ম্যাক্রোঁর রাজনৈতিক খায়েশ
ম্যাক্রোঁ - ছবি সংগৃহীত
ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ফ্রান্সে একতরফাভাবে চলছে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের এবং এর অনুসারীদের ওপর নানামুখী নির্যাতন। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ক্রমেই উগ্রতার রূপ পরিগ্রহ করেছে। এক দিকে ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে মুসলমানদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে, আরেক দিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে মুসলমানদের প্রাণপ্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-কে ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে অসম্মান করছে সাম্প্রদায়িকরা। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ফ্রান্সের উগ্র ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কর্মসূচি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখার প্রয়াস পাচ্ছেন। এদিকে রাষ্ট্রযন্ত্রের ছত্রছায়ায় ‘শার্লি এবদো’ নামক ম্যাগাজিন বারবার মুসলমানদের মহানবী সা:-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রচার করেছে। গত ১৬ অক্টোবর প্যারিসের নিকটবর্তী এক শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠদানকালে সেই ম্যাগাজিনের ব্যঙ্গচিত্রগুলো প্রদর্শন করেন। এটি সামাজিক মাধ্যমে এটা ছড়িয়ে পড়লে চেচেন বংশোদ্ভূত ১৮ বছরের এক তরুণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওই শিক্ষককে হত্যা করেছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এ ঘটনাকে রাজনৈতিক ময়দানে ধস নামা তার জনপ্রিয়তাকে পুনরুদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে লুফে নেন। তিনি প্রকাশ্যে ‘শার্লি এবদো’ এর ন্যক্কারজনক কাজকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। আর ফ্রান্সের এ রকম পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে এবং তাদের ধর্ম ইসলামকে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করান। তিনি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে একতরফাভাবে অবমাননাকর মন্তব্য ছুড়ে দেন বলে অভিযোগ।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর এ ধরনের ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডে বিশ্বব্যাপী মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও পশ্চিমা বিশ্বের একটি অংশকে ম্যাক্রোঁর পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ম্যাক্রোঁকে ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে ইউরোপিয়ান দেশগুলো ম্যাক্রোঁর সমর্থনে এগিয়ে আসে। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, জার্মান চ্যান্সেলর এবং নেদারল্যান্ডস ও গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীরা এরদোগানের এই মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন শীর্ষ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল এরদোগানের এই মন্তব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রতিবাদ করেন। তবে ফরাসি আর্চবিশপ বলেন, “মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কোনো ধর্মকে অবমাননা ‘ঘৃণিত’ আর ‘গুরুতর’ বিষয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হচ্ছে; কিন্তু তারও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের প্রত্যেকের উপলব্ধি করা দরকার, কোনো ধর্ম অবমাননা করার অধিকার কারো নেই।” অন্যদিকে, বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের একটি স্কুলের শিক্ষক ক্লাসে বিশ্বনবী সা:-এর অবমাননাকর কার্টুন প্রদর্শন করার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। আবার রাশিয়ার সরকারি মুখপাত্র বলেছে, ‘রাশিয়ার সরকার এখানে ইসলামবিদ্বেষী কোনো প্রচারণা মেনে নেবে না।’ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। তবে এ স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা আছে। এ ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করা উচিত নয়।
নির্বিচারে এবং অপ্রয়োজনে নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায়কে আঘাত করা উচিত নয়।’ যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে একেবারেই নীরবতা প্রদর্শন করেছে। হয়তোবা তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কারণে তারা এই স্পর্শকতার বিষয়টি এড়িয়ে চলার নীতি অবলম্বন করেছেন। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর পক্ষে ভারতের বেসরকারি পর্যায়ে বেশ সরব প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। ভারত সরকারিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও ভারতের হাজার হাজার সোস্যাল মিডিয়ায় ফ্রান্সের কট্টর ভূমিকাকে সমর্থন করা হয়েছে আর প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর ‘বীরোচিত’ (!) নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। বিজেপি নেতা, সাংবাদিক ও দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীসহ কট্টর জাতীয়তাবাদীরাও ম্যাক্রোঁর সমর্থনে পোস্ট দিয়েছেন। কেউ কেউ ফ্রান্সের পণ্য আরো বেশি করে কেনার ডাক দিয়েছেন।
