যেভাবে উত্থান নীরার
নীরা ট্যান্ডন - ছবি সংগৃহীত
কমলা হ্যারিস আর নীরা ট্যান্ডন। একজন আমেরিকার ভাবী ভাইস প্রেসিডেন্ট, অন্যজন আমেরিকার বাজেট ব্যবস্থার দপ্তরের ডিরেক্টর হিসেবে মনোনীত। একটি বিষয়ে একই সূত্রে গাঁথা কমলা আর নীরার জীবন। কমলার মা শ্যামলা গোপালন বিবাহ বিচ্ছেদের পরও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে আমেরিকার ওপর আস্থা রেখে লড়ে গিয়েছিলেন। নীরার মা–ও তাই।
ডেলাওয়্যারের উইলমিংটনে, বাইডেন ট্রানজিশন টিমের সদর দপ্তর ভারত থেকে ‘স্বপ্নপূরণের দেশ’ আমেরিকায় তাঁর একা মায়ের সংগ্রামের কাহিনি শোনালেন বছর ৫০–এর নীরা। বললেন, ‘কমলার মা শ্যামলার মতো, আমার মা মায়ারও ভারতে জন্ম। প্রজন্মের পর প্রজন্ম, কোটি কোটি মানুষের মতো উন্নত জীবনের আশায় আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন। বস্টন শহরতলিতে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। আমার পাঁচ বছর বয়সে বাবা–মায়ের বিচ্ছেদ হয়। আমরা তখন শিশু। মা–র ভরসায় ফেলে ছেড়ে চলে যান বাবা। মায়ের তখন চাকরিও নেই!’
দু’বছর আমেরিকার জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের জোরে মেয়েদের নিয়ে টিকে ছিলেন মায়া। এরপর একটি পর্যটন সংস্থায় চাকরি পান। অতীতের সেদিনে ফিরে গিয়ে দুঁদে ডেমোক্র্যাট নেত্রী নীরা বলেন, ‘মা–র কাছে একটা উপায় ছিল। ভারতে ফিরে যাওয়া। তবে ভারতে তখন বিবাহবিচ্ছেদকে ভালো চোখে দেখা হতো না। তাই আমেরিকায় থেকে লড়ে গিয়েছেন মা। সঙ্কটের সেই সময় ছিল। খাবারের কুপন জোগাড় করে কোনোমতে খেতাম। বাড়ি ভাড়া দিতাম ভাউচার জোগাড় করে। আমেরিকার সামাজিক নিরাপত্তাই আমাদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। ট্রাভেল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে ম্যাসচুসেটের বেডফোর্ডে বাড়ি কেনেন মা। আমাদের কলেজে পড়ান।’
আজ নীরা যে কৃতিত্বের অধিকারী, তার জন্য তার মায়ের মনের জোরের পাশাপাশি আমেরিকার মানবিকতারও ভূমিকা আছে। জানিয়ে নীরা বলেছেন, ‘মা–র নাছোড় মানসিকতার পাশাপাশি এই দেশেরও ধন্যবাদ প্রাপ্য। আমেরিকা আমার মা–র স্বপ্পের শরিক হয়েছেন। আমেরিকার সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য, বাজেটের বরাদ্দের জন্য, আমি আজ এখানে। এদেশের সরকার আমার মা–র আত্মসম্মান দেখে, তাকে সুযোগ করে দিয়েছে।’
এর আগে আমেরিকার বাজেট ব্যবস্থার দায়িত্ব পাননি কোনো অশ্বেতাঙ্গ। অথবা মহিলা। নীরা ট্যান্ডন একইসঙ্গে দুটি নজির গড়লেন। আমেরিকার বিশিষ্ট সংখ্যালঘু নেতা চার শুমার জানিয়েছেন, নীরা অত্যন্ত যোগ্য প্রার্থী।
ভারতীয়–মার্কিনিদের সংগঠন ‘ইমপ্যাক্ট’–এর একজিকিউটিভ ডিরেক্টর নীল মাখিজার বক্তব্য নীরা আমেরিকার স্বপ্ন কতদূর শক্তিশালী তা খুব করে বোঝেন। অভিবাসী ভারতীয় পরিবারের মেয়ে নীরা সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছলেও নিজের শিকড় ভোলেননি। মার্কিন শ্রমজীবীদের সঙ্ঘর্ষে শামিল হয়েছেন বারবার। মাখিজার কথায়, ‘মার্কিনি স্বপ্নকে বাস্তব করে দেখিয়েছেন নীরা। তাকে মনোনীত করে এক যোগ্য শরিক বেছেছেন
ভাবী প্রেসিডেন্ট।’
সূত্র : আজকাল