কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি?
কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি? - ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশে শীতের শুরুতেই করোনায় মৃত্যুর হার বাড়ছে৷ হিসাব অনুযায়ী, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গত দুই সপ্তাহে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে৷
নতুন করে বাংলাদেশে লকডাউন আরোপের কোনো ইঙ্গিত নেই৷ জানা গেছে, সরকার এবার লকডাউন ঘোষণার কোনো পরিকল্পনা করছে না৷ তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আরো কড়া নির্দেশনা দিতে পারে৷ বিশেষ করে ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে এখন যে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে তাতে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে৷
তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিজ্ঞতা হলো, এখনো বাইরে বের হওয়া লোকজনের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ মাস্ক ব্যবহার করেন না৷ জরিমানা ও মাস্ক বিতরণ করেও তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না৷ আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া এখন সব জায়গায়তেই স্বাভাবিক কাজকর্ম চলছে৷ তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ আছে৷ আর সময়মত করোনা ভ্যাকসিন পাওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার৷
বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ৷ এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ দেশে করোনায় এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিলো ৩০ জুন৷ সেদিন মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৪৷ এরপর সর্বনিম্ন ৭ নভেম্বর, ১৩ জন৷
তবে ৭ নভেম্বরের পর থেকে করোনায় মৃতের সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে৷ গত ১৭ নভেম্বর করোনায় ৩৯ জনের মৃত্যু হয়, যা ৭ নভেম্বর পরবর্তী সময়ে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড৷আর সর্বশেষ ২৯ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ২৯ জন৷ নতুন সনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৭৮৮ জন৷
যদি রোববার সপ্তাহের শুরু ধরা হয় তাহলে ২২ থেকে ২৮ নভেম্বর দেশে করোনা সংক্রমণের ৪৮তম সপ্তাহ চলছে৷ এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ২৩০ জনের৷ এর আগের ৪৭তম সপ্তাহে অর্থাৎ ১৫ থেকে ২১ নভেম্বর সময়ে করোনায় ১৭৭ জন মারা যায়৷ তার আগে ৪৬তম সপ্তাহে অর্থাৎ ৮ থেকে ১৪ নভেম্বর মৃত্যু হয় ১২৪ জনের৷
এই হিসাবে ৪৬তম সপ্তাহের তুলনায় ৪৮তম সপ্তাহে ১০৬জন বেশি মানুষ মারা গেছেন৷ আর ৪৭তম সপ্তাহের তুলনায় ৪৮তম সপ্তাহে ৫৩ জন বেশি মানুষ মারা গেছেন৷
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মারা গেছেন ছয় হাজার ৬০৯ জন৷ আক্রান্ত হয়েছে চার লাখ ৬২ হাজার ৪০৭ জন৷
করোনা নিয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি ও পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘করোনায় মৃত্যু বাড়লেও সংক্রমণ শতকরা ১৩ ভাগে স্থির আছে৷ মৃত্যু বাড়ার কারণ হলো করোনা রোগীর চিকিৎসা এখনো সহজলভ্য হয়নি৷ আক্রান্তরা হাসাপতালে ঠিকমতো চিকিৎসা পান না৷ ঢাকার বাইরে চিকিৎসাব্যবস্থা এবং আইসিইউ না থাকায় রোগী মারা যাচ্ছেন৷ তারা ঢাকায় এসেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না৷’’
তিনি জানান, এবার পরামর্শক কমিটি লকডাউন আরোপ না করার পক্ষে মত দিয়েছে৷ কারণ, একটি দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল না হলে লকডাউনে অনেকেই আর্থিক ও খাদ্য সংকটে পড়ে৷ লকডাউনের পরিবর্তে তাই মাস্কের ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব যাতে মানুষ মেনে চলে সে ব্যাপারে আরো কাঠের হওয়ার জন্য বলা হয়েছে৷ আর লকডাউন আরোপ করা হয় সংক্রমণ ঠেকাতে৷ লকডাউন মৃত্যু কমানোর জন্য নয়৷
তবে তিনি মনে করেন, দেশের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে দায়িত্বহীন কথার কারণে মানুষের মধ্যে ঢিলেমি তৈরি হয়েছে৷ এখনো কেউ কেউ বলছেন ভ্যাকসিন আসার আগ পর্যন্ত মাস্ক পরুন৷ তাহলে ভ্যাকসিন আসার পর কি মাস্ক পরতে হবে না?
বাংলাদেশ এরইমধ্যে ভারতের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে একটি চুক্তি করেছে৷ ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট অক্সফোর্ডের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করবে৷ আর গ্যাভি থেকে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ৷
তবে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিন পাওয়া গেলেই তা এনে লাভ হবে না৷ বিবেচনায় রাখতে হবে দাম এবং সংরক্ষণের তাপমাত্রা৷ সরকার বলছে, নাগরিকদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে বিনামূল্যে৷ আর এজন্য একটা গাইডলাইনও তৈরি করা হয়েছে৷
কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘যেসব বিষয় প্রধানমন্ত্রী অনেক আগেই নিশ্চিত করতে বলেছেন তা এখনো হয়নি৷ সরকারি হাসপাতালে হাই ফ্লো অক্সিজেনজোন হয়নি৷ আইসিইউর সংখ্যা বাড়েনি৷ ফলে চিকিৎসাব্যবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি৷ আর মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারে সচেতনাতামূলক কর্মসূচিও নেয়া হয়নি৷ যারা গরিব তাদের বিনামূলে কাপড়ের মাস্ক বিতরণ করা দরকার৷ যাতে তারা এটি ধুয়ে একাধিকবার ব্যবহার করতে পারেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘করোনা পরীক্ষা না বাড়িয়ে তা আরো কমানো হয়েছে৷ ফলে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কখনোই সঠিক ধারণা পাওয়া যায়নি৷''
তার অভিযোগ, যে চিকিৎসকরা জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন তাদের প্রণোদনা দেয়া হয়নি৷ যারা মারা গেছেন তাদের পরিবার এখনো ক্ষতিপূরণ পায়নি৷ করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিতদের আবাসিক সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ ফলে চিকিৎকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে