১৯৭৮ সালে ম্যারাডোনাকে কেন বাদ দিয়েছিলেন কোচ?

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Nov 27, 2020 03:06 pm
ম্যরাডোনা

ম্যরাডোনা - ছবি : সংগৃহীত

 

সালটা ছিল ১৯৭৮। আর্জেন্টিনার মাটিতে বসেছে বিশ্বকাপের আসর। একদিকে স্পেনীয় আগ্রাসন থেকে মুক্তির দাবিতে আর্জেন্টিনায় তখন জনতা-সেনাবাহিনী যুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে বিশ্ব ফুটবলের আসর।

পরিস্থিতি মোটেও স্বাভাবিক ছিল না। অনেকেই বলেছিলেন বিশ্বকাপটা সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। কিন্তু বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্তা সংস্থা ফুটবল বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনার মাটিতেই আয়োজন করার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন। আর সেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা স্কোয়াডে সুযোগ পেলেন একটি কিশোর ছেলে। কিশোর বললাম এই কারণেই, কেন না তখনও আঠারো বছর পরিপূর্ণ করেনি আর্জেন্টাইন ফুটবলের সেই দুরন্ত ঘোড়াটি। নাম, দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। গোটা আর্জেন্টিনা তখন যুদ্ধের পরিস্থিতিতেও দিয়েগোকে নিয়ে মাতোয়ারা। সেই সময়ের আর্জেন্টিনা কোচ সিজার মেনেত্তি কিশোর ম্যারাডোনাকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রেখেও শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতার মাত্র কয়েকটা দিন আগে স্কোয়াড থেকে তাকে বাদ দিয়ে দিলেন।

একদিকে আর্জেন্টিনায় যুদ্ধের পরিস্থিতি, তার মধ্যে ম্যারাডোনাকে বাদ দেয়ায় আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমী মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। এমনকি সেবারের আর্জেন্টিনা কোচ সিজার মেনেত্তির কাছে জবাবদিহিও চাওয়া হয়েছিল কেন ম্যারাডোনার মতো স্কিলফুল ফুটবলারকে দল থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হলো। মেনেত্তি সেদিন কোনো কিছুই জানাতে চাননি। শুধু উত্তর দিয়েছিলেন ‘এর উত্তর আমি পরে দেব। আপনারা নিজেরাই বুঝে যাবেন কেন আমি দিয়েগোকে মূল স্কোয়াড থেকে বাদ রেখেছি।’

কিন্তু আর্জেন্টিনার ফুটবল ফ্যানেদের মেনেত্তির এই উত্তর খুব একটা পছন্দ হয়নি। মারিও কেম্পেসের নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা অবশ্য মারাদোনা ছাড়াই সেবার লক্ষ্যপূরণ করেছিল। মারিও কেম্পেস, দানিয়েল পাসারেল্লা, ড্যানিয়েল বার্তোনিদের মতো তারকাদের নিয়ে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা।

ঠিক তার পরের বছর ২০১৯ সালে জাপানের মাটিতে বসেছিল যুব বিশ্বকাপের আসর। দিয়েগো ম্যারাডোনা তখন আর্জেন্টিনা ফুটবল স্কোয়াডের ক্যাপ্টেন। শুরু থেকেই নিজের জাত চেনানো ম্যারাডোনা কার্যত একার কাঁধে ভর করে নিজে গোল করে রামন দিয়াজদের দিয়ে গোল করিয়ে দলকে ফাইনালে তুললেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করলেন, গোল করালেন। দলকে চ্যাম্পিয়ন করালেন। প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোল করার জন্য সোনার বুটের অধিকারী হলেন ম্যারাডোনারই সতীর্থ রামন দিয়াজ। কিন্তু ম্যারাডোনার অধিনায়কত্ব, মাঝমাঠে তার খেলা তৈরি করার দক্ষতা সারা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিলো। ১৯৭৮ সালের আর্জেন্টনার কোচ সিজার মেনেত্তি বললেন, ‘আমি যদি ওকে বাদ না দিতাম, তাহলে যুব বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনা নাও পেতে পারত। কারণ ওর প্রতিভাই ওকে ছিটকে দিত যুব বিশ্বকাপ থেকে। কোনো দল ওকে ছেড়ে কথা বলত না।’ কিন্তু তাতেও যে আর্জেন্টাইন জনতার মন গলেছিল তা নয়।

এলো ৮২’র স্পেন বিশ্বকাপ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিরুদ্ধে হেরে শেষ ষোলো থেকে ছিটকে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। প্রথম থেকেই ম্যারাডোনা নার স্কিল, তার দৌড়, তার গেম মেকিং ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রতিটা টিমের কাছেই। বিশেষ করে ব্রাজিলের কাছে তো বটেই। দ্বিতীয় পর্বে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ৩-১ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। ম্যাচ জুড়ে ম্যারাডোনা মার খেতে খেতে একটা সময় আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। কারেকাকে মেরে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।

অপেক্ষা ছিল চারটি বছরের। এলো ১৯৮৬ বিশ্বকাপ। মেক্সিকোর মাটিতে ফুটবল রাজপুত্রের পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছে ফুটবল বিশ্ব। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার হাত দিয়ে করা গোল নিয়ে এখনো আক্ষেপ করেন সেদিনের ইংল্যান্ড গোলরক্ষক পিটার শিলটনও। তিনি বারবার রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেও রেফারি তাতে কর্ণপাত করেননি। পরবর্তী কালে ম্যারাডোনাকে যতবারই গোলটি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, ম্যারাডোনা একটাই উত্তর দিয়েছেন, ‘ওটা হ্যান্ড অব গড’ ছিল। একা একটা গোটা বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার মতো দেশকে এনে দিচ্ছেন এ দৃশ্য দেখলেও চোখ জুড়িয়ে যায়। যুব সমাজের হৃদয়ে বসে গেলেন দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। ফুটবল রাজপুত্রকে নিয়ে সিজার মেনেত্তি এবার মুখ খুললেন। বললেন, ‘১৯৭৮-এর সেদিন কেন আমি ম্যারাডোনাকে বাদ দিয়েছিলাম, এবার সবাই বুঝতে পারছেন তো? এই দিনটা দেখার অপেক্ষাতেই আমি সেদিন ম্যারাডোনাকে বাদ দিয়েছিলাম। কারণ সেদিন ম্যারাডোনা একেবারে বাচ্চা ছেলে ছিল। প্রচণ্ড মার খেলে ওর পরবর্তীকালের খেলাটাই হারিয়ে যেতে পারত। এই বিশ্বকাপের হিরোকে আর পাওয়া যেত না।’

শুধু ১৯৮৬ বিশ্বকাপই নয়, ৯০ বিশ্বকাপেও তার ফুটবল দেখে মোহিত হয়ে যাওয়া ফুটবল বিশ্ব ভাবতেও পারেনি, ঠিক তার পরের বিশ্বকাপেই ফুটবলের রাজপুত্রের জীবনে নেমে আসবে এমন ঘোর অন্ধকার। ড্রাগ কেলেঙ্কারি, উচ্ছৃঙ্খলতাও মনের মণিকোঠা থেকে সরিয়ে দিতে পারেনি ফুটবল রাজপুত্রকে।

সূত্র : পুবের কলম


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us