শীতেও পানিপান কমাবেন না

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায় | Dec 09, 2020 03:21 pm
পানিপান

পানিপান - ছবি সংগৃহীত

 

গরমের দাপট কমতে না কমতেই আমাদের পানির পিপাসা কমে গেছে। আর এর ফলেই অনেকেই ১২–১৪ গ্লাসের বদলে ৫–৬ গ্লাস পানি পান করে দিন কাটাচ্ছেন। পৃথিবীর ৩ ভাগ পানি ১ ভাগ স্থলের মতোই মানুষের শরীরের কোষের প্রধান উপাদান পানি। তাই তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে শরীরের ন্যূনতম পানির চাহিদার কমে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এটাও ঠিক, গরম কালের মতো শীতকালে বাড়তি পানির চাহিদা কিছুটা স্বাভাবিক নিয়মেই কমে যায় বললেন জেরিয়াট্রিশিয়ান কৌশিক মজুমদার। বেশি বয়সে অনেককেই প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরলসহ নানা ধরনের ওষুধ খেতে হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পান না করলে শরীরে নানা ক্ষতিকর পদার্থ জমা হতে শুরু করে। আবার উচ্চরক্তচাপ, কিডনির অসুখ, লিভারের অসুখ, হার্ট ফেলিওর ইত্যাদি কারণে অনেকের হাত, পা বা পেটে তরল জমে গিয়ে ফুলে যায় (ইডিমা হয়) বা অল্প পরিশ্রমে শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। তাদের শরীরের বাড়তি জলীয় অংশ বের করে দেয়ার জন্য ল্যাসিক্স জাতীয় ওষুধ খেতে হতে পারে। যারা এই ওষুধ খান, তাদের শরীরে পানির চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি।

কৌশিক মজুমদারের পরামর্শ, ঠাণ্ডার ভয়ে স্বাভাবিক পানি পান কমালে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানি খেতে অসুবিধা হলে শীতের সকালে চায়ের আগে হালকা গরম পানি খেয়ে দিন শুরু করুন। খাবার পানিকে অনেকে ওষুধের সঙ্গেও তুলনা করেন, কেন না শরীরে জমে থাকা নানা টক্সিক প্রস্রাব ও ঘামের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তাই শীতের দিনেও ন্যূনতম ১.২–১.৫ লিটার পানি পান করা দরকার বলে কৌশিক মজুমদারের পরামর্শ। যদিও শীতকালে এয়ারকন্ডিশনে থাকার ঘটনা কম, তবু যাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকার অভ্যাস, তাদের শরীরে পানির চাহিদা বেশি। তাদের অবশ্যই দৈনিক ১.৫ লিটার পানি পান করা উচিত।

একজন মানুষের কতটা পানি পান করা দরকার— এই প্রশ্নের উত্তরে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত বললেন, অসুখ বিসুখ ছাড়াও একজন মানুষের পানির চাহিদা তার স্বাস্থ্য, দৈহিক ওজন, কায়িক পরিশ্রমের পরিমাণ ও স্থানীয় আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করে। বিশ্বের যাবতীয় প্রাণীর মতো মানুষের শরীরের প্রধান উপাদান পানি। আমাদের ওজনের প্রায় ৬০ শতাংশ জলীয় উপাদান। এটি শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করার পাশাপাশি সংবেদনশীলতা রক্ষা করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আবার মেটাবলিজিম বা বিপাকীয় প্রক্রিয়া এবং শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশন বা রেচন প্রক্রিয়াতেও পানির প্রয়োজন খুব বেশি। শ্বাস প্রশ্বাস থেকে শুরু করে ঘাম বা মলমূত্র ত্যাগ, সব কাজেই শরীর থেকে কিছু পানি বাইরে বেরিয়ে যায়। তাই দৈনিক আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে পানিপান করতেই হয়। রোজকার প্রয়োজনীয় পানির কুড়ি শতাংশ পূরণ হয় খাবারের জলীয় অংশ থেকে আর বাকিটা পানি ও চা, কফি, দুধ, বোতলজাত ঠান্ডা পানীয়, ফল বা ফলের রস বা হার্ড ড্রিংকসের মতো জলীয় খাবার থেকে আসে। তবে তরমুজ বা পালং শাকের মতো খাবারে নব্বই শতাংশের বেশি পানি বলে, এরা পুষ্টির সঙ্গে শরীরের পানির চাহিদাও মেটায়।

‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের তথ্য অনুসারে, আমাদের দেশে একজন সুস্থ স্বাভাবিক নীরোগ পুরুষের দিনে ৩–৩.৭ লিটার ও মহিলাদের ২.৫–২.৭ লিটার পানি পান করা উচিত। মাঝারি গ্লাসের হিসাবে দৈনিক ১০–১৪ গ্লাস। এর সঙ্গে প্রতি আধ ঘণ্টা কায়িক পরিশ্রমের জন্য বারো আউন্স পানি পান করা দরকার। এ ছাড়া ব্যায়াম বা জিম করার আগে, মাঝে বা পরে লেবুর শরবৎ বা প্লেন পানি পান করলে ভাল হয়।

দেবকিশোর গুপ্ত জানালেন যে, কলেরা, বমি, জ্বর প্রভৃতি অসুখে শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায় বলে শরীরে পানির প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। সন্তানসম্ভবা মহিলা ও যে সব মায়েরা বাচ্চাকে স্তন্যপান করান, তাদেরও স্বাভাবিকের থেকে বেশি পানি খাওয়া উচিত। আবার উষ্ণ বা আর্দ্র আবহাওয়ায় ও অতিরিক্ত উচ্চতাতেও শরীরে পানির অভাব দেখা দিতে পারে। দেবকিশোর বললেন, ক্রনিক কিডনির অসুখে বা হার্ট ফেলিওরের মতো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি মেপে খেতে হয়, বাড়তি পানি বা পানীয় জিনিস কিডনি ও হার্টের উপর চাপ ফেলে।

কোভিড আবহে পর্যাপ্ত পানিপানের পরামর্শ দিলেন দেবকিশোর। যাদের ইতিমধ্যে নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে বা সেরে উঠেছেন, তাদের পানির প্রয়োজন বেশি। এই সময়ে নানা ওষুধ খেতে হয়, তাই কম পানি পান করলে শরীর খারাপ লাগে। অনেকে অল্প পানি খেতে অভ্যস্ত বলে তাদের চট করে পানির পিপাসা পায় না। এ দিকে শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে ক্লান্তি বাড়ে, কাজে অনীহা দেখা দেয়, প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। যেসব বয়স্ক পুরুষ প্রস্টেটের অসুখে ভুগছেন, তাদের সন্ধ্যার পর বেশি পানি খেলে বার বার বাথরুমে দৌড়তে হবে। বললেন ইউরোলজিস্ট অমিত ঘোষ। তাই প্রস্টেটের অসুখে সারা দিনে প্রয়োজনীয় পানি পান করে বিকেলের পর থেকে অল্প পরিমাণে পানি খাওয়া উচিত। অন্য দিকে, কিডনিতে স্টোন থাকলে বেশি পানি খেলে প্রস্রাবের সঙ্গে ছোট স্টোন বেরিয়ে যেতে পারে, বললেন অমিত ঘোষ । তাই, পানি পানের ব্যাপারে কোনো আপস করা ঠিক নয়।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us