গলার স্বর পাল্টানো কি ক্যান্সারের লক্ষণ?
গলার স্বর পাল্টানো কি ক্যান্সারের লক্ষণ? - ছবি সংগৃহীত
ভয়েস চেঞ্জ! হঠাৎ করেই এমন হলে তা কিন্তু মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। লুকোনো একাধিক কারণ সম্পর্কে সচেতন করলেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি স্পেশালিস্ট ডা. সোমনাথ সাহা।
স্বরতন্ত্রী বা ভোকাল কর্ড ও স্বরনালি বা ভয়েস বক্স এই দুয়ের সমন্বয়ে গলার স্বর প্রকাশ পায়। এছাড়া গলার সঙ্গে জড়িত অঙ্গগুলি অর্থাৎ জীব, তালু আর ঠোঁটের গতিবিধির উপড় স্বর কতটা মধুর হবে তা নির্ভর করে। বেশির ভাগ সময়ই এই স্বরের কমা-বাড়া উপেক্ষা করা হয়। অবহেলায় বিপদ।
জন্মগত কারণ
জন্মের পর শিশু শুনে শুনে কথা বলতে শেখে। শিশু যদি বধির হয় তবে সে শুনতে না পাওয়ার জন্য কথা বলতেও পারে না। এছাড়া জেনেটিক কারণ (মিউটেশন) বা জন্মের পর কোনো রোগের কবলে পড়লে ওষুধের রিঅ্যাকশনেও অনেক সময় কথা বলার সমস্যা তৈরি হয়। মেনেনজাইটিস জাতীয় রোগের কারণে শিশু নিজের স্বর হারাতে পারে।
কনজেনিটাল ভোকাল কর্ড প্যারালাইসিস থাকলে বা ভোকাল কর্ডের ভাঁজের মধ্যে যদি কোনও ঝিল্লি গজিয়ে যায় তাহলে শিশুর স্বর খুব ক্ষীণ হয় সারা জীবন। অনের সময় দেখা যায় জন্মগত ঠোঁট বা তালু কাটা হলে শিশুর, তার সঠিক সময় চিকিৎসা না করলে স্পষ্ট কথা বলতে সারাজীবন অসুবিধা হতে থাকে।
শৈশবের অসুখ
অনেক সময় ২-৫ বছরের শিশুরা হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তখন তাদের স্বরনালিতে ছোট ছোট টিউমার হয়। যা থেকে শ্বাসকষ্ট হয় এবং স্বর পালটে যেতে পারে। এই রোগ হলে গলায় ফুটো করে লেজার ট্রিটমেন্ট করে চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়া অনেক শিশু যারা অত্যধিক চেঁচামেচি করে তাদের স্বর পরিবর্তন ঘটতে পারে। কারণ এক্ষেত্রে চিৎকারের মাত্রা ভোকাল কর্ডের স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়ায়, যার ফলেই এমন হয়। এছাড়া স্বরনালির যক্ষ্মা রোগের দরুনও স্বরের পরিবর্তন ঘটে। এই ধরনের রোগগুলোর ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।
বয়ঃসন্ধিতে স্বরের ওঠা-নামা
সাধারণত ১২ বছর বয়স অবধি সকলেরই স্বর একইরকম থাকে। সেক্স হরমোন এবং থাইরয়েড হরমোনের নানা পরিবর্তন মেনে এর পরবর্তী বয়স থেকেই শুরু হয় স্বরের হেরফের। এই সময় যদি স্বর না পালটায় সেটাও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই বয়সে আর একটা বড় সমস্যা হলো তোতলামি। এগুলির ক্ষেত্রে স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব।
প্রাপ্ত বয়সে সাবধান
এই বয়সে পৌঁছনোর পর প্রত্যেকের একটা নির্দিষ্ট গলার স্বর হয়। হঠাৎ করেই সেই নির্দিষ্ট স্বরের বদল চিন্তার বিষয়। যাঁদের ভোকাল কর্ড স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে যেমন নেতা/মন্ত্রী, হকার, এদের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে স্বর পরিবর্তন ঘটে। অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়ার ফলে খাদ্যনালিতে অ্যাসিড রিফ্লেক্স বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেও স্বর পালটে যায়। আর একটি মূখ্য কারণ হল ধূমপান, যদি ৩৫ বছর পর কারও স্বরের অস্বাভাবিক পরিবর্তিত ঘটে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অনিবার্য। এটি ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে। এছাড়া ভোকাল কর্ড প্যারালাইসিসের ফলেও স্বর পাল্টাতে পারে। এই প্যারালাইসিস ভয়েস বক্সে চোট লাগার ফলে বা থাইরয়েড সার্জারি করার সময় ল্যারিংগেল নার্ভের ক্ষতি হলে অথবা ফুসফুস ক্যানসারের ফলে হতে পারে।
রেওয়াজের স্বরলিপি
জন্মগত কোনো রোগ থাকলে দরকার সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা। যদি ঠোঁট বা তালু কাটা হয় তাহলে দু’ বছর বয়সের মধ্যে অপারেশন করিয়ে নেয়া দরকার।
যেকোনো বয়সেই স্বর পরিবর্তন হলে, ইএনটি স্পেশালিস্ট দেখিয়ে তার কারণ খুঁটিয়ে দেখা প্রয়োজন। সেই মতো চিকিৎসা ও ওষুধ জরুরি। প্রয়োজনে স্পিচ থেরাপি বা সার্জারি করতে হতে পারে।
যাদের গলা ভেঙে যায় প্রায়ই তাদের ফাস্ট ফুড যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত। এছাড়া দিনে ৪-৫ লিটার স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি খান।
এক নাগাড়ে কথা বলার সময় একটু বিরতি নিয়ে অল্প পানি খেয়ে আবার কথা বলুন। অস্বস্তি হলে জোর করে কথা না বলাই উচিত।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন