এবার শ্রীলঙ্কা-মালদ্বীপের দোভালের মিশন
অজিত দোভাল - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ট (এনএস) অজিত দোভাল ২৭-২৮ নভেম্বর কলম্বো সফর করছেন শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় ৪র্থ এনএসএ পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নিতে।ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই সম্মেলনে ভারত, শ্রীলঙ্কা ছাড়াও মালদ্বীপ অংশ নেবে। ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে দোভালের সফরটির কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে এ ধরনের সভায় মরিশাস ও শেশলসও অংশ নিয়েছিল। ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তায় সহযোগিতা নিয়ে এতে আলোচনা হবে।প্রথম এ ধরনের ত্রিদেশীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১১ সালে।
দোভাল দ্বিতীয়বারের মতো শ্রীলঙ্কা সফর করেছিলেন। গত নভেম্বরে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গোতাবায়া রাজাপাকসা জয়ী হওয়ার পর জানুয়ারিতে দেশটি সফরে গিয়েছিলেন দোভাল।
দুটি কারণে এনএসএ-পর্যায়ের সম্মেলন তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রথমত, এতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভূকৌশলগত অবস্থানে থাকা মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা অংশ নিচ্ছ। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সলিহ এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ভারতের বৃহত্তর ভূমিকাকে উৎসাহিতভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে গত বছর পর্যন্ত বিষয়টি এমন ছিল না। গোতাবায়া রাজাপাকসা ক্ষমতায় আসার ফলে দেশটি নিরাপত্তাগত দিক থেকে মৌখিকভাবে ইন্ডিয়া ফার্স্ট নীতির কথা বললেও তারা বরং অর্থনৈতিক দিক থেকে চীনের সাথে বেশি সম্পৃক্ত।
মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা এখন এই সম্মেলনে কিভাবে সাড়া দেয় তা দেখার বিষয়।
সলিহ সরকার ক্রমবর্ধমান হারে চীনের কাছ থেকে সরে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠছে। চলতি বছরের আগস্টে ভারত ও মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি সভার পর ভারত ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা ছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজের কথা ঘোষণা করে। এতে বোঝা যাচ্ছে, সলিহর পূর্বসূরী আবদুল্লাহ ইয়ামিন চীনের সাথে যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছিলেন, তা থেকে মালদ্বীপ সরে যাচ্ছে।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসার অধীনে শ্রীলঙ্কা বিপরীত কাজ করছে। হিন্দু পত্রিকায় গত মাসে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ইয়াং জিইচির নেতৃত্বাধীন চীনা প্রতিনিধিদলের সফরের সময় গোতাবায়া চীন-শ্রীলঙ্কা মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা আবার শুরু করতে রাজি হয়েছেন গোতাবায়া। তাছাড়া হাম্বানতোতা শিল্প জোন ও কলম্বোর পোর্ট সিটি সম্পূর্ণ করতেই তিনি সম্মতি দিয়েছেন। দুই দেশ ২০১৩ সালে এফটিএ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। একই সময় মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কোরপোরেশনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র্রের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কা মঞ্জুরিও প্রত্যাখ্যান করে।
কলম্বোতে ত্রিদেশীয় এনএএ পর্যায়ের সম্মেলনের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এতে ভারতের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের উপস্থিতি কিভাবে দেখা হবে। আগেরবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর মহিন্দা রাজাপাকসা (এখন প্রধানমন্ত্রী) এর জন্য সরাসরি ভারতীয় গোয়েন্দাদের দায়ী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত আমাকে নামিয়ে দিতে তাদের দূতাবাসগুলোকে ব্যবহার করেছে।
রাজাপাকসা ২০১৫ সালে সাউথ চায়না মনিং পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছিলেন। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, ২০১৭ সালে দোভালের দিকেই সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করেছিলেন গোতাবায়া।দোভালই মৈত্রিপালা সিরিসেনাকে সামনে নিয়ে এসেছিলেন। আবার ২০১৮ সালে আবদুল্লাহ ইয়ামিনের রাজনৈতিক পতনের জন্যও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দায়ী থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের মহিন্দা রাজাপাকসা ও ২০১৮ সালে ইয়ামিনির পতনের জন্য একই ব্যক্তি দায়ী। তিনি হলেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর সিনিয়র অফিসার কে ইলাঙ্গো।
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির তরল বিশ্বে ছোট ছোট দেশের নেতাদের রাজনৈতিক উত্থান-পতন অনেক সময়ই অপেক্ষাকৃত বড় শক্তিগুলো তাদের সম্পর্কে কী ভাবে তার ওপর নির্ধারিত হয়। এসব অনৈতিক তৎপরতা হয়তো সবার সাথে সংশ্লিষ্ট রাস্তায় ছোট খাট ঝাঁকি দিতে পারে।
দোভালের ক্ষেত্রে বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই প্রযোজ্য। মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কার সাথে তার আলোচনাকে প্রভাবিত করতে পারে।
সূত্র : দি ডিপ্লোম্যাট