কম বয়সে কেন চুল পাকে?
কম বয়সে কেন চুল পাকে? - ছবি সংগৃহীত
মাথা ভর্তি কালো চুলের ফাঁকে একটা সাদা চুলের উঁকি! দেখলেই বেদম টেনশন। প্রৌঢ়ত্বের চিহ্ন দেখে শঙ্কা ঘনিয়ে আসে মনে। কাঁপা হাতে ঝেড়েবেছে শুভ্র চুলটি ধরতে পারার টার্গেট সম্পূর্ণ হলে, সমূলে তুলে নেয়ার পালা। হালকা টানাটানির পরেই ‘পটাং’। বয়স মেনে পরিবর্তনশীল হয় শরীর। কিন্তু কিছু পরিবর্তন আগে হলে তা অবশ্যই অস্বাভাবিক। অকালে চুলে পাক ধরাটাও এমনই অস্বাভাবিকতার লক্ষণ। যুবা বয়সে এক মাথা কালো চুলের ফাঁকে একটা পাকা চুল উদয় হলে, বয়স বাড়ার দুশ্চিন্তায় ভোগেন অনেকে। ‘লোকে বুড়ো বলবে’, ‘স্টাইলে পিছিয়ে যেতে হবে’, ‘দেখতে খারাপ লাগবে’ গোছের নানা ধারণা নিয়ে উদ্বেগের পারদ চড়তে থাকে।
কম বয়সে কেন চুলে পাক?
মাথার স্ক্যাল্পে চুলের রঞ্জক তৈরি করার কোষ (মেলানোসাইট) নষ্ট যাওয়ার কারণে চুল পাকে। জেনেটিক বা বাহ্যিক কিছু কারণে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলানোসাইটের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। যে কোষের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, সেই কোষের রন্ধ্র থেকে উৎপন্ন চুল সাদা বা ধূসর হতে থাকে। সাধারণত তিরিশের কাছাকাছি বয়স থেকে মাথায় অল্প সাদা চুল দেখা যায়। কিন্তু কৈশোর বা ২৫ বছর বয়সের আগে থেকেই মাথায় পাকা চুল হলে, তাকে প্রিম্যাচিওর রেঞ্জ বলে। বাঙালির ক্ষেত্রে বয়স ৩০ পেরনোর আগে এমন হলে দ্রুত প্রতিরোধের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে বংশগত, শারীরিক, মানসিক ও পুষ্টিজনিত কারণকে দায়ী করা হয়।
এটা কি কোনো অসুখের লক্ষণ?
থাইরয়েড বাড়লে, শরীরে অপুষ্টি দেখা দিলে ২০ বছর বয়সের পর থেকেই পাকা চুল গজাতে পারে। কিন্তু ১০-১২ বছর বয়সে যদি আচমকা চুল পাকতে শুরু করে তাহলে সাবধান। শ্বেতির কারণে সাধারণত এই বয়সে চুল পাকে। তবে অনেকে মনে করেন, লিভারের অসুখ হলে চুল ধূসর হয়। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
কোন অভ্যাসের ফলে অকালে চুল ধূসর হয়?
মূলত স্ট্রেসের কারণে ইদানীং কমবয়সী ছেলেমেয়েদের চুল তাড়াতাড়ি পাকা হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। অতিরিক্ত কাজের চাপ, টেনশনের কারণেও চুল পাকে। দীর্ঘদিন ধরে ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ সঠিক সময়ে না খেলেও এমন হয়। অনেকেই ব্রেকফাস্ট করেন না। একটু বেলায় একবারে লাঞ্চ করে নেন। এই অভ্যাস খারাপ। এভাবে পুষ্টিজনিত ঘাটতি মেটাতে শরীর ব্যর্থ হলে চুলে পাক ধরে
পাকা চুল দু’-একটা ছিঁড়লে কি আরো বেশি গজায়?
এটা একটা মিথ মাত্র। এর কোনো সত্যতা নেই। যখন প্রথম পাকা চুল উঁকি মারতে শুরু করে, তখন সমূলে তুলে নিলে আশপাশের চুল মোটেও পাকবে না।
প্রতিরোধ কীভাবে?
১. স্ট্রেস ম্যানেজ করতে শিখুন। টেনশন কমান।
২. ধূমপান ছাড়ুন।
৩.থাইরয়েড বেশি থাকলে তার চিকিৎসা করান।
৪. সুষম খাবার খাওয়া অভ্যাস করুন। জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ুন।
৫. প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কয়েকটি আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড যুক্ত ক্যাপসুল খাওয়া জরুরি। সুষম খাবার গ্রহণের অভ্যাস তৈরি হয়ে গেলে এবং তার থেকে চুল পুষ্টি পেতে শুরু করলে আস্তে আস্তে ওষুধ খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। তারপর ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিতে হয়।
এমন সমস্যায় কী কী খাবেন?
ডাল, ভাত, সবুজ, শাক-সবজি, মাছ-গোশত, মরশুমি ফলের মতো সুষম খাবার খেতে হবে। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সময়মতো করতে হবে। ভিটামিন ই, কপার সমৃদ্ধ আমন্ড বাদাম খাওয়া জরুরি। ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতি মেটাতে মুরগির গোশত, গোশতের মেটে, সার্ডিন-টুনা-ট্রাউট মাছ, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য খেতে হবে। এগুলো নিয়মিত খেলে চুলকে সতেজ রাখা ক্যারোটিন প্রোটিন উজ্জীবিত হয়। ফাস্ট ফুড বেশি খাওয়া চলবে না। আয়রন, জিঙ্ক, কপার, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
চুলে পাক ধরার সঠিক বয়স?
তিরিশ পেরনোর পর থেকেই সাধারণত চুল ও ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে। এই সময়ে চুল পাকতে শুরু করা খুব অস্বাভাবিক নয়। তবে প্রতিরোধ করতে চাইলেও লাইফস্টাইল পরিবর্তন ও ওষুধ ব্যবহার করা যায়।
এই অবস্থায় চুলে রং করা কতটা স্বাস্থ্যকর?
পাকা চুল ঢাকতে ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা চুলের রং ব্যবহার করাই একমাত্র নিরাপদ। বাজারে জনপ্রিয় কেমিক্যাল দেয়া রং ব্যবহারে বিপদ বাড়ে।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন