গাদ্দাফির পরমাণু পরিকল্পনা
গাদ্দাফি - ছবি সংগৃহীত
লিবিয়ার পারমাণবিক স্থাপনার সব বৈজ্ঞানিক সামগ্রী মার্কিন সেনাসদস্যরা কার্গো জাহাজে করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়। বিনিময়ে স্বৈরশাসক গাদ্দাফি কিছুকাল (২০০৩-২০১১) ক্ষমতায় থাকার নিশ্চয়তা পেয়েছিলেন। দালালি করেও ক্ষমতায় টিকে থাকা বেশি দিন সম্ভব হলো না গাদ্দাফির। ৪২ বছরের দুঃসহ স্মৃতি লিবিয়ার নাগরিকদের বহন করতে হবে বহুকাল। এখন লিবিয়ার অয়েল ফিল্ডের নতুন ‘মুরব্বি’ ন্যাটো। ২০০৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর গাদ্দাফি আমেরিকা ও ব্রিটেনের ইহুদি লবির চাপে পারমাণবিক গবেষণা প্রকল্প পরিত্যাগ করার পরপরই আকাশ ও নৌপথে কেমিক্যাল, নিউক্লিয়ার ও বায়োলজিক্যাল অস্ত্র উপাদান আমেরিকায় পৌঁছতে থাকে। ২০০৩ সালে ২০০ ব্যালিস্টিক স্কাড-বি ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যবহার করার উপযোগী দুই হাজার টন ইউরেনিয়াম ও রেডিওলজিক্যাল ম্যাটেরিয়াল আমেরিকা নিয়ে গেছে। পরবর্তী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সময়ে টেনেসি স্টেট বিমানবন্দরে নিয়মিত ত্রিপোলি থেকে রাসায়নিক অস্ত্রসামগ্রী বহনকারী কার্গো বিমান অবতরণ করতে থাকে।
সর্বশেষ খবর হচ্ছে, লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যোগসাজশে যুক্তরাষ্ট্র্র লিবিয়ার খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজনে গ্রেফতার এবং বিজ্ঞান গবেষণাগার খুঁজে বের করার জন্য ৩০ লাখ ডলার ব্যয় করছে (এপি, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১১)। কেবল ত্রিপোলির বাইরে তাজুরা নামক স্থানে স্থাপিত পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রেই ৭৫০ জন বিজ্ঞানী কাজ করতেন। তাদের বর্তমান অবস্থান অনেকটা অজ্ঞাত।
সোয়াত উপত্যকায় শরিয়াহ আইন চালুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র্র পাকিস্তানের কাহুটা পারমাণবিক কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের পাঁয়তারা করছে। তালেবান গেরিলারা যেকোনো সময় পারমাণবিক স্থাপনা দখল করে নিতে পারে- আমেরিকা প্রতিনিয়ত এ আশঙ্কা প্রকাশ করে একটি অজুহাত খাড়া করতে চাচ্ছে। তালেবান যোদ্ধাদের নাগালের বাইরে রয়েছে এই পরমাণু অস্ত্র। পাকিস্তান বারবার আশ্বস্ত করলেও ওয়াশিংটন বলছে- ‘পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের নিরাপত্তা এখনো বিরাট বিপদের মুখোমুখি’। যুক্তরাষ্ট্র্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল জেমস জোনস বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী যতই বলুক, তাদের পরমাণু অস্ত্র নিরাপদে আছে। এতদসত্ত্বেও ওয়াশিংটন আরো নিশ্চয়তার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে।’ এভাবে তালেবান হুমকির প্রসঙ্গ তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক স্থাপনার পাহারাদারির জন্য পাকিস্তানকে বাধ্য করছে। ফলে মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। জেনারেল মোশাররফের শাসনামলে আমেরিকার নির্দেশে ‘পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের জনক’ ড. আবদুল কাদির খানকে গৃহবন্দী রাখা হয়। তাকে সিআইএ’র কাছে হস্তান্তরের জন্য আমেরিকা জোর দাবি জানায়। জনরোষের ভয়ে মোশাররফ সরকার এ দাবি মানতে পারেনি।
রহস্যজনক ‘US Contingency Plan’ অনুসারে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র জঙ্গিদের হাতে পৌঁছে যাওয়া অর্থাৎ আল কায়েদা বা তালেবান জঙ্গিরা যদি পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্প দখলে নেয়ার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের বৈরী স¤পর্ক সৃষ্টি হলে পেন্টাগন পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র পাকিস্তান সরকারের অনুমতি ছাড়াই পাকিস্তানের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ব্যাপক পরিকল্পনা করেছে। দেশটি নিউক্লিয়ার সাইট বিশেষ করে বৃহত্তর ‘খুনাব রিঅ্যাক্টর এবং নিউ ল্যাব প্রসেসিং প্ল্যান্ট’ বোমা মেরে ধ্বংস করার ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে মার্কিনিদের (আমার দেশ ১ অক্টোবর ২০১১,পৃষ্ঠা-৭)।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত হোক- এটা ইসরাইল কোনো দিন চায়নি। ইহুদি লবির সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশের ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করে ইরানে হামলা পরিচালনার জন্য। কিন্তু আফগানিস্তান ও ইরাক সঙ্কটের পাশাপাশি আরেকটি সঙ্কট সৃষ্টি হোক, বুশ সে ঝুঁকি নিতে চাননি। আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে আমেরিকার বিপুলসংখ্যক সেনা ও প্রচুর অর্থহানি হয়েছে। মার্কিন সরকারের সবুজসঙ্কেত না পাওয়ায় খোদ ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সাহস করেনি। তবে যেকোনো মুহূর্তে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ইসরাইলের টার্গেট হতে পারে।
সরাসরি হামলা করতে না পেরে ইসরাইল গুপ্তহত্যার আশ্রয় নিয়ে মুসলিম বিশ্বকে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্রে নেমেছে। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে ইরানের শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানী আরদাশির হাসান বাউর মোসাদ এজেন্টদের হাতে প্রাণ হারান। আরদাশির ইস্পাহানে অবস্থিত পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং পরমাণু গবেষণার অন্যতম পাদপীঠ সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক স্টাডিজের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘দ্য সানডে টাইমস’ পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, ইরানের শীর্ষস্থানীয় আরো বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী ইসরাইলি বা ইহুদিদের হত্যার তালিকায় রয়েছে।