যেসব আমলে দেরি করা উচিত নয়

মো: আবদুল গনী শিব্বীর | Dec 09, 2020 05:48 pm
যেসব আমলে খুব দ্রুত করতে তাগাদা দেয়া হয়েছে

যেসব আমলে খুব দ্রুত করতে তাগাদা দেয়া হয়েছে - ছবি সংগৃহীত

 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহা অনুগ্রহে মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। দুনিয়াতে নবরূপে সৃষ্টি, দেহে প্রাণসঞ্চার, প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিশ্বময় মানবজাতির বিস্তৃতি কেবলমাত্র তাঁরই কৃপা ও অনুগ্রহমাত্র। তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর বন্দেগি করার জন্য। আল্লাহ পাকের ইচ্ছা তাঁর বান্দারা একমাত্র তাঁর ইবাদাত বন্দেগি করবে। তিনি পবিত্র কুরআন মাজিদে বলেন, ‘আমি জ্বিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমারই ইবাদত করার জন্য।’ (সূরা আজ জারিয়াত-৫৬) প্রত্যেক মানুষের বয়সসীমা সুনির্ধারিত, এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘যখন তাদের নির্ধারিত (মৃত্যুর) সময় উপস্থিত হয় তখন তারা আর এক মুহূর্তও বিলম্ব করতে পারে না এবং এর চেয়ে একটু এগিয়েও আসতে পারে না।’ (সূরা ইউনুস-৪৯) মানবজীবন জন্ম-মৃত্যুর ফ্রেমে বাঁধা, এ জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চান তাঁর সব বান্দা এ সময়গুলোকে তাঁরই স্মরণে, তাঁরই ইবাদতে কাটাক।

যেসব আমলে দেরি করতে নেই : মহান আল্লাহপাক বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আকাশসমূহ ও জমিনসম। তা মুত্তাকিদের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সূরা আলে ইমরান-১৩৩) আলী রা: বলেন, নবী সা: বলেছেন, ‘হে আলী! তিনটি বিষয়ে দেরি করবে না- ১. সালাতের সময় হয়ে গেলে আদায় করতে দেরি করবে না; ২. জানাজা উপস্থিত হয়ে গেলে তাতেও দেরি করবে না এবং ৩. স্বামীবিহীন নারীর উপযুক্ত বর পাওয়া গেলে তাকে বিয়ে দিতেও দেরি করবে না।’ (তিরমিজি-১০৭৫, মিশকাত-৬০৫)

পবিত্র কুরআন মাজিদের আয়াতে কারিমা ও হাদিসে রাসূল পর্যালোচনা করে আমরা জানতে পারি, যেসব কাজে দেরি করতে নেই তার মধ্যে পাঁচটি আমল হলো-

১. আল্লাহর প্রতি ঈমান : মানুষের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো ঈমান। ঈমান আল্লাহ প্রদত্ত মহা নেয়ামত। ঈমান মুসলমানের কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয়। ঈমানদার সব কষ্ট সহ্য করতে পারে, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে, কিন্তু ঈমান ছাড়তে পারে না। ঈমানই তার কাছে সব কিছু থেকে বড়। ঈমান শুধু মুখে কালেমা পড়ার নাম নয়, ইসলামকে তার সব অপরিহার্য অনুষঙ্গসহ মনেপ্রাণে কবুল করার নাম। অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেন, ‘তথাপি মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালোবাসার ন্যায় তাদেরকে ভালোবাসে; কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় তারা সুদৃঢ়।’ (সূরা আল বাকারা-১৬৫) মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর অশেষ কৃপায় অবিশ্বাসী মানুষদের মধ্যে যাদেরকে হেদায়েতের দিশা তথা ঈমান আনার সুযোগ দিয়েছেন তারা যেন ঈমান গ্রহণে বিলম্ব না করে। কেননা পবিত্র কুরআন মাজিদে এসেছে, ‘আল্লাহর কাছে মনোনীত একমাত্র দ্বীন হলো ইসলামই।’ (সূরা আলে ইমরান-১৯) আল্লাহপাক বলেন, ‘কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন (জীবন বিধান) গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা আলে ইমরান-৮৫)।

