মডার্নার টিকা নিয়ে নানা শঙ্কা?
করোনার টিকা - ছবি সংগৃহীত
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় মার্কিন সংস্থা মডার্না তাদের টিকার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেছে। সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ডিসেম্বরের শেষ দিকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তারা দু’কোটি ডোজ সরবরাহ করতে পারবে। জরুরিভিত্তিক ছাড়পত্রের জন্য মডার্না তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইউএসএফডিএ)–এর কাছে জমা দিচ্ছে। একই সঙ্গে ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ)–র কাছেও তারা ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে বলে মডার্নার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ব্রিটেনের নোডাল এজেন্সির কাছেও তারা তাদের রিপোর্ট জমা দিচ্ছে।
মডার্নার দাবি, চূড়ান্ত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে তাদের তৈরি টিকার ক্ষমতা ৯৪ শতাংশ কার্যকর। তৃতীয় ও চূড়ান্ত দফায় মডার্না ৩০ হাজার মানুষের ওপরে পরীক্ষা চালিয়েছে। কারো শরীরেই মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, মডার্না আগেই জানিয়েছিল তাদের টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়বে ৩২ থেকে ৩৭ ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রতি ডোজের দাম ২৭২২ থেকে ৩,১৪৭ টাকা। তবে উপমহাদেশে মডার্নার এই টিকা আসার সম্ভাবনা এখনই নেই। বিশ্বের বহু দেশই মডার্নার টিকার জন্য আগাম বুকিং করেছে। তবে তারা জানিয়েছে, প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন মেটানো হবে। তারপরে ব্রিটেন ও ইউরোপের অন্য দেশকে সরবরাহ করা হবে। ব্রিটেন ইতিমধ্যেই ৭০ লাখ মডার্না–টিকার বরাত দিয়েছে। যদিও মার্চের আগে তা তারা হাতে পাবে না বলেই মডার্নার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। মডার্না সোমবার জানিয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে তারা বিশ্বজুড়ে ৫০ থেকে ১০০ কোটি টিকা সরবরাহ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ফাইজার ও অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রোজেনেকা ছাড়পত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট নোডাল এজেন্সিগুলোর কাছে তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষার রিপোর্টসহ আবেদন জমা দিয়েছে। অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রোজেনেকার তৈরি টিকার কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ। তবে অতিমারীতে এই কার্যকারিতা যথেষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ যে সব দেশে –৭০ থেকে –৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ক্ষমতা সম্পন্ন আল্ট্রাকোল্ড ফ্রিজার নেই, সেই সব দেশের ভরসা এই টিকাই। কারণ ফাইজারের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আল্ট্রাকোল্ড ফ্রিজার আবশ্যিক হলেও অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রোজেনেকার সেই প্রয়োজন নেই। দামও অনেকটাই কম। সোমবার মডার্না জানিয়েছে, তাদের টিকাও ফ্রিজার থেকে বের করে সাধারণ ফ্রিজে এক মাস পর্যন্ত রাখা যাবে।
এদিকে, সোমবারই মার্কিন ফেডেরাল ব্যুরোর গোয়েন্দারা বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কারণ তাদের আশঙ্কা, টিকা বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সক্রিয় হয়ে উঠবে অপরাধী চক্র। সক্রিয় হবে বিভিন্ন জাল ওষুধ সংস্থা। জাল টিকা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণেই যারা টিকা দেবেন, সেই স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। জাল ও আসল টিকার ফারাক তাদের ভালোভাবে চেনাতে হবে।
ইতিমধ্যেই ফেডেরাল ব্যুরো কয়েক লাখ ওয়েবসাইটে নজরদারি শুরু করেছে। এই ওয়েবসাইটগুলো থেকে করোনা প্রতিরোধের নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। এই বছরের গোড়ায় যখন করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ল, সেই সময় মাস্ক, গ্লাভস ও অন্যান্য প্রতিরোধী সরঞ্জামের চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। ওই সময়েও এই ধরনের নানা ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে এই সব সরঞ্জাম সরবরাহ করার নামে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঠকানো হয়। আগাম ডলার দিয়েও বরাত দেওয়া জিনিস তাদের হাতে কখনোই পৌঁছয়নি। টিকা বের হওয়ার পর যাতে সাধারণ মানুষ এমন প্রতারকদের হাতে না পড়েন তার জন্য ফেডেরাল ব্যুরো ছাড়াও বিভিন্ন মার্কিন নজরদারি সংস্থা উঠেপড়ে লেগেছে।
ফেডেরাল গোয়েন্দাদের বক্তব্য, টিকা তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা যেমন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, একই রকম ভাবে সচেষ্ট অপরাধী চক্রও। টিকার নামে মানুষকে ঠকানোর নানা পরিকল্পনা নিয়ে তারাও তৈরি হচ্ছে। এই ঘটনা আগাম আঁচ করেই মডার্না, ফাইজারের সঙ্গে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেটররা প্রথম থেকে যুক্ত। সেখানেও কড়া নজরদারি চলছে। এরপর বন্টন ও চিকিৎসার প্রক্রিয়াতেও চলবে নজরদারি।
সূত্র : আজকাল