মারাত্মক বিপদে ভারতের অর্থনীতি
মারাত্মক বিপদে ভারতের অর্থনীতি - ছবি : সংগৃহীত
চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারে ভারতের অর্থনীতি সঙ্কোচিত হয়েছে ৭.৫ ভাগ। শুক্রবার ভারতের পরিসংখ্যার সংস্থা এই তথ্যের আলোকে বলা যায়, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশটি প্রায়োগিকভাবে মন্দার কবলে পড়েছে।
অবশ্য, জিডিপির পতনের কারণ আগের তিন মাসে নজিরবিহীন ২৩.৯ ভাগ করে সঙ্কোচন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের উৎসব মওসুম সমাপ্তির পর এই মন্দা থাকবে না।
ভারতের সঙ্কোচন ৮.৮ ভাগ হবে বলে রয়টার্সের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটির অর্থনীতির অবস্থা ততটা খারাপ হয়নি।
গত ১১ নভেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া জানায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারে জিডিপি হ্রাস পাবে ৮.৬ ভাগ। এর ফলে ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রায়োগিক মন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে।
সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারে বেসরকারি ভোগ সঙ্কুচিত হয়েছে ১১.৩ ভাগ। আর সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগসহ গ্রস ফিক্সড ক্যাপিটাল ফরমেশনে সঙ্কোচন ঘটেছে ৭.৩ ভাগ। আগের তিন মাসে এই দুই খাতে সঙ্কোচন ঘটেছিল যথাক্রমে ২৬.৭ ভাগ ও ৪৭.১ ভাগ।
যেসব খাতে উন্নতি হয়েছিল তার একটি হলো ম্যানুফেকচারিং। সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ০.৬ ভাগ। এপ্রিল-জুন কোয়ার্টারে তাদের পতন হয়েছিল ৩৯.৩ ভাগ। আগের তিন মাসের নির্মাণকাজ ৫০.৩ ভাগের তুলনায় এই সময় হ্রাস পায় ৮.৬ ভাগ।
জিডিপি তথ্যে কিছুটা অগ্রগতি দেখানো হলেও নীতিনির্ধারক ও অর্থনীতিবিদেরা এখনো সতর্ক রয়েছেন।
ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স এসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার বার্ষিক সম্মেলনে আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেন, প্রবৃদ্ধির রূপরেখায় উন্নতি হচ্ছে বলে মনে হলেও প্রবৃদ্ধির পতনের শঙ্কাও আছে। তিনি এ ব্যাপারে করোনাভাইরাসের নতুন করে প্রকোপ বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ করেন।
ব্যাঙ্গালোরভিত্তিক ড. বি আর অম্বেদকর স্কুল অব ইকোনমিক্স ইউনিভার্সিটির ভিসি এন আর ভানুমূর্তি বলেন, সর্বশেষ জিডিপি সংখ্যায় আমরা বিস্মিত নই। তিনি নিক্কিই এশিয়াকে বলেন, আমরা তৃতীয় কোয়ার্টারে ইতিবাচক সংখ্যা পাওয়ার আশা করছি।
প্রথম কোয়ার্টারে সঙ্কোচন ছিল প্রায় ২৪ ভাগ। এর জন্য পুরোপুরি করোনাভাইরাস দায়ী ছিল না। মূল কারণ ছিল লকডাউন। তবে লকডাউন ওঠে গেলে অনেক খাতই প্রবৃদ্ধির মুখ দেখতে থাকে।
তবে রেটিং এজেন্সি আইসিআরএ চলতি সপ্তাহে সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছে যে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে বলে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তাতে অতিরঞ্জন রয়েছে।
ভারত গত মার্চে বিশ্বের সবচেয়ে বড় লকডাউন আরোপ করে। এর ফলে ১.৩ বিলিয়ন লোকের দেশটিতে সব ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আর সেটির প্রতিফলন ঘটে এপ্রিল-জুনের জিপিপিতে। জুন থেকে বিধিনিষেধ অনেকাংশে তুলে নেয়া হলেও নতুন বিপদ দেখা দিয়েছে কোডিভ-১৯-এর ব্যাপক বিস্তৃতিতে। বিশেষ করে দিল্লি ও কয়েকটি রাজ্যে তা ভয়াবহ আকারে বিস্তৃত হচ্ছে। ভারতে শুক্রবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে ৯.৩ মিলিয়নের বেশির লোক। আর মারা গেছে ১,৩৫,৭০০ জন।
এদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতি পূর্বাভাস কোম্পানি অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স ১৯ নভেম্বর জানিয়েছে, ভারতের কোভিড-১৯-পরবর্তী সমস্যা হবে বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ। এত বলা হয়, ২০২০-২৫ সময়কালে ভারতের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি হতে পারে মাত্র ৪.৫ ভাগ। অথচ করোনাভাইরাসের আগে তা ৬.৫ ভাগ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
সূত্র : নিক্কিই এশিয়ান রিভিউ