করোনাভাইরাস নিয়ে দারুণ খুশির খবর দিলেন বিজ্ঞানীরা
করোনাভাইরাস - ছবি সংগৃহীত
দিনে দিনে নিজেকে বদলে ফেলতে পারে নোভেল করোনাভাইরাস। তবে তাতে কোভিড-১৯ ভাইরাস বেশি ছড়ায় না। সম্প্রতি গবেষণা থেকে এমনই স্বস্তিকর তথ্য জানিয়েছেন একদল বিজ্ঞানী। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই রিপোর্ট। সমীক্ষা চালানো হয়েছিল বিশ্বের ৯৯টি দেশের কোভিড সংক্রমিত ৪৬ হাজার ৭২৩ জনের ভাইরাসের জিন নিয়ে। এই সব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত।
ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের গবেষক লুসি ভ্যান ডর্প বলেন, ‘সার্স কোভ ২ ভাইরাস নিজেকে বদলে ফেললে সংক্রমণ বা উপসর্গের তীব্রতা বাড়ে কিনা, এটা বোঝার জন্য দরকার ছিল বিপুল তথ্য। অতিমারীর গোড়ার পর্বেই আমরা এটা বুঝতে পেরেছিলাম। সৌভাগ্যবশত আমরা গবেষণায় দেখতে পেয়েছি যে ভাইরাস নিজেকে বদলে ফেললেও কোভিড দ্রুত ছড়ায় না। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাস কীভাবে নিজেকে বদলাচ্ছে তার ওপর নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে টিকাকরণ চালু হয়ে যাওয়ার পর এই কাজ আরও বেশি করে করা দরকার।’
গবেষকদের মতে, সার্স কোভ ২ ভাইরাস তিন কারণে নিজেকে বদলে ফেলে। আগের ভাইরাসকে নকল করে বেড়ে ওঠার সময় ভুল করে নতুন চেহারা নিতে পারে, একই কোষে সংক্রমিত অন্য কোষের সঙ্গে ক্রিয়া– প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বদলে যেতে পারে কিংবা সংক্রমিত ব্যক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতাই ভাইরাসকে বদলে ফেলায় প্ররোচিত করতে পারে। এই সমীক্ষায় বিজ্ঞানীরা সার্স কোভ ২ ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যে ১২ হাজার ৭০৬টি বদলকে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে ৩৯৮টি বদল বারে বারে ও নিজের ইচ্ছেমতো ঘটেছে। এরপর ৩৯৮টির মধ্যে থেকে ১৮৫টিকে আলাদা করেন গবেষকরা। কারণ অতিমারীর সময় সেগুলি নিজে নিজে তিন বার নিজেদের বদলে ফেলেছে। তবে সাধারণ বৈশিষ্ট্য বদলানোয় ভাইরাস বেশি ছড়াচ্ছে, এমন প্রমাণ মেলেনি।
এক সময়ে মনে করা হত, ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন ডি৬১৪জি–তে বদল ঘটলে তা বেশি করে সংক্রমণ ছড়ায়। এই গবেষণায় তার প্রমাণ মেলেনি। ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের আরেক বিজ্ঞানী ফ্রাঁসোয়া ব্যালো জানিয়েছেন, ‘আগে আমাদের মনে হয়েছিল সার্স কোভ ২ ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢুকেছে ২০১৯–এর অক্টোবর বা নভেম্বরে। তবে প্রথম জেনোম আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি ডিসেম্বরের শেষে। এই সময়ের মধ্যে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার মতো ভাইরাসের প্রয়োজনীয় বদল ঘটে গেছে এবং তা একটা নির্দিষ্ট চেহারা নিয়ে ফেলেছে।’
গবেষক লুসি ভ্যান ডর্পের মতে, যখন এটাকে নোভেল ভাইরাস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, তত দিনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল এবং মানবদেহে বাসা বাঁধার জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠেছিল। গবেষকদের বিশ্বাস, যদি এখনই টিকা চালু করা হয়, তাহলে সার্স কোভ ২ ভাইরাসের ওপর নতুন চাপ তৈরি হবে। এবং তখনও ভাইরাস নিজেকে বদলে ফেলবে এবং পরিবর্তিত ভাইরাসকে মানব শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা চিহ্নিত না–ও করতে পারে। এর ফলে ভাইরাসের এমন বদল ঘটতে পারে যা টিকাকে ফাঁকি দেবে। তবে ভাইরাসের সেই পরিবর্তিত চেহারাটাকেও যে চিহ্নিত করে ফেলা যাবে সে বিষয়েও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত। আর সময়মতো টিকাকেও পরিমার্জিত ও উন্নত করে ফেলা যাবে।
সূত্র : আজকাল