সৌদি-আমিরাত-মিসরের বিরুদ্ধে তুরস্ক-রাশিয়ার জয়!
সৌদি-আমিরাত-মিসরের বিরুদ্ধে তুরস্ক-রাশিয়ার জয়! - ছবি সংগৃহীত
নাগরনো কারাবাখের যুদ্ধ থামাতে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও রাশিয়া শান্তি চুক্তি করেছে। যুদ্ধের শুরু থেকেই তুরস্ক ঘোষণা দিয়ে আজারিদের পক্ষ নিয়েছে। যুদ্ধরত এই দু’টি দেশ কিছুদিন আগেও দুইবার যুদ্ধ বিরতি চুক্তি করেছিল। সেগুলো চুক্তির কয়েক ঘণ্টা পরই ভেঙে যায়। পরাজয় আঁচ করতে পেরে শুরু থেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ যুদ্ধ বন্ধের জন্য হাঁকডাক শুরু করেছিলেন। কিন্তু চুক্তিতে কোনো ভূমিকায় তাকে দেখা যায়নি যদিও মিনস্ক গ্রুপে ফ্রান্স এক ‘ব্রোকার’। নাগরনো কারাবাখ আজারবাইজানের, এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও রাশিয়ার পুতিন শুধু আর্মেনীয়দের বহুদিন ধরে অস্ত্র দিয়ে আসছিলেন। ১৯৯৪ সাল থেকে নৃতাত্ত্বিক আর্মেনীয় গোষ্ঠী এলাকাটি পরিচালনা করে আসছে। তাদের সার্বিক সহায়তা দিয়েছে মূল আর্মেনিয়া। এর আগেও ১৯৯০ সালে রাশিয়া যুদ্ধবিরতি সই করেছিল। তবে সেটি কোনো শান্তি চুক্তি ছিল না।
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া উভয় দেশের মধ্যে পানি বিরোধও বড় ইস্যু। ১৯৯২ সাল থেকে আর্মেনিয়া তার্তার নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করে রাখে। ফলে আজারবাইজানে কোনো পানি প্রবাহিত না হওয়ায় চাষাবাদ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এবার যুদ্ধের দ্বিতীয় সপ্তাহে আজারবাইজান ওই নদী ও বাঁধ দখল করে নেয়। এখন নদীতে পানিরপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ছোট ছোট অনেক মরা খাল কয়েক দিনের মধ্যে জেগে উঠেছে। আজারি চাষিরা সীমাহীন আনন্দে পানীয় জল সংগ্রহ এবং চাষের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের সদ্য দখলকৃত সুশা নগরে রয়েছে বড় স্বর্ণের খনি। এর মানে, আজারবাইজান এখন তেলের সাথে স্বর্ণের খনিরও মালিক হলো।
ইউরোপের Organization for Security and Cooperation in Europe (OSCE) বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সুরাহা করতে চেয়েছে। মিনস্ক গ্রুপ এটি বানায়। গ্রুপে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ফ্রান্স আছে।
মিনস্ক শুধু মিটিং করেছে। তবে কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারেনি। যা হোক, আর্মেনিয়ার চাইতে আজারবাইজান অনেক বড়। ২০০০ সাল থেকে এর তেল উৎপাদন ও বিক্রি অনেক অর্থ এনে দিয়েছে। তুরস্কের সাথেও নাড়ির সম্পর্ক। বলা হয়, এক জাতি দুই দেশ। আর্মেনিয়ার সাথে তুরস্কের দীর্ঘ সীমান্ত। যুদ্ধের সময় তুরস্ক সীমান্ত পুরো সিল করে দিয়েছে। ইরানও সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে। ফলে আর্মেনীয়রা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধ আর্মেনিয়ার বিপক্ষে যাওয়া শুরু হলে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান বারবার পুতিনকে অনুরোধ করেছেন সামরিক সহায়তা দিতে। যুদ্ধ চলাকালে সমরাস্ত্র সরবরাহ করলে আরো অনেক দেশ অস্ত্র সরবরাহ শুরু করতো, এতে ককেশাসে রাশিয়ার কর্তৃত্ব ছোট হয়ে যায় এবং ঘরের দরজায় একটি বড় যুদ্ধের দামামা শুনতে হবে।
উল্লেখ্য, আর্মেনিয়াতে রাশিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটি আছে। উভয় দেশ মস্কোর নেতৃত্বে পরিচালিত কলেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের সদস্য। এই চুক্তি অনুসারে আর্মেনিয়া আক্রান্ত হলে রাশিয়া সামরিক শক্তি নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর কথা। তবে বিধানটি আর্মেনিয়ার দখলকৃত ও অবরোধকৃত স্থানের জন্য প্রযোজ্য নয়। আবার আজারবাইজানের সাথেও রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। রাশিয়া উভয় দেশে নিয়মিত সমরাস্ত্র বিক্রি করে থাকে। ইসরাইল আজারবাইজানের তেল ছাড়াও ইরানের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সে দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। ইরানের সাথে ইসরাইলের সরাসরি কোনো যুদ্ধে আজারবাইজানের পার্বত্য এলাকা উপযোগী। ইসরাইল এটি চিন্তা করে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ইসরাইল আজারবাইজানের সব বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে থাকে। ওই যুদ্