লজ্জায় পড়েছে মিয়ানমারের সামরিক-সমর্থিত বিরোধী দল
সু চি ও সেনাপ্রধান - ছবি : সংগৃহীত
মিয়ানমারের প্রধান বিরোধী দল, সামরিক-সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি), চলতি মাসের সাধারণ নির্বাচনে বিপর্যয়কর ফলাফলের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
আং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) জয় এর চেয়ে আরো ভালো আর কী হতে পারত? এনএলডি জাতীয় পরিষদে ৮৩ ভাগ আসন (মোট ৩৯৬টি) জয় করেছে। ২০১৫ সালে ছিল ৭৯ ভাগ। সারা দেশের রাজ্য বা আঞ্চলিক পর্যায়ে ১৪টি পার্লামেন্টের মধ্যে তারা জয়ী হয়েছে ১২টিতে।
এই ফলাফল এনএলডি ও সু চির প্রতি দৃঢ় আস্থারই প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণ তাদেরকে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার ম্যান্ডেট দিয়েছে।
অন্যদিকে ইউএসডিপি পেয়েছে মাত্র ৩৩টি আসন (নির্বাচনী আসনের ৬.৯ ভাগ)। ২০১৫ সালের চেয়ে আটটি কম। ইউএসডিপির অনেক সিনিয়র নেতা পরাজিত হয়েছেন। পরাজিতদের মধ্যে দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক এক চেয়ারম্যানও রয়েছেন। দক্ষিণ মান্দালয়কে বিবেচনা করা হতো ইউএসডিপির ঘাঁটি। সেখানে তারা এনএলডির কাছে আসন হারিয়েছে।
তবে পরাজয় স্বীকার না করে ইউএসডিপি নেতৃত্ব নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করে সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় নতুন নির্বাচন দাবি করেছে। কেবল নির্বাচনকেই কলঙ্কিত নয়, সেইসাথে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কিছু উদ্বেগজনক খবরও আসছে। উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে এনএলডির নবনির্বাচিত এক এমপিকে তার বাড়ির সামনে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করেছে।
নির্বাচন নিয়ে কিছু প্রশ্ন ছিল। যেমন নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব, রোহিঙ্গাদের গণহারে ভোটাধিকার হরণ, সঙ্ঘাত-জর্জরিত অনেক এলাকায় ভোট স্থগিত করা। কিন্তু তবুও কার্টার সেন্টারের মতো নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা ভোটের দিন বড় ধরনের অনিয়মের কোনো খবর জানায়নি।
কিন্তু ইউএসডিপি যেভাবে বলছে, তাতে করে মনে হচ্ছে, তারা সামরিক বাহিনীর মধ্যে সহানুভূতিশীল কাউকে পেয়েছে। নির্বাচনের ঠিক আগে দিয়ে কমান্ডার-ইন-চিফ মিন আঙ হ্লাইঙ নির্বাচন কমিশনের অগ্রহণযোগ্য ভ্রান্তির কথা জানিয়ে সামরিক বাহিনী নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণ করবে কিনা সে ব্যাপারে সংশয়ের সৃষ্টি করেন। অবশ্য নির্বাচনের পর সিদ্ধান্তসূচক রায়ের ফলে সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বলেন যে ইউএসডিপির অবস্থান সেনাবাহিনী সমর্থন করে না।
এই প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনী অজনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের সমর্থন প্রদান করবে, এমনটি প্রত্যাশা করা যায় না। পার্লামেন্টের প্রতি সামরিক বাহিনীর আগ্রহ সুরক্ষিত। কারণ এতে উভয়কক্ষের প্রতিটিতেই তাদের ২৫ ভাগ করে আসন সুরক্ষিত আছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব ও একটি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ তাদের হাতেই থাকছে।
ইউএসডিপি প্রতিষ্ঠা করেছিল সাবেক সামরিক জান্তা, ২০১০ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য। ওই নির্বাচন বয়কট করেছিল এনএলডি। সামরিক বাহিনীর সাবেক জেনারেলদের ভিড় এই দলে এখনো ব্যাপকভাবে দেখা যায়। এবারের নির্বাচনে যেসব এলাকায় সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেখানেই কেবল এই দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, ইউএসডিপির নির্বাচনী ব্যর্থতা রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রভাবকে প্রত্যাখানের কথাই তুলে ধরছে। অবশ্য, দলটির সামগ্রিক রাজনৈতিক অপ্রাসঙ্গিকতার কথা বলার সময় এখনো আসেনি। এর অন্যতম কারণ, দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক স্বার্থ ও সম্পদে সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক ব্যাপকভাবে আছে।
তাছাড়া কিছু এলাকায় দলটির সমর্থন ভিত রয়ে গেছে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে দেখা গিয়েছিল, ইউএসডিপি ২৮ ভাগ ভোট পেলেও তারা আসন পেয়েছিল মাত্র ৮ ভাগ।
সংক্ষিপ্ত মেয়াদে বলা যায়, পার্লামেন্টে ইউএসডিপি কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে তা নির্ধারিত হবে এনএলডির ওপর। ২০১৫ সালের নির্বাচনের পর এনএলডি বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক পদে ইউএসডিপির সদস্যদের নিয়োগ দিয়েছিল। এতে করে ইউএসডিপির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছিল।
চলতি বছরের নির্বাচনের পর এনএলডি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিদের একই সুবিধা দেবে কিনা বলা যাচ্ছে না।
সূত্র : দি ইন্টারপ্রেটার