পাকিস্তান-চীন-ইরান অক্ষ : টার্গেট ভারত-যুক্তরাষ্ট্র জোট!

ইজহার হোসেন | Nov 28, 2020 07:36 pm
পাকিস্তান-চীন-ইরান অক্ষ : টার্গেট ভারত-যুক্তরাষ্ট্র জোট!

পাকিস্তান-চীন-ইরান অক্ষ : টার্গেট ভারত-যুক্তরাষ্ট্র জোট! - ছবি : সংগৃহীত

 

তিনটি আঞ্চলিক শক্তি পাকিস্তান, চীন ও ইরান তিনটি ভিন্ন অঞ্চল – দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছে এবং ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ইরানের মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত ও নিরাপত্তা শক্তি রয়েছে, প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে তাদের প্রাচীন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে, যেটা তাদেরকে সুপার আঞ্চলিক শক্তি করে তুলেছে। চীনের অর্থনৈতিক শক্তি, তাদের ভেটো ক্ষমতা, বৈশ্বিক প্রভাব, এবং সংযোগ প্রচেষ্টার কারণে তারা পরবর্তী বিশ্ব শক্তি হয়ে উঠেছে। পাকিস্তান প্রথম ইসলামি পারমানবিক শক্তি, প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের বিপুল অভিজ্ঞতা রয়েছে, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা দিক থেকে তারা উদীয়মান আঞ্চলিক কেন্দ্র হয়ে উঠছে, সম্পর্কের সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে তাদের, এবং তাদের ভৌগলিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে এই তিন দেশের মধ্যে সহযোগিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে দেশটি।

এই তিন দেশ ভৌগলিকভাবে, ভূ-রাজনৈতিকভাবে, এবং ইকো-কৌশলভাবে তিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত। এই দেশগুলোর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক রিজার্ভ, সমুদ্র রুট, ভুগোল এবং সঙ্ঘাত দ্বন্দ্ব পুরো বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহের উপর প্রভাব ফেলে। পাক-চীন-ইরানের যে অভিন্ন কৌশলগত ও নিরাপত্তা ইস্যু রয়েছে, তাদের ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে সহজেই সেটার সমাধান করা যায়।

আফগান শান্তি নিশ্চিত করতে পাকিস্তান-চীন-ইরানের কাজ করা উচিত

আফগান ইস্যুটি সব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক রাষ্ট্র থেকে নিয়ে অনুপ্রবেশকারী সব পক্ষের জন্য শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তান গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের অস্থিরতার কারণে পাকিস্তানকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। আফগানিস্তানের সাথে চীন ও ইরান ইস্যু, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উদ্বেগও জড়িয়ে আছে। তাছাড়া পাকিস্তান আর ইরান এর আগে আফগানিস্তানের ব্যাপারে এক জায়গাতে ছিল না। পাকিস্তান ছিল তালেবানপন্থী আর ইরান ছিল নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের পক্ষে।

ইরান আর পাকিস্তান একসময় খুব বেশি বিনিময় ছিল না। আফগানিস্তানে চীনের বড় স্বার্থ রয়েছে কারণ এই দেশটির মধ্য দিয়ে চীন তাদের বেল্ট অ্যাণ্ড রোড (বিআরআই) সম্প্রসারণ করতে চায়। চীন আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চায় কারণ এই দেশের মধ্য দিয়ে তারা মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে যুক্ত হতে চায়। চীনের জন্য আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলা ক্ষতিকর কারণ এগুলো দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে জিনজিয়াংয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণে একটা স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তানের জন্য এই তিন দেশকে একত্রে কাজ করতে হবে।

এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করবে পাক-চীন ও ইরান

আফগানিস্তানে মার্কিন উপস্থিতিতে এই তিন দেশের কোন স্বার্থ নেই, আর চীন ও ইরান সবসময় আফগানিস্তানে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধীতা করে এসেছে।আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং ভারতের সাথে তাদের সম্পর্কের কারণে এশিয়ায় শান্তি ও ক্ষমতার ভারসাম্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে ত্রিপক্ষীয় স্বার্থেই পাক-চীন এবং ইরানকে তাদের সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মার্কিন-তালেবান শান্তি চুক্তিতে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাক-রাশিয়ান সামরিক মহড়ার কারণে আঞ্চলিক সহযোগিতায় এখন রাশিয়ার যুক্ত হওয়ার পথ খুলেছে।

ভারত আফগানিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাস উসকে দেয়ার সব ধরণের চেষ্টা করছে যাতে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দীর্ঘায়িত করা যায় এবং যাতে তাদের স্বার্থ হাসিল হয়। ট্রাম্পের ভারতপ্রীতি এবং আফগানিস্তানে ভারতের ভূমিকা বাড়ানোর ঘোষণায় পাকিস্তান, চীন ও ইরান ভবিষ্যৎ আঞ্চলিক কৌশলের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে গেছে। দ্বিতীয় সমস্যা হলো ভারতীয় ফ্যাক্টর, যাদের সবসময় প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্য রয়েছে। ভারত তাদের আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যের কারণে বিভিন্ন আঞ্চলিক বিবাদে জড়িয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।

পাক-চীনের সাথে ভারতের যে দীর্ঘ ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব চলে আসছে, সেটা মূলত আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের জন্য হয়েছে। ভারত-চীন বিবাদ বাইরের ফ্যাক্টরগুলো উসকে দিচ্ছে এবং পাক-ভারতের কাশ্মীর ইস্যুর ক্ষেত্রেও এটা সমান সত্য। পাক-ভারত ও চীন-ভারতের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ থেকে ভারত অনেক বেশি সুবিধা পেতে চায়। উভয় ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র চীনকে দুর্বল করার একটা সুযোগ পেয়ে যাবে এবং সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য চীন-ইরান-পাকিস্তানকে একসাথে মিলে এগিয়ে যেতে হবে।

ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা : এই মুহূর্তের প্রয়োজন

অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান ও চীনের বিপরীতে ভারতকে উসকে দিচ্ছে। মার্কিন-ভারত সম্পর্ক সিপিইসির জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে; সে কারণে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়টি এই মুহূর্তের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। যদিও ভারত-ইরানের সম্পর্ক পাকিস্তান আর চীনের তুলনায় অতটা তীব্র নয়, তারপরও যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থে ইরানের বিরুদ্ধে ভারত আর ইসরাইলকে ব্যবহার করতে পারে। ইরান-ভারতের অনেক চুক্তিই এখনও কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে বাধ্য করেছে যাতে তারা ইরান-পাকিস্তান-ভারত (আইপিআই) গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে যুক্ত না হয়।

পাক-চীন-ইরান সহজেই বুঝতে পারে যে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া নীতি সবসময় ভারতকে সুবিধা দিয়েছে, যেটা তাদের স্বার্থকে হুমকিতে ফেলেছে এবং আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য এবং আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নষ্ট করেছে। ভারতের প্রতি মার্কিন পক্ষপাতিত্ব এবং ভারতের একক আঞ্চলিক আধিপত্যের স্বপ্নের মোকাবেলা করার জন্য পাক-চীন-ইরানকে অবশ্যই এক হতে হবে। এশিয়ার বাকি দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে বা প্রতিরক্ষা দৃষ্টিকোণ থেকেও শক্তিশালী নয়।

সূত্র : গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us