সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায়
সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় - ছবি সংগৃহীত
ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা আঁশের মতো খসখসে শুকনো অংশ। এক ঝলক দেখলে গা শিরশির করে ওঠে। দূরে সরে যায় কাছের মানুষ। এই ধরনের ত্বকের সমস্যা আসলে সোরিয়াসিসের লক্ষণ। এতে ত্বক লালচে হয়ে ফুলে ওঠে। তার উপর থেকে আঁশের মতো (মাইকেশিয়ে স্কেলস) ছাল উঠতে থাকে। যা একটু ফুলে ফুলে থাকে। এমন লক্ষণ দেখলে অবহেলা করবেন না।
কেন হয় এই রোগ?
এটি জেনেটিক্স ডিজঅর্ডার। পরিবারে কারও সোরিয়াসিস থাকলে সেই পরিবারের অন্যদেরও যে কোনও বয়সে এই সমস্যা হবে। অটো ইমিউন ডিজঅর্ডার থেকেও এই ধরনের ত্বকের সমস্যা হয়। তবে যাদের এই সমস্যা হবে তাঁদের ত্বকের সেই স্থানটি খুব শুষ্ক হয়ে যায়।
সোরিয়াসিস চিনুন : এমন লক্ষণ দেখলে অসপিটজ (Auspit’s) সাইন টেস্ট করে চিকিৎসকরা দেখেন যে এটি সোরিয়াসিস কি না। এই টেস্ট করতে চিকিৎসকরা চ্যাপ্টা কিছু বা পয়সা নিয়ে এই ফোলা অংশের ছাল ওঠাতে থাকেন, সোরিয়াসিস হলে এই ছাল উঠে আসবে এবং একটা পাতলা লেয়ার দেখা যাবে। ওই লেয়ার তুললে ত্বকে লাল লাল ছোট ছোট ব্লিডিং স্পট দেখা যায়। তবে নিজে নিজে এই টেস্ট করা কখনোই উচিত নয়।
শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব?
ত্বকের এই সমস্যায় যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে তত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। দেরি করে চিকিৎসা শুরু করলে সমস্যা কমতে সময় লাগে। তবে ওষুধ খেয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলেও পুরোপুরি নির্মূল হয় না। পুনরায় ফিরে আসতে পারে। তাই কমে গেলেও ওষুধ খেতে হয়।
কেমন হবে ত্বকের পরিচর্যা : সোরিয়াসিসের সমস্যা থাকলে ত্বক প্রায়ই খুব শুষ্ক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ত্বককে সবসময় আর্দ্র রাখতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শমতো কেরাটোলাইসিস জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। তাহলে ত্বকের চামড়া ওঠা আঁশের মতো অংশ মোলায়েম থাকবে।
ত্বকের প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ লাগাতে হতে পারে। সঙ্গে ওষুধ খেতেও হবে। তবে অবশ্যই ভাল ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো ওষুধ ব্যবহার করুন। অনেক ক্ষেত্রেই খুব বেশি মাত্রায় স্টেরয়েড ব্যবহার করলে দ্রুত সমস্যা কমে গেলেও ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে।
শীতকালে সোরিয়াসিসের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। বাজারচলতি ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগালেও উপকার পাওয়া যায়। স্নানের সময় তেল লাগাতে পারেন, তবে সাবানের ক্ষেত্রে সিনডেট বেসড সাবান ব্যবহার করলে ত্বকের জন্য ভাল। কেনার সময় এই ধরনের সাবান কিনুন।
কাদের বেশি হয়?
এই ধরনের ত্বকের সমস্যা মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের দ্বিগুণ সম্ভাবনা থাকে। ৩০-৪০ বছর বয়সীদের খুব বেশি হয়। তবে বাচ্চাদেরও এই সমস্যা হতে পারে। মধ্য বয়সীদের এই সমস্যার আশঙ্কাও বেশি।
লক্ষণ : পা ফাটার সমস্যা বাড়ে, ত্বকের ছাল উঠতে থাকে, চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে, ত্বক শক্ত হতে থাকে, রক্ত বের হতে পারে, জ্বালা করতে থাকে, শরীরে খুব ক্লান্তিভাব আসতে পারে। তবে এই সমস্যা কখনওই ছোঁয়াচে নয়।
কমাতে ফোটোথেরাপি : এই সমস্যায় গায়ে রোদ লাগান। এক্ষেত্রে সূর্যের আলো খুবই উপকারী। সূর্যের আলোর অতিবেগুনি রশ্মি সোরিয়াসিস কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ লাগিয়ে তারপর ত্বকে রোদ লাগালে আরও বেশি উপকার হয়।
চিকিৎসা না করলে : ঠিকমতো চিকিৎসা না করলে হতে পারে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস। জয়েন্টে ব্যথা, হাত-পায়ের গাঁট বেঁকে যেতে পারে।
মাথায় খুসকির মাত্রা খুব বেড়ে যায়, পা ফাটে। খুসকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোলটার বেসড শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে মেডিকেটেড শ্যাম্পু চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবহার করলে উপকার।
খাদ্যাভাস : এই ধরনের ত্বকের সমস্যা যাঁদের থাকবে তাঁদের খাওয়ার ব্যপারে কোনও বারণ থাকে না। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস জরুরি।
* প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে এই ধরনের ত্বকের সমস্যা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সমস্ত রকম
* মিনারেলের চাহিদা পূরণ করতে হবে। তাই প্রচুর পরিমাণে ফল, শাক সবজি খেতে হবে।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন