ভ্যাকসিনের চেয়ে ‘স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা’ বেশি ভালো?
করোনাভাইরাস - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে করোনামুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনটি বেশি কার্যকরী? স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে করোনা মুক্ত হওয়া না কি টিকা বা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে করোনাকে ঠেকানো- কোনটা ভালো পদ্ধতি? এই নিয়ে অবশ্য অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি মডার্না ও ফাইজার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রকাশ পেতেই নানা মহলে নানা মত প্রকাশ পেয়েছে।
মার্কিন সিনেটর পল যেমন জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ এবং ৯৪.৫ শতাংশ সেখানে স্বাভাবিক ভাবে যারা করোনা মুক্ত হচ্ছে সেই কার্যকারিতা ৯৯.৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ ভ্যাকসিনের থেকে অনেকাংশে ভালো। উল্লেখ্য, এই সিনেটর নিজেও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন।
যদিও সিনেটরের এই যুক্তি মানতে নারাজ টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজিস্ট জেনিফার গোমেরম্যান। তিনি জানিয়েছেন, স্বাভাবিক ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়া এবং করোনার মতো ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ হওয়া নিসন্দেহে ভালো। কিন্তু এর সঙ্গে ভ্যাকসিনের তুলনা হয় না। এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন সুরক্ষিত। এমনকি নতুন করে করোনা আক্রমণের আশঙ্কাও অনেকতা কমিয়ে দেয় ভ্যাকসিন।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে। একটি নির্দিষ্ট শতাংশের মানুষের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে গেলে ভ্যাকসিনের প্রয়োজন সেখানে অনেকটাই কম হয়। তবে, পরীক্ষা বলছে করোনার ক্ষেত্রে কিন্তু মানবদেহে নিজের থেকে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে স্বল্প সংখ্যক। কোভিড-১৯ ভাইরাসের মতো রোগ প্রতিরোধে যা যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন। তা হলো এক, কতটা পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে, দুই, সেগুলো ‘নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি’ কি না? কারণ এই ‘নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি’রাই আদপে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখে। সেরোলজিকাল সার্ভে কিন্তু সেই তথ্য দিচ্ছে না।
যদিও সিনেটারের দাবি স্বাভাবিক ভাবে যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন তারা অনেক বেশি ক্ষমতাবান এবং সেটাই ভালো উপায়। সে ক্ষেত্রে দেহে নিজের থেকেই অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। তিনি এও বলেন যে ভ্যাকসিন দিলে তা বছরের পর বছর ধরে কার্যকরী ভূমিকা নেবে এমন কথাও কোথাও বলা হয়নি। এমনকি ভ্যাকসিন নিলে পুনসংক্রমণ হবে না তেমনটাও নয়।
তবে কি ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা নেই? বিজ্ঞানীরা বলছেন, আছে। রোগ আসার আগেই ভ্যাকসিন নিলে সুরক্ষিত থাকার সুযোগ রয়েছে অনেকটাই।
ভারতের ভ্যাকসিন চাহিদায় নেই ফাইজার টিকা
মার্কিন সংস্থা ফাইজার ভ্যাকসিন নিজের জনসাধারণের মধ্যে প্রয়োগ করতে অনুমোদন দিয়েছে ব্রিটেন। আগামী সপ্তাহ থেকেই সে দেশে টিকা প্রয়োগ করবে ফাইজার-বায়োএনটেক। তবে ফাইজার টিকা নিয়ে বিশেষ উৎসাহ দেখায়নি ভারত। দেশের ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞদের টিকা চাহিদার তালিকায় নেই এই মার্কিন ভ্যাকসিন।
ভারত এই টিকা নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি বিশেষ তার প্রধান কারণ সংরক্ষণের নিয়ম। এই টিকা সংরক্ষণের জন্য মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন। সাধারণত ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। তবে এই টিকার সংরক্ষণ নিয়ম আলাদা। এত কম সময়ে সেই পরিকাঠামো তৈরি ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়।
ভারতের ভ্যাকসিন প্রশাসনের উচ্চপদস্ত বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ভি কে পাল বলেন, “আমি জানি যে এই ফাইজার ভ্যাকসিন বিপুল সংখ্যায় পাওয়া যাবে না যদি প্রয়োজন পরে তখন দেখা যাবে। আমাদের অন্য পরিকল্পনা রয়েছে নিজেদের মতো করে।”
ভারতে কোভিশিল্ড টিকা, ভারত বায়োটেক ও জাইডাস ক্যাডিলারের আরেক টিকা, কোভ্যাকসিন, রুশ টিকা স্পুটনিক ভি-এর শেষ ধাপের ট্রায়াল চলছে। ভি কে পালের কথায়, “আমাদের এই পাঁচ ভ্যাকসিন নিয়ে উচ্চ প্রত্যাশা রয়েছে। এই ভ্যাকসিনগুলি বিপুল পরিমাণেও পাওয়া যাবে। আমরা খুব সহজেই অতিমারীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।”
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস