কেন বিধ্বস্ত হচ্ছে ভারতীয় মিগ০২৯কে
মিগ০২৯কে - ছবি : সংগৃহীত
ভারতীয় নৌবাহিনীর বৃহস্পতিবারের মিগ-২৯কে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি আবারো রুশ জঙ্গিবিমানটিকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। আর এই বিমানের ভারত ও রাশিয়া উভয় দেশেই গোলযোগপূর্ণ ইতিহাস রয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর মিগ-২৯কে বিমানটি বিমানবাহীর রণতরী আইএনএস বিক্রমাদিত্য থেকে উড্ডয়ন করেছিল। বৃহস্পতিবর একজন পাইলটকে উদ্ধার করা গেলেও কমান্ডার নিশান্ত সিং, যোগ্য ফ্লায়িং ইনস্ট্রাকটর, এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
ভারতীয় নৌবাহিনী ইতোমধ্যেই বিমানটি বিধ্বস্তের কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছে। গত নভেম্বর থেকে এটি তৃতীয় বিমান দুর্ঘটনা। ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, দুর্ঘটনার আগে পাইলটের কাছ থেকে কোনো সতর্কতা সঙ্কেত আসেনি।
ভারত ৪৫টি মিগ-২৯কে জঙ্গিবিমান আমদানি করেছিল রাশিয়ার কাছ থেকে। কিন্তু তারা পরিচালনা করে দুই ডজনেরও কম। বাকিগুলো যুদ্ধকালীন মজুত বা অন্যান্য আকারে রয়েছে।
মিগের জটিল অতীত
চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি মিগ-২৯কে গোয়ায় পাখির আঘাতে বিধ্বস্ত হয়। পাইলট অবশ্য নিরাপদে বের হতে সক্ষম হয়েছিলেন।
গত বছরের ১৬ নভেম্বর একটি মিগ-২৯ কে প্রশিক্ষণ বিমান দক্ষিণ গোয়ার ভার্না গ্রামের বাইরে বিধ্বস্ত হয়। বিমানের দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে পড়েছিল। ২০১৮ সালে আইএনএস হাসনা থেকে উড্ডয়নের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরেকটি বিমান।
তবে সমস্যা কেবল ভারতে নয়। ২০১৬ সালে একটি রুশ মিগ-২৯ কে জঙ্গিবিমান ভূমধ্যসাগরে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি তখন অ্যাডমিরাল কুজনেটসব বিমানবাহী রণতরীতে অবতরণের চেষ্টা করছিল। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল বলে জানা গেছে।
সিএজিতে ত্রুটি নির্দেশ
কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়ার ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে মিগ-২৯কে বিমানের বেশ কিছু ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিমান কেনার জন্য ২০১০ সালে দুই বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছিল।
বিমানের ইঞ্জিন নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে মোট ৬৫টি ইঞ্জিন (২১টি বিমানে ৪২টি ও ২৩টি স্পেয়ার) সংগ্রহ করা হয়। অবশ্য ২০১০ সালেই দেখা যায়, ৪০টি ইঞ্জিনে (৬৫টি ইঞ্জিনের ৬২ ভাগ) নানা ধরনের ত্রুটি দেখা যায়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব ত্রুটি নিরাত্তার ওপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
নৌবাহিনী বলল সমস্যার সমাধান হয়েছে, কার্যত তা রয়েই গেছে
ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল ল্যানবা ২০১৮ বলেন যে মিগ২৯কে বহরের রক্ষণাবেক্ষণ ও খুচরা যন্ত্রণাংশ প্রাপ্যতা নিয়ে যেসব সমস্যা দেখা গিয়েছিল, সেগুলোর সুরাহা হয়েছে।
তবে নৌবাহিনী সূত্রগুলো জানায়, অনেক সমস্যা তখনো রয়ে গিয়েছিল। ইঞ্জিনে লবণ ও বালি প্রবেশ করায় ওইসব সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত জানা যাবে না।
উল্লেখ্য, সদ্য সমাপ্ত কোয়াড দেশগুলোর (ভারত, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া) মালাবার মহড়ায় অংশ নিয়েছিল আইএনএস বিক্রমাদিত্য।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে রণতরীটির ক্যাপ্টেন শর্মা বলেন, অনুসন্ধানেই কারণ বের হয়ে আসবে।
সূত্র : দি প্রিন্ট