-পাকিস্তান করিডোর রুখতে পারবে?
চীন-পাকিস্তান - ছবি সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ফ্রন্ট চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের জন্য থ্রেট হিসাবে কাজ করছে। তাই ত্রিশক্তির বলয় যেন আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। ভারতের সাথে চীনের সমঝোতা ও বন্ধুত্ব থাকলেও ‘ঢিমেতেতলা ও গড়িমসি’ চালের জন্য ভারত-চীন বন্ধুত্বে খরা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তান চীন বন্ধুত্ব মজবুত। এখন ইরান যুক্ত হয়ে পাল্লা ভারী হলো। ইরানের অনেক ঝুঁকি রয়েছে। ওবামা থেকে শুরু হয়ে ট্রাম্প পর্যন্ত অবরোধের স্রোত প্রবাহিত হয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে। ইরানবিরোধী শক্তি মুজাহেদিন খালককে ইরানের বিরেুদ্ধে কাজ করার জন্য লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি যুদ্ধাবস্থার মধ্যে ইরান সময় অতিবাহিত করছে এবং ইসরাইল ইরানের সাথে একটি যুদ্ধ পরিচালনা করছে। বাইডেনের আমলে পরমাণু আলোচনা আবার শুরু হলেও রাতারাতি ইরানবিরোধী কার্যক্রম বন্ধ হবে এমন কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ঘায়েল করার জন্য ইসরাইল ও ভারতকে ব্যবহার করতে চায়। ভারত-চীন অনেক চুক্তি রয়েছে যেগুলো শুধু ‘পেপার ওয়ার্ক’। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইরান-পাকিস্তান-ভারত গ্যাস লাইন প্রকল্প মুখথুবড়ে পড়েছে। ত্রিশক্তি লক্ষ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া পলিসি সবসময় ভারতের স্বার্থ রক্ষা করেছে; ফলে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যাহত হয়েছে এবং শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়েছে। এতদঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, আরো একটি জোট তৈরি হচ্ছে যেখানে এই ত্রিশক্তি ছাড়াও রাশিয়া ও তুরস্ক যুক্ত হচ্ছে। রাশিয়ার ডিফেন্স অ্যানালিস্ট মাইকেল বরিস পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পলিসির কারণে রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্ক নিয়ে এই জোট হচ্ছে এবং ভারতকে বাইরে রাখা হচ্ছ।’ ভারতের সাথে কোনো পড়শির সুসম্পর্ক নেই। বরিস আরো জানান, মূলত মোদির রেসিস্ট পলিসি এই জোট গঠনের পিছনে কাজ করেছে।
চীন সিপিইসিকে সার্থক ও কার্যকর করার জন্য সব কিছুই করবে। ভারত বাধা দিয়ে কোনো কূলকিনারা করতে পারবে না বরং অপদস্থ হবে। যেমনভাবে ইরানের রেল প্রকল্প থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার সাথে ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নতি হয়েছে। পাকিস্তান ও রাশিয়া সম্প্রতি নর্থ-সাউথ গ্যাস পাইপলাইন প্রজেক্ট (এনএসজিপিপি)-এর ২০১৫ চুক্তি সংশোধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করাচি থেকে কাসুর পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি রাশিয়ান কোম্পানিগুলোর জন্য পাকিস্তানের বাজার খুলে দেবে। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চুক্তি ছাড়াও রাশিয়া ও পাকিস্তান সামরিক চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। ২০১৮ সাল থেকে যৌথ মহড়ার জন্য পাকিস্তানে অবস্থান করছে রাশিয়ান সেনারা। পাকিস্তান আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হলে ওই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যেটার কারণে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে সামরিক বিনিময় কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়।
এই জোট গঠনে ইরানের দূত মুখ্য ভূমিকা নেন। তিনি ৫ রাষ্ট্র জোটের রূপরেখা তুলে ধরেন। জোটের মূল উদ্দেশ্য হবে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সমস্যা নিরসন। পাকিস্তানে ইরানের রাষ্ট্রদূত সাঈদ মোহাম্মদ আলী হোসেন ইসলামাবাদে স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটে বলেন, ‘উন্নত ভবিষ্যতের জন্য এই ৫টি দেশের একটি জোট গঠন করার শক্তিশালী সব উপকরণ রয়েছে। তাছাড়া জোটের অর্থনৈতিক উন্নয়নও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক বছরে ইরান ও চীনের উপর কঠিন অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়েছে। ডলারের মান ধরে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের অর্থনৈতিক উত্থান এবং বেল্ট ও রোডের বিশ্বব্যাপী বিস্তারের কর্মসূচিতে ভীত। তাই ইরানকে পরাভূত করার জন্য এবং চীনকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য ওয়াশিংটনের এই প্রচেষ্টা। রাশিয়ার উপরও অবরোধ দেয়া হয়েছে তাই এই জোটে রাশিয়াও শামিল হয়েছে। ইরানের চবাহার বন্দর ও পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সোনালি দুয়ার খুলে দিয়েছে। দুটি প্রকল্পই চীনের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় হয়েছে এবং আরো সংযুক্ত উপপ্রকল্পের কাজ সমানে চলছে। এই দুটি প্রকল্পের কারণে মধ্য এশিয়া, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে সহজ চলাচল সম্ভব হবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব