সুস্থ থাকুন মেনোপজের পরেও
সুস্থ থাকুন মেনোপজের পরেও - ছবি সংগৃহীত
বয়স বেড়ে গেলে মেয়েদের মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। নারীরা সন্তানধারণ ক্ষমতা হারায়। মেয়েদের জন্য ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন জরুরি। এ হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ায় মেয়েদের দেহে নানা রকম পরিবর্তন হয়। একে বলে মেনোপজ।
সাধারণত ৪০-৫৫ বছরে মেনোপোজ দেখা যায়। ধূমপান, তেজষ্ক্রিয়তা, কেমোথেরাপি, সার্জারির মাধ্যমে গর্ভাশয় ফেলে দিলে বা গর্ভাশয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ করে এমন সার্জারির ফলে মেনোপোজ তাড়াতাড়ি দেখা দেয়।
কিভাবে বুঝবেন মেনোপজ হতে যাচ্ছে :
ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় শতকরা ৭৫ ভাগ নারীরই হঠাৎ করেই দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। দিনের পর দিন এ তাপমাত্রা আরো বাড়তে থাকে। একে বলে হট ফ্লাস। সাধারণত মেয়েদের শেষ মাসিকের সময় থেকেই হট ফ্লাস দেখা দেয়। এটাই মেনোপজ বোঝার ভালো উপায়। এর সাথে বেড়ে যায় হৃদস্পন্দন, বুক ধড়ফড়, মাথা ঘোরা ও সেই সাথে রাতে শরীর ঘামে ভিজে যেতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে মরিচের মতো ঝালানোর অনুভূতিও হতে পারে। যোনিপথের পিচ্ছিলতা কমিয়ে গিয়ে শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে যৌনমিলনের সময় ব্যথা অনুভূত হয়। হরমোনের পরিবর্তনের ফলে মেয়েদের মুখে চুল গজাতে পারে বা মাথার চুল পড়ে যেতে পারে।
মেনোপজের পরও সুস্থ থাকতে
হট ফ্লাস প্রতিরোধে যা করবেন : হট ফ্লাসের জন্য মেয়েরা নানান সমস্যায় পড়েন। আর এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে মসলাযুক্ত খাবার, মদ বা অ্যালকোহল, কফি, চা ও অন্যান্য গরম পানীয় ত্যাগ করতে হবে। হট ফ্লাস শুরু হলে ঠাণ্ডা পানি বা ফলের জুস পান করুন। সুতি জামা কাপড় পরিধান করুন। পান করুন প্রচুর পানি। দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে নিজেকে প্রাণবন্ত রাখুন।
বেশি করে খান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি : মেনোপজের সময় মেয়েদের হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। দেখা যায় অস্টিওপোরেসিস বা হাড় ক্ষয় রোগ। সহজেই ভেঙে যায় হাড়। তাই হাড়কে ভাঙার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন ক্যালসিয়াম। ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণ করে হাড়ের দৃঢ়তা রক্ষায় সহায়তা করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা মেনোপজের পর ৩ বছর ভিটামিন ডি খেয়েছেন তাদের স্পাইন ফ্রাকশ্চার ঘটনা অনেকাংশে কমে গেছে।
ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করুন :
ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমার ফলে মেনোপজের সময় মেয়েরা হৃৎপিণ্ডের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অস্টিওপোরেসিস বা অস্থিক্ষয় রোগ, ব্যাক পেইন, ঘুমে সমস্যা ও ডিপ্রেসনে ভোগেন। সেই সাথে মুটিয়ে যান অনেকেই। শারীরিক পরিশ্রমই পারে এ সমস্যা থেকে মুক্ত করতে। মেয়েদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যয়ামের গুরুত্ব বেড়ে যায়। নিয়মিত ব্যয়ামের ফলে হৃৎপিণ্ড ও হাড়ের কার্যকারিতা ঠিক থাকে সেই সাথে ওজনের সামঞ্জস্য করে ও মানসিক চাপ কমায়, হাড় মজবুত হয় সেই সাথে কমে যায় ভঙ্গুরতা।
শাকসবজি ও ফলমুল খান বেশি করে
শাকসবজি, ফলমুল, ভিটামিন ‘সি’ ও ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি করে খান। দৈনিক ২০-৩০ গ্রাম ফাইবার জাতীয় খাবার যেমন সজিনা, শাকসবজি, মুলা, পাতাকপি, ফুলকপি ইত্যাদি খান।
গরুর মাংস, শুকুরের মাংস, হট ডগসহ নানান ধরনের ফাস্টফুড খাওয়া বাদ দিন। এসব খাবারে থাকে অতিরিক্ত সোডিয়াম যেটা রক্তচাপকে বাড়িয়ে নানান ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। চর্বি জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিন। কমিয়ে ফেলুন অতিরিক্ত ওজন।
দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন
মেনোপজের সময় হঠাৎ করেই মেয়েদের শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেয়। এতে করে অনেকেই দুশ্চিন্তায় ভোগেন। শরীরের এ পরিবর্তনকে স্বাভাবিক মেনে নিয়ে হাসিঠাট্টায় মেতে ওঠুন। জোর করে হলেও হাসুন প্রাণ খুলে। মেডিটেশন করতে পারেন। এত কমবে মানসিক চাপ, বাড়বে আত্মবিশ্বাস।
চিকিৎসা নিন চিকিৎসকের পরামর্শে
মেনোপজের আছে নানান ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে এসব চিকিৎসা নিতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আছে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ইস্ট্রজেন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ও সিনথেটিক ইস্ট্রোজেন।
* বারডেম, শাহবাগ