করোনাভাইরাস : ভারতে তৈরী টিকায় কি সমস্যা হয়?
করোনাভাইরাস টিকা - ছবি : সংগৃহীত
ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউটের পরিচালিত কোভিড ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারী এক ব্যক্তি ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানোর পর ওই কোম্পানি তার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করার হুমকি দিয়েছে।
যে ব্যক্তি সিরাম ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে ওই আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন, তিনি দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ের বাসিন্দা এবং গত ১ অক্টোবর তার শরীরে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে দাবি করেছেন।
তিনি যে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে কোভিডের ওই টিকা সম্পূর্ণ ''নিরাপদ'' বলে তাকে কোম্পানির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। ফলে তিনি ধরেই নিয়েছিলেন এই টিকার তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
চল্লিশ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির স্ত্রী 'দ্য হিন্দু' সংবাদপত্রকে বলেছেন, তার স্বামী ''মানুষের সেবা করার ভাবনা'' থেকেই ওই ট্রায়ালে অংশ নেন।
কিন্তু এখন তারা সিরাম ইনস্টিটিউটের ওই টিকার ট্রায়াল ও উৎপাদন বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন।
তার আইনজীবী রাজারাম জানান, টিকা প্রয়োগের পর থেকেই ওই ব্যক্তির সাঙ্ঘাতিক মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়, তিনি তখন কোনো প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারছিলেন না।
'অ্যাকিউট নিউরো এনসেফ্যালোপ্যাথি' রোগেও তিনি আক্রান্ত হন বলেও জানিয়েছেন ওই আইনজীবী।
এদিকে এই আইনি নোটিশের খবর সংবাদমাধ্যমে আসতেই রোববার রাতে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ওই ব্যক্তির দাবি ''সম্পূর্ণ দুরভিসন্ধিমূলক'' এবং তার দেয়া তথ্যও পুরোপুরি ভ্রান্ত।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি রুপিরও বেশি ক্ষতিপূরণ দাবি করে পাল্টা মামলা করা হবে।
ইতিমধ্যে ওই ব্যক্তির আইনি নোটিশের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়ার কাছেও, তারা বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে তদন্তও শুরু করেছে।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও ওষুধ-নির্মাতা সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলে যে কোভিড ভ্যাকসিনটি বানিয়েছে সেটির শিল্প-উৎপাদনের জন্য তারা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।
পুনে-ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি সংখ্যা বা ডোজের হিসেবে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী সংস্থা এবং তারা এখন অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত সেই কোভিড ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের (ফেজ থ্রি) ট্রায়াল পরিচালনা করছে।
এই ট্রায়ালের অংশ হিসেবেই অভিযোগকারী ওই ব্যক্তিকে চেন্নাইয়ের শ্রীরামচন্দ্র ইনস্টিটিউটে গত মাসে ওই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক শট দেয়া হয়েছিল।
টিকা প্রয়োগের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসাও হয় ওই প্রতিষ্ঠানেই। এখন তিনি বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানানোর পর ওই ইনস্টিটিউটও বিষয়টি নিয়ে নিজস্ব তদন্ত করেছে।
ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রধান তদন্তকারী ড: এস আর রামকৃষ্ণন জানাচ্ছেন, "হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর ওই ব্যক্তি খুব দ্রুতই সেরে ওঠেন। তার চিকিৎসার সব খরচও আমরাই বহন করেছি।"
"তিনি এখানে ফলো আপ চিকিৎসাও করিয়ে গেছেন এবং এবং এখন ঠিক আছেন বলেই আমরা জানি", বিবিসি বাংলাকে বলেছেন ওই সিনিয়র চিকিৎসক।
কিন্তু অভিযোগপত্রে ওই ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তার শারীরিক অবস্থা এখনো স্থিতিশীল নয়।
তিনি ''মুড সুইং''য়ে ভুগছেন, দৈনন্দিন সহজ রুটিন কাজকর্ম করতেও তার অসুবিধা হচ্ছে বলে আইনি নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতে অতীতেও বহু টিকার ট্রায়াল সম্পাদিত হয়েছে, তবে তাকে কেন্দ্র করে কোনো অংশগ্রহণকারী ও টিকা-নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এই মাপের আইনি লড়াইয়ের ঘটনা নজিরবিহীন।
তবে এই অভিযোগের জেরে ভারতের ড্রাগস কন্ট্রোলার চলমান ট্রায়ালে এখনও কোনও স্থগিতাদেশ জারি করেননি। কিন্তু ট্রায়ালে এর কোনো প্রভাব পড়ে কি না, সে দিকে সংশ্লিষ্ট সব মহলই সতর্ক নজর রাখছে।
বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসও কোভিডের টিকা কেনার জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গেই সমঝোতা করেছে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই এখানে তাদের স্বার্থেও জড়িত আছে।
সূত্র : বিবিসি