ইসরাইলের বিশেষ টার্গেট ছিলেন ইরানি বিজ্ঞানী মোহসিন!
মোহসিন ফখরিযাদে - ছবি : সংগৃহীত
ইরানের সবচেয়ে প্রবীণ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসিন ফখরিযাদে রাজধানী তেহরানের কাছে আততায়ীর আক্রমণে নিহত হয়েছেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র খবরটি নিশ্চিত করেছে। দামাভান্দ এলাকায় হামলার পর ফখিরাযাদে হাসপাতালে মারা গেছেন।
ইরানের বার্তা সংস্থাগুলো বলছে আততায়ীরা প্রথমে তার গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে এবং তার পর তাকে গুলি করে।
পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাকে ইরানের গোপন পরমাণু কর্মসূচির পেছনে প্রধান মাথা বলে মনে করে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এই ঘটনাকে "সন্ত্রাসী কাজ" বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
কূটনীতিকরা তাকে "ইরানে বোমার জনক" বলে বর্ণনা করতেন।
ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে। এরই মধ্যে এই হত্যার ঘটনা ঘটল।
বেসামরিক খাতে পারমাণবিক জ্বালানি তৈরির জন্য এবং একইসঙ্গে সামরিক কাজে ব্যবহারযোগ্য পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম একটি আবশ্যিক উপাদান।
ইরান সবসমেয়েই বলে এসেছে তারা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্যই একমাত্র তাদের পরমাণু কর্মসূচি ব্যবহার করে।
কী ঘটেছে?
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে : "মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থার প্রধান মোহসিন ফখিরাযাদেকে নিয়ে যে গাড়িটি যাচ্ছিল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সেই গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায়।
"তার দেহরক্ষী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে এরপর সংঘর্ষ হয়। এতে ফখিরাযাদে গুরুতরভাবে আহত হন এবং দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
"চিকিৎসা কর্মীরা তাকে বাঁচানোর সবরকম চেষ্টা করলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা ব্যর্থ হন এবং কিছুক্ষণ আগে তিনি মারা গেছেন।"
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইরানের চারজন পরমাণু বিজ্ঞানী আততায়ীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন এবং এইসব হত্যার ঘটনায় ইসরাইল জড়িত বলে ইরান অভিযোগ করেছে।
২০১৮ সালের মে মাসে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি বক্তৃতার সময় ফখিরাযাদের নাম বিশেষভাবে উল্লখ করেন।
সূত্র : বিবিসি
ইসরাইলের সাথে চুক্তিতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে না : ইরান
পার্স টুডে
ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি আঞ্চলিক দেশগুলোকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ইসরাইলের সাথে কথিত শান্তিচুক্তি করে নিরাপত্তা আসবে না। তিনি ইসরাইলকে ‘ক্রিমিনাল’ আখ্যা দিয়ে বলেন,‘তারাই পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তাহীনতা এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মূল হোতা।’ ইসরাইলের সাথে কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘটনায় ইরানি প্রেসিডেন্ট দুঃখ প্রকাশ করেন।
বুধবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আলে সানির সাথে টেলিফোন আলাপে এসব কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তিনি বলেন, বাইরের শক্তি আঞ্চলিক দেশগুলোতে যে হস্তক্ষেপ করছে এবং তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং জ্ঞান-বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, যুক্তি এবং আন্তরিক সংলাপের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি সুস্পষ্ট করে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইসরাইলকে আঞ্চলিক ঘটনাবলিতে যুক্ত করার কারণে নিরাপত্তাহীনতা এবং অস্থিতিশীলতা বাড়বে। তিনি আরো বলেন, সত্যিই খুব আশ্চর্যজনক যে, কোনো কোনো প্রতিবেশী দেশ মনে করছে ক্রিমিনাল ইসরাইল সরকারের সাথে সম্পর্ক তৈরি করলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে অথচ ইসরাইল হচ্ছে পুরো অঞ্চল এবং মুসলিম দেশগুলোর শত্রু। তিনি বলেন, আঞ্চলিক দেশগুলোকে তাদের নিজেদের সমস্যা নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে এবং আমি নিশ্চিত আগামী মাসগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে আঞ্চলিক পরিস্থিতি অনেক ভালো হবে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন ঘটনাবলি ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের জন্য কোনো কোনো দেশের শত্রুতাপূর্ণ নীতির পরিবর্তন আসবে এবং জোরালো আঞ্চলিক সংলাপ ও সমঝোতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট রুহানি ইরানের সাথে কাতারের সম্পর্ক এবং ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্বের প্রশংসা করে বলেন, ইরান আঞ্চলিক দেশগুলোর সাথে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক চায়।
ফোনালাপে কাতারের আমির ইরানি প্রেসিডেন্টকে দোহা সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং জবাবে প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, এ সফর একটি উপযুক্ত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। ফোনালাপে কাতারের আমির তেহরান ও দোহার মধ্যকার বর্তমান সম্পর্ককে কৌশলগত বলে মন্তব্য করেন এবং এই সম্পর্ক দুই দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইরানের সাথে এরই মধ্যে কাতারের যেসব চুক্তি হয়েছে তা বাস্তবায়নে দোহা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে বলেও জানান শেখ তামিম বিন হামাদ আলে সানি। তিনি বলেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যেকোনো চুক্তিতে ইরানকে অবশ্যই একটি পক্ষ হিসেবে রাখতে হবে। তিনি আশা করেন, চলমান আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে ইরান ও পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু হবে।