২. নেক আমল : জীবনের সময়সীমা নির্ধারিত। নিজের অবহেলায়, শয়তানের প্ররোচনা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা ও ধোঁকায় পড়ে অনেকে নেক আমলে বিলম্ব করে থাকেন। যা বড়ই ক্ষতির ও পরিতাপের বিষয়। নেক আমল দ্রুত করতে হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সাতটি বিষয়ের আগে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদেরকে সব কিছু ভুলিয়ে দেবে? না ওই ঐশ্বর্যের, যা তোমাদেরকে দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? না সেই বার্ধক্যের, যা তোমাদেরকে অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট? না কিয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কিয়ামত কি না সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত?’ (জামে তিরমিজ-২৩০৬)

৩. সালাত তথা নামাজ : সালাত আল্লাহপাক ও তাঁর বান্দার মধ্যকার সেতুবন্ধনের ইবাদত। পবিত্র কুরআনে মোট ৮২ স্থানে তিনি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা সালাত কায়েম করো’। (আল কুরআন) এ ছাড়াও হাদিস শরিফে এসেছে- হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয় কিয়ামতের দিন বান্দার (হককুল্লাহর মধ্যে) যে কাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেয়া হবে তা হচ্ছে তার নামাজ। সুতরাং যদি তা সঠিক হয়, তাহলে সে পরিত্রাণ পাবে। আর যদি (নামাজ) পণ্ড ও খারাপ হয়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি তার ফরজ (ইবাদতের) মধ্যে কিছু কম পড়ে যায়, তাহলে প্রভু বলবেন, ‘দেখো তো! আমার বান্দার কিছু নফল (ইবাদত) আছে কি না, যা দিয়ে ফরজের ঘাটতি পূরণ করে দেয়া হবে?’ অতঃপর তার অবশিষ্ট সমস্ত আমলের হিসাব ওইভাবে গৃহীত হবে।’ (আবু দাউদ-৮৬৪, তিরমিজি-৪১৩, ইবন মাজাহ-১৪২৫, আহমদ-৭৮৪২) উম্মে ফারওয়া রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, মহানবী সা:-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, কোন আমলটি (পুণ্যের দিক দিয়ে) উত্তম? তিনি প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘প্রথমে ওয়াক্তে নামাজ পড়া (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, মিশকাত হাদিস-৬০৭) আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, সালাত (নামাজ) প্রথম সময়ে (তাড়াতাড়ি) আদায় করা আল্লাহকে খুশি করা এবং শেষ সময়ে আদায় করা আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার শামিল। (অর্থাৎ গুনাহ হতে বেঁচে থাকা) (তিরমিজি-১৭২, আবু দাউদ-৪২৬)

৫. জানাজা তথা মৃত ব্যক্তির জন্য সালাতের মাধ্যমে দোয়া করা : মানুষ মরণশীল। জন্ম যার হয়েছে তার মৃত্যু নিশ্চিত ও বাধ্যতামূলক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে।’ (সূরা আলে ইমরান-১৮৫) মুসলিম ব্যক্তি মারা গেলে অপর মুসলমানের দায়িত্ব হলো তাকে জানাজা দেয়া। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত বারাআ ইবনে আজিব রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: সাতটি বিষয়ে আমাদের আদেশ করেছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। আদেশের মধ্যে প্রথমটি হলো জানাজায় অনুগমন করা। হজরত উসমান রা: বর্ণনা করেন, নবী করিম সা: যখন কোনো মৃত ব্যক্তির দাফনকাজ শেষ করতেন তখন তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সাহাবিদের বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করো, তিনি যেন তাকে ঈমানের ওপর দৃঢ় ও অবিচল রাখেন। এখনই তার কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’ (আবু দাউদ-৩২২১)।

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us