তাইওয়ান কি যুদ্ধ চাচ্ছে?

মো: বজলুর রশীদ | Dec 03, 2020 04:58 pm
তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী

তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী - ছবি সংগৃহীত

 

চলতি বছর ১৮ সেপ্টেম্বর তাইওয়ান প্রণালীতে ১৮টি চীনা বিমানের মহড়া চলাকালে বেশ কয়েকটি জঙ্গিবিমান ধ্বংস করে দিয়েছে তাইওয়ান। যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের মধ্যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তার নিন্দা জানিয়ে এই যুদ্ধ মহড়ার ঘোষণা দেয় চীন। চীনের বিমানগুলো তাইওয়ান প্রণালীর মিডলাইন পেরোনোর অভিযোগ আনে তাইওয়ান। চীনা জঙ্গিবিমানগুলো যে পথ দিয়ে উড়ে গেছে তার একটি মানচিত্র দেখিয়ে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রমাণ দিয়েছে, কোনো পক্ষের জঙ্গি বিমান সাধারণত এই মিডলাইন পেরোয় না। কিন্তু এবার তাইওয়ানের ভাষ্যমতে, চীন সেখানে অনেকগুলো জঙ্গিবিমান উড়িয়েছে। চীন বলেছে, এই ঘটনার জবাব দেয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্র আবার ২.৩৭ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করছে তাইওয়ানে। রকেট লঞ্চার, রিকনেসেন্স সেন্সর, আর্টিলারিও রয়েছে তালিকায়। আরো আছে ৬৪ এম ৫৭ ইউনাটারি টেকটিকাল মিসাইল, এই মিসাইল চীনা মূল ভূখন্ডে আঘাত হানতে সক্ষম। এছাড়া আছে অন্যান্য অস্ত্র। বলা হচ্ছে, আক্রমণকারী অর্ধেক সেনা, যুদ্ধের প্রথম ঘণ্টায়, এসব অস্ত্রের আঘাতে মত্যুবরণ করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ৪০ বছরে আক্রমণাত্মক অস্ত্র কেনার প্রথম ঘটনা এটি। তাইয়ানের প্রচুর কর্মকর্তা চীনের সাথে সঙ্ঘাত চান না। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ান জি ফা বলেন, ‘এসব অস্ত্র আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যুহ শক্তিশালী করবে।’

ইন্দো-প্যাসিফিক ও তাইওয়ান প্রণালীর সুরক্ষায়ও কাজে লাগবে। এদিকে চীনও ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাইওয়ানের সাথে চীনের তিনটি চুক্তি রয়েছে এর একটি অস্ত্র সংগ্রহ ও নিরাপত্তা বিষয়ক। তাইওয়ান প্রণালীর নিরাপত্তার জন্য এসব চুক্তিকে যথেষ্ট মনে করা হয় এবং এতদিন তাই হয়ে আসছে। ওয়াশিংটন অস্ত্র বিক্রি ও ঘন ঘন সফরের মাধ্যমে তাইওয়ান প্রণালীকে উতপ্ত করছে। চীন আমেরিকার কোম্পানিগুলোকে বিশেষ করে বোয়িং, লকহিড ও রিথিউনের অস্ত্র বিক্রির ওপর অবরোধ দিয়েছিল। এসব অবরোধ বেশির ভাগ ছিল কাগুজে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সেখানে এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান পাঠিয়েছে। ১৯৯০ সালে তাইওয়ান ফ্রান্স থেকে অ্যাডভান্সড মিসাইল ইন্টারফিয়ারেন্স সিস্টেম কিনেছিল। সেটি এ বছর আরো আপগ্রেড করার কাজ চলছে।

রাজধানী তাইপেতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য ফরমোসা অ্যালায়েন্স নামের একটি সংগঠন অনেক দিন ধরে বিক্ষোভ করে আসছে। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের দল ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টিকে (ডিপিপি) গণভোটের জন্য চাপ দেয়। ডিপিপি বর্তমান প্রেসিডেন্টের দল।
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, “কোনো শক্তিই চীনের ‘পুনরেকত্রীকরণ’ প্রক্রিয়া রোধ করতে পারবে না।”

পুনরেকত্রীকরণ নিশ্চিত করতে তাইওয়ানে চীনের শক্তি প্রয়োগেরও অধিকার আছে বলে মনে করে বেইজিং। তাইওয়ানকে চীন তাদের বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবেই মনে করে এবং এক্ষেত্রে তারা ‘এক দেশ, দুই নীতি’ মেনে চলে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘চীনের আদর্শ হচ্ছে কমিউনিজম এবং তাইওয়ানের গণতন্ত্র, কিভাবে দুটি একত্র হবে বোধগম্য নয়।’ ১৯৪৯ সালে মূল ভূখন্ডের সাথে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে যদিও চীন ও তাইওয়ান আলাদাভাবে শাসিত হচ্ছে। তাউওয়ান একসময় ওলন্দাজ কলোনি ছিল। তবে ১৬৮৩ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত চীনের রাজারাই শাসন করেছে তাইওয়ান। ঐতিহাসিকভাবেই তাইওয়ান মূল চীনের।
তাইওয়ানে যারা যুদ্ধের জন্য অধীর তাদের বার্তা দিতে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, ‘তাইওয়ানকে অবশ্যই মূল ভূখন্ডের সাথে মিশতে হবে। তাইওয়ানের স্বাধীনতা দিবস মৃত্যুর শেষ প্রান্তে পৌঁছেছে।’ শি বলেন, ‘একত্র হওয়ার জন্য হংকং মডেলকে তাইওয়ান অনুসরণ করতে পারে। রাজনৈতিক পার্থক্য ঘুচিয়ে আনতে, এক দেশ দুই সিস্টেম মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে।’

স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তিতে এই বার্তা পেয়ে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন সাত তাড়াতাড়ি জবাব দেন, তাইওয়ানের বেশির ভাগ জনগণ ‘এক দেশ দুই সিস্টেম’ পছন্দ করে না। সরকারের সাথে সরকারের আলাপ-আলোচনা হতে পারে। বেইজিংয়ের উচিত দ্বীপ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে সম্মান দেখানো।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us