মুসলিম বিশ্বের জনগণ ফ্রান্সের একপেশে তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও সেসব দেশের সরকার প্রধানদের নীরবতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা কোটি কোটি মুসলিম জনতার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। শুধু তুরস্ক, পাকিস্তান ও জর্দান সরকারিভাবে এর প্রতিবাদ করেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান খুব কড়া ভাষায় ম্যাক্রোঁর কীর্তিকলাপের প্রতিবাদ করেছেন, যা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিবাদ বলে মনে হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কড়া কূটনৈতিক ভাষায় ম্যাক্রোঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অর্থাৎ মুসলিম বিশ্বে এই দু’জন নেতাই মাত্র মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর অবমাননার প্রতিবাদ করার সাহসিকতা প্রদর্শন করেছেন । জর্দানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ম্যাক্রোঁর নিন্দা করেছেন। বাকি সবাই হয় হীনম্মন্যতায় ভুগছেন অথবা ক্ষুদ্র রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থের কাছে মাথানত করেছেন। তাদের প্রত্যেকের হৃদয়েই নবীজী সা:-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু পার্থিব লাভের কাছে তারা আত্মসমর্পণ করছেন। সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ ফ্রান্সের এ ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সবাইকে নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু নিজেরা কোনো নিন্দা প্রস্তাব দান করতে পারেনি।
অবশ্য পরিষদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহর এ ধরনের নিদর্শন অবমাননাকারীদের বয়কট করতে বলা হয়েছে। (সূরা নিসা : ১৪০ এবং সূরা আনআম : ৬৮) ইরানের পার্লামেন্ট খুব কঠিন ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটাকে ‘মানুষরূপী শয়তানের নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ’ বলে উল্লেখ করেছে। তাদের ভাষায় পশ্চিমারা কথিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে তাদের শয়তানি মতাদর্শের দুর্গন্ধ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছেন। মুসলিম বিশ্বের জনগণ নবী সা:-এর অবমাননার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। ওলামা-মাশায়েখর ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন। বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি ফ্রান্সের পণ্য বিপণন বন্ধ করে দিয়েছে। কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার প্রভৃতি আরব দেশের ব্যবসায়ীরা ফ্রান্সের পণ্য বয়কট শুরু করেছেন।
আর উপসাগরীয় দেশসমূহের সংগঠন (জিসিসি) ম্যাক্রোঁর ইসলামবিদ্বেষী উগ্র মন্তব্যসমূহকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ‘জিসিসি’-এর মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশেও সরকারিভাবে মহানবী সা:-কে অবমাননার কোনো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। তবে তথ্যমন্ত্রী দু’দিন দু’টি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘হজরত মুহাম্মদ সা: সম্পর্কে অবমাননার কোনো কিছু আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করি না।’ এদিকে আমাদের দেশের জনগণ প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এবং ম্যাক্রোঁকে এ ধরনের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। কারণ, নবী সা: মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর (সূরা আহজাব : ৬)। এরই মধ্যে একজন সংসদ সদস্য নারায়ণগঞ্জের এক মাহফিলে বলেছেন, ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে কাছে পেলে তাকে খুন করে ফাঁসির মঞ্চে যেতে চাই’ (প্রথম আলো : ৫ নভেম্বর ২০২০)। এ ধরনের বক্তব্য দেয়া সঠিক কি না তা আইন-আদালত এবং ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের বিচার্যের বিষয়। ভক্তি ও কারো ভালোবাসা এবং আবেগ আহত বা পদদলিত হলে প্রতিক্রিয়া এমন চরম হওয়াটা হয়তো অস্বাভাবিক নয়।
তবে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তার পূর্বতন কঠোর সুর কিছুটা নরম করেছেন। গত ৯ নভেম্বর ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিসর সফরে গিয়ে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আমাদের নীতি হলো ইসলামকে সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো; মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-কে সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো। মুসলিমরাও পুরোপুরিভাবে ফ্রান্সের সমাজের অংশ’ (নয়া দিগন্ত : ১০ নভেম্বর ২০২০)। ম্যাক্রোঁ মুসলমানদের অনুভূতিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোকে পাশে পাওয়ার জন্য এক ধরনের ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছেন। তিনি তার দেশে ‘শত শত ইসলামী মৌলবাদী’ বাস করে বলে ভয় দেখিয়ে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য শেনজেনভুক্ত দেশগুলোর সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের আহ্বান জানান। যেন মনে হচ্ছে ফ্রান্সে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতাই’ একমাত্র সমস্যা। ম্যাক্রোঁকে বিদ্রূপ করে কার্টুন আঁকায় মৌরিতানিয়ার বিখ্যাত কার্টুনিস্ট খালিদ ওলেদ মাওলা ইদরিসের সাথে চুক্তি বাতিল করেছে ফ্রান্সের দূতাবাস। এভাবেই ফ্রান্সের ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ নিয়ে দ্বৈতনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন ম্যাক্রোঁ।
সত্যিকারার্থে মুসলমানরা তাদের নবীজী সা:-কে নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে এবং নিজেদের মা-বাবার চেয়েও বেশি সম্মান করে। পবিত্র কুরআনেও নিজেদের জীবনে চেয়েও নবীজী সা:-কে বেশি ভালোবাসার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। (সূরা তওবা : ১২০) নবী সা:-এর প্রতি এই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাই হলো ইসলামের প্রাণশক্তি। তাই মুসলমানরা জীবনের সমস্ত দুঃখ-বেদনা মেনে নেয়। কিন্তু নবী সা:-এর প্রতি বিন্দুমাত্র অসম্মানকেও মানতে পারে না। নবীজী সা: এসেছিলেন বিশ্বমানবতার জন্য রহমত ও কল্যাণস্বরূপ। (সূরা আম্বিয়া : ১০৭) তিনি ছিলেন মানুষের মঙ্গলকামী, মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁর জন্য ছিল বড়ই বেদনাদায়ক। (সূরা তওবাহ : ১২৮) আজ যারা রাসূল সা:-কে ব্যঙ্গ করে অসম্মানিত করছে তাদের মঙ্গলের জন্যও তিনি রাসূল হিসেবে এসেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।’ (সূরা সাবা : ২৮) এভাবে যিনি এসেছিলেন মানুষের মধ্যে সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। (সূরা হাদিদ : ২৫) তাঁর প্রতিই আজ অবিচার করা হচ্ছে অন্যায়ভাবে তাঁকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করে। অথচ আল্লাহ নিজে উল্লেখ করেছেন, আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে নবীজী সা:-কে অনুসরণ করতে হবে। (সূরা ইমরান : ৩১)
পৃথিবীতে আল্লাহর পাঠানো নবী-রাসূলদের ওপর নিপীড়ন ও অসম্মানজনিত ঘৃণ্য কার্যক্রম এই প্রথম নয়। যুগে যুগেই শয়তানরূপী মানুষেরা নবীদের অপমান করেছে আর বিশ্বনবী সা:-কে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করা হয়েছে। নবীজী সা:-এর অনুপস্থিতিতে তাঁকে চটকদার কথাবার্তার কৌশল নিয়ে অসম্মান করার চেষ্টা করা হয়। আধুনিক যুগে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র মোড়কে এসব কুকীর্তি করা হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর এভাবেই আমরা মানব ও জিনের মধ্য থেকে শয়তানদের প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি; প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা একে অন্যকে চমকপ্রদ বাক্যের কুমন্ত্রণা দেয়। যদি আপনার রব ইচ্ছে করতেন তবে তারা এসব করত না; কাজেই আপনি তাদের এবং তাদের মিথ্যা রটনাকে পরিত্যাগ করুন।’ (সূরা আনআম : ১১২) এসব নিপীড়নকারীর ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘আর আপনি কখনো মনে করবেন না, জালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফিল, তবে তিনি তাদের সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু স্থির হবে।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪২)
এসব নরাধম প্রাণীর ব্যাপারে শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লা’নত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ (সূরা আহজাব : ৫৭) পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা মন্দকে ভালো দিয়ে প্রতিহত করার আদেশ দিয়েছেন। (সূরা হামিম আস-সাজদাহ : ৩৪) মন্দ কাজকে প্রতিহত করার জন্য নবী সা:-কে আল্লাহ শিখিয়ে দেন, ‘মানুষের (চরিত্র ও কর্মের) উৎকৃষ্ট অংশ গ্রহণ করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলুন।’ (সূরা আরাফ : ১৯৯) মিথ্যারোপকারীদের পীড়াদায়ক কথাবার্তার বিপরীতে নবী সা:-কে উপদেশ দেয়া হয়েছে; ‘আর লোকে যা বলে, তাতে আপনি ধৈর্যধারণ করুন এবং সৌজন্যের সাথে তাদের পরিহার করে চলুন।’ (সূরা মুজাম্মিল : ১০)
ফ্রান্সের সাম্প্রদায়িক মহল বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমানের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। পুরো মুসলিম বিশ্বে এর প্রতিবাদ হচ্ছে। এটা একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। সেই ম্যাক্রোঁ ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত এই প্রতিবাদ চলমান থাকতে হবে। তবে তা হবে ধৈর্য। কুরআন এ ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলাকে অনুমোদন দেয় না। কিন্তু ওই অপরাধীদের এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। কাজেই সহিংসতা পরিহার করে ফ্রান্সের সাথে সম্পর্ক রাখা না রাখার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে এবং তাদের পণ্য বর্জন করে অহিংস প্রক্রিয়ায় মুসলিম বিশ্বের এই প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নবী সা:-এর ওপর দরুদ পাঠ করেন, ফেরেশতারাও দরুদ পাঠ করেন এবং ঈমানদারদের ওপরও আদেশ করা হয়েছে দরুদ এবং উত্তম অভিবাদন পেশ করতে। (সূরা আহজাব : ৫৬) ইসলামবিরোধীরা যত শক্তিশালীই হোক না কেন নবীজী সা:-এর মর্যাদার সামান্যতম হানিও ঘটাতে পারবে না। কেননা, নবীজী সা:-এর মর্যাদা সমুন্নত রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, ‘আর আমি আপনার (মর্যাদা বৃদ্ধির) জন্য আপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি’। (সূরা ইনশিরাহ : ৪)
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
E-mail: maksud2648@yahoo.com