আমিই জিতব : এখনো আশাবাদী ট্রাম্প
ট্রাম্প - ছবি : সংগৃহীত
নির্বাচনে হেরে নির্বাচন–পরবর্তী প্রথম জনসভাতেই ফের ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগ বিদায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। জর্জিয়ার ভালদোস্তার জনসভা থেকে ট্রাম্প বলেন, ‘নির্বাচনে চুরি করা হয়েছে। তবুও আমিই জিতছি। আমিই জিতব। পরিকল্পনামাফিক জালিয়াতি হয়েছে। তাই এই ফলাফল।’
জর্জিয়ার মতো রিপাবলিকান ঘাঁটিতেও বাইডেনের কাছে প্রায় ১২ হাজার ভোটে হেরেছেন ট্রাম্প। ওই রাজ্যে দু’টি সিনেট আসনের জন্য সামনেই ‘রান–অফ’ নির্বাচন রয়েছে। ওই দু’টি আসনে নির্বাচনের ফলাফল থেকেই ঠিক হবে, সিনেট কাদের দখলে যাবে। শনিবার দুই রিপাবলিকান সিনেট প্রার্থীর প্রচারে জর্জিয়ায় গিয়েছিলেন ট্রাম্প–দম্পতি। বলেন, ‘জর্জিয়ার ভোটাররাই নিশ্চিত করবেন, প্রত্যেকটি কমিটি কোন পার্টির দখলে যাবে। কোন নির্দেশ কার্যকর হবে এবং করদাতাদের টাকা কীভাবে খরচ হবে। আপনারাই ঠিক করুন, আপনাদের ছেলেমেয়েরা স্বাধীন দেশে বেড়ে উঠবে নাকি একটা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বড় হয়ে হবে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সূত্রে খবর, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্পকে ফোন করে রাজ্যে বিশেষ অধিবেশন ডেকে নিজের দিকে সমর্থন টানার চেষ্টা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এছাড়াও অনুপস্থিত ভোটারদের সই যাচাই করতে অডিটেরও নির্দেশ দেন তিনি।
সূত্রের বক্তব্য, ট্রাম্পের প্রস্তাবে রাজি হননি কেম্প। জানিয়ে দিয়েছেন, অডিটের নির্দেশ দেওয়া তাঁর এক্তিয়ারে নেই। ট্রাম্প সত্যিই কেম্পকে ফোন করেছিলেন কি না, হোয়াইট সে ব্যাপারে মন্তব্য করেননি। কেম্প্রের মুখপাত্র কোডি হল জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন গভর্নর, তবে বিশেষ অধিবেশন বা অডিটের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে ট্রাম্পের ভিডিয়োয় 'ফ্ল্যাগ' ফেসবুক-ট্যুইটারের
অতীতে একাধিক বার তার পোস্ট 'ফ্ল্যাগ' করেছে টুইটার। তবে বুধবার নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগে যে ভিডিও-বার্তা প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে একযোগে লালসঙ্কেত ঝোলাল টুইটার ও ফেসবুক। ইতিমধ্যে ভোটে জালিয়াতি নিয়ে তাঁর একের পর এক অভিযোগ খারিজ করেছে মার্কিন আদালত।
এ বার ট্রাম্পের ভিডিও-বার্তায়ও ফেসবুক-টুইটারের যুগপৎ 'ওয়ার্নিং' পড়ে যাওয়ায় আখেরে তার পক্ষে কত দূর কী করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় তুঙ্গে। নির্বাচনের রাতেও তার একটি পোস্টকে ফ্ল্যাগ করেছিল টুইটার। ফেসবুক আবার বিভ্রান্তি আটকাতে সে পোস্টের উপরে কিছু ব্যাখ্যা দিয়ে রাখে। তবে ট্রাম্পের দাবিতে দুই বিশাল সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থারই যুগপৎ 'ওয়ার্নিং', এমন বিষয় স্মরণকালের মধ্যে মনে করতে পারছেন না অনেকে। হোয়াইট হাউসের ডিপ্লোম্যাটিক রুমে রেকর্ড করা ৪৬ মিনিটের ওই ফুটেজে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট অবশ্য বলছেন, 'যে ৭০ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন জনতা আমাকে ভোট দিয়েছেন, এটি শুধু তাদের সম্মানের বিষয় নয়। আমেরিকা যাতে ভবিষ্যতে এই নির্বাচন ও সমস্ত ভোটপ্রক্রিয়ায় বিশ্বাস রাখতে পারে, সেটিও সুনিশ্চিত করা জরুরি।'
তার মতে, আমেরিকার গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উপর সুসংহত হামলা চালানো হয়েছে। তবে ট্রাম্প-প্রশাসনের আধিকারিকদের অনেকে এ অভিযোগ খারিজ করেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। সম্প্রতি বার জানান, মার্কিন বিচার দপ্তর নির্বাচনী কারচুপির এমন কোনও প্রমাণ পায়নি যা থেকে নভেম্বরের ভোটের ফলাফল নিয়ে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি-র অধীনে থাকা সাইবারসিকিউরিটি ও পরিকাঠামোগত নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার প্রধান ক্রিস্টোফার ক্রেবস-ও দাবি করেছিলেন, ভোটগণনায়ও কোনো জালিয়াতি হয়নি। ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ আগে বরখাস্ত করেন তাকে। তার পরই অ্যাটর্নি জেনারেলের সাম্প্রতিক বক্তব্য।
সব মিলিয়ে ক্রমে কোণঠাসা হতে থাকা রিপাবলিকান ধনকুবের ক্রমে মরিয়া। অ্যাটর্নি জেনারেলকে আক্রমণ করতে তার প্রচারের দায়িত্বে থাকা দুই আইনজীবী রুডি গিউলিয়ানি এবং জেনা এলিস বিবৃতি দিয়ে তাই বলেছেন, 'ভোটে অনিয়ম ও পরিকল্পিত জালিয়াতির প্রমাণের বিষয়ে বোধহয় তার অজানা।' সঙ্গে বুধবারের ভিডিও। পাশাপাশি মার্কিন প্রশাসন সূত্রে খবর, গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের ক্রিসমাস পার্টিতে অতিথিদের অনেককেই ট্রাম্প বলেছেন, 'গত চার বছর দুরন্ত কেটেছে। আরো চার বছরের জন্য চেষ্টা করছি। না হলে তার পরের চার বছরে দেখা হবে।'
অর্থাৎ তিনি ফিরবেনই। আইনি পথে না হলে অন্য ভাবে। এখন না হলে পরের দফায়। চেষ্টা চলবেই।
সূত্র : আজকাল ও এই সময়