কোহলিকে সরিয়ে দেয়ার সময় এসে গেছে!
বিরাট কোহলি - ছবি : সংগৃহীত
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব বদলের সময় কি এসে গেছে? অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ হারের পর এই প্রশ্নটা আরো জোরালো হচ্ছে। রোহিত শর্মার ক্যাপ্টেন্সিতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স পঞ্চমবার আইপিএল জেতার পরেই অনেকে দাবি তুলছিলেন, রোহিতকে ভারতের সীমিত ওভারের দলের অধিনায়ক করা হোক। টেস্টের দায়িত্ব থাক কোহলির হাতেই। সনাতনী রীতিতে বিশ্বাসী বোর্ড কর্তারা আবার এই স্প্লিট ক্যাপ্টেন্সির তত্ত্বকে সমর্থন করেন না। মান্ধাতা আমলের চিন্তাভাবনা নিয়ে বসে থাকলে ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে হবে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো প্রথম সারির দলগুলো যদি এই ফর্মুলা প্রয়োগে সাফল্য পায়, তাহলে সেই পথে ভারত হাঁটবে না কেন? পরিবর্তন সব সময় ভালো। আর সেটা যদি ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে হয়, তাহলে তাকে স্বাগত জানানোই উচিত। রোহিত শর্মা অতীতে বিরাট কোহলির অবর্তমানে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাফল্যও পেয়েছেন যথেষ্ট। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি রোহিতের নেতৃত্বগুণ আইপিএলের মঞ্চে সুপ্রতিষ্ঠিত। যেখানে তার সাফল্যের ঝলকানিতে ঢাকা পড়েছে ধোনির কীর্তিও। তাই বিরাট যদি সীমিত ওভারের ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে শুধু ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হন, তাতে তাঁর নিজের এবং দলের, উভয়েরই মঙ্গল।
একই মাঠ। একই প্রতিপক্ষ। ফলও একই। গত ম্যাচে ভারত হেরেছিল ৬৬ রানে। রোববার দ্বিতীয় ম্যাচেও ফিনচ বাহিনী জিতল ৫১ রানে। তৃতীয় ম্যাচের আর কোনও গুরুত্ব থাকল না। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেটে ৩৮৯ রান তোলার পরেই কোমায় চলে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। সেখান থেকে এই ম্যাচ জিতে রেকর্ড গড়তে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্বশালী হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু শুরুটা ভালো করেও মায়াঙ্ক আগরওয়াল ২৮ রানে কামিন্সের বলে আউট হন। শিখর ধাওয়ানকে ৩০ রানে ফেরান হ্যাজলউড। জোড়া ধাক্কার মুখে শ্রেয়াস আয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ৯৩ রান যোগ করেন ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি। কিন্তু শ্রেয়াস (৩৮) উইকেটে সেট হয়েও যেভাবে স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন, তা তাঁর নামের সঙ্গে বেমানান।
নায়ক হয়ে উঠতে পারতেন বিরাট কোহলি। সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল তার সামনে। প্রথম দিকের জড়তা কাটিয়ে ভিকে যখন পুরানো মেজাজে ফিরছিলেন, তখন ফিনচের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা যাচ্ছিল। উল্টো দিকে স্টিভ স্মিথ যখন ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে পথ দেখাচ্ছেন, তখন ভারতীয় সমর্থকরা বিরাটের ব্যাটে বড় রান আশা করতেই পারেন। কিন্তু বিরাট গত ম্যাচের মতো একই ভুল করে আউট হলেন হ্যাজউডের রাইজিং ডেলিভারিতে। প্রশংসা করতে হবে মোজেস এনরিকের। মিড উইকেটে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে অনবদ্য প্রয়াসে তিনি কোহলির ক্যাচটি ধরেন। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। কোহলি ৮৯ রানে মাঠ ছাড়ার পরেই ভারতের জয়ের আশা ক্ষীণ হয়ে যায়। তবুও লোকেশ রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়া জুটি কিছুটা লড়াই চালান। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার মতো সাহসী মনোভাব তারা দেখাতে পারেননি। লোকেশ ৭৬ রানে জাম্পার বলে আউট হন। এরপর ৪৭তম ওভারে প্যাট কামিন্স পর পর দু’টি ডেলিভারিতে জাদেজা (২৪) ও হার্দিকের (২৮) উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করে দেন। কুঁতিয়ে কুঁতিয়ে ভারত শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৩৩৮ রান তোলে।
ভারতের এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ- দুর্বল বোলিং। যা নাকি কোচ রবি শাস্ত্রীর গড়া ভারতের সর্বকালের সেরা বোলিং ইউনিট। পাওয়ার প্লে’তে ভারতীয় পেসারদের বেহাল অবস্থার ছবি ধরা পড়বে এই ছোট্ট পরিসংখ্যানে। এবছর ৮টি ওয়ান ডে খেলেছে টিম ইন্ডিয়া। পাওয়ার প্লে’তে ভারতীয় বোলাররা দিয়েছেন ৪৭৬ রান। পেয়েছেন মাত্র ৩টি উইকেট। গড় ১৫৮.৬৬। ইকোনমি রেট ৫.৯৫। এমন ছন্নছাড়া বোলিং নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে বশ মানানো যে সম্ভব নয়, সেটা নিশ্চিত বুঝে গিয়েছে ভারতীয় সমর্থকরা।
অ্যারন ফিনচ ও ডেভিড ওয়ার্নার শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। তা সত্ত্বেও বিরাট কেন বুমরাহর মতো স্ট্রাইক বোলারকে দু’ওভার হাত ঘুরিয়ে কেন বসিয়ে দিলেন, সেটা বোধগম্য হয়নি। সাইনির প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফর। তিনি কখনও বুমরাহর বিকল্প হতে পারেন না। কথায় বলে বিনাশ কালে বুদ্ধি নাশ। বিরাটের অবস্থা সেরকই। সাইনি, চাহালদের উপর যেভাবে তিনি আস্থা দেখালেন, তাতে মনে হচ্ছিল আরসিবি’র অধিনায়কত্ব থেকে এখনো বেরোতে পারেননি। রবীন্দ্র জাদেজার মতো ইউটিলিটি ক্রিকেটার এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে নেই। নতুন বলেও তিনি টার্ন করাতে পারেন। ওয়ার্নার, ফিনচ জুটি যখন জমাট বাঁধছে, তখন জাড্ডুকে কাজে না লাগিয়ে তিনি কেন চাহাল প্রীতি দেখালেন?
সূত্র : বর্তমান