যে ষড়যন্ত্রের শিকার ড. আফিয়া সিদ্দিকা
ড. আফিয়া সিদ্দিকা - ছবি সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র মুখে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, সহিষ্ণুতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা বললেও বাস্তবে তার প্রমাণ কোথায়? আফগানিস্তান ও ইরাক দখল তাদের আগ্রাসী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। গুয়ান্তানামো ঘাঁটিতে বীভৎস কায়দায় বন্দী নির্যাতন আর পবিত্র কুরআনের অবমাননা তাদের চরম অসহিষ্ণু মনোবৃত্তির পরিচয় বহন করে। পাকিস্তান ও ইরানের সার্বভৌমত্ব যখন মার্কিন হুমকির মুখে, এ মুহূর্তে ওআইসি এগিয়ে আসতে পারছে না আগ্রাসন প্রতিরোধের সংগ্রামে মুসলিম বিশ্বের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে। মনে রাখা দরকার, সন্ত্রাসের মূল উৎস খুঁজে বের করে তা রুখে দেয়া পথে অগ্রসর হলেই সন্ত্রাস বন্ধ হতে বাধ্য। হামলা ও আগ্রাসন সন্ত্রাসকে অনেক বৃদ্ধি করবে। বুকে বোমা বেঁধে যারা প্রাণ দেয়, তাদের মনের দুঃখের খবর রাখে কে?
ইহুদিদের সর্বশেষ ষড়যন্ত্রের শিকার ড. আফিয়া সিদ্দিকা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্নায়ুবিজ্ঞানী। অসামান্য ধীসম্পন্ন পিএইচডিধারী এ মহিলার সম্মানসূচক ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট রয়েছে প্রায় ১৪৪টি। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রন্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয় তাকে নিউরোলজি বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে। আফিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নায়ুবিজ্ঞানে পড়ালেখা ও উচ্চতর গবেষণা করেন। তিনি হাফেজে কুরআন ও আলিমা। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে পারদর্শিণী এ মহিলা অত্যন্ত দ্বীনদার ও পরহেজগার। ইসলামী আদর্শ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি রয়েছে তার সুদৃঢ় কমিটমেন্ট। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আল কায়েদার সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে ২০০৩ সালে ড. আফিয়াকে তার তিন সন্তান আহমদ, সুলায়মান ও মরিয়মসহ করাচির রাস্তা থেকে অপহরণ করে নেয়। পাকিস্তানের কোনো কারাগারে না রেখে এবং পাকিস্তানি আদালতে উপস্থাপন না করে তাকে আফগানিস্তানের বাগরাম সামরিক ঘাঁটিতে বন্দী করে রাখা হয়। এরপর চলে তার ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন। বাগরামে কুখ্যাত মার্কিন কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিরা বলেছেন, ‘নির্যাতনের সময় একজন নারী বন্দীর আর্তচিৎকার অন্য বন্দীদের সহ্য করা কষ্টকর ছিল। ওই নারীর ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে অন্য বন্দীরা অনশন পর্যন্ত করেছিলেন।
ড. আফিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তাকে গ্রেফতারের সময় তার সাথে থাকা হাতব্যাগ তল্লাশি করে মার্কিন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনাসংবলিত কাগজপত্র, গজনীর মানচিত্র, রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির নিয়ম ও রেডিওলজিক্যাল এজেন্ট সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। ব্রিটেনের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার প্রখ্যাত সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ব্রন্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডিধারী একজন পাকিস্তানি-আমেরিকান তার হাতব্যাগে করে মার্কিন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা নিয়ে ঘুরছেন- এ কথা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?’
ইহুদিরা মানবতার শত্রু, কুচক্রী, চুক্তি ভঙ্গকারী ও বিশ্বাসঘাতক। তাদের রক্তের কণায় কণায় ইসলামবিদ্বেষ।
ইহুদিরা অর্থ ও সুন্দরী ললনা দিয়ে প্রতিপক্ষকে বশে আনে। ওরা মুসলমানদের কোনো দিন আপন মনে করেনি, আগামী দিনেও করবে না। তাদের দলভুক্ত হলে ভিন্ন কথা। ‘হে মুমিনরা! ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।’ ‘আপনি (হে রাসূল!) সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রুরূপে ইহুদি ও মুশরিকদের পাবেন।’ পবিত্র কুরআনের এ পরম হুঁশিয়ারি অবজ্ঞা করলে উম্মাহর ওপর বিপদ অনিবার্য। মুসলমানদের অন্যায়প্রীতি আল্লাহ তায়ালার গজব ডেকে নিয়ে আসবে। এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানচর্চায় মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় নিতে হবে সমন্বিত ও চৌকস কর্মপ্রয়াস।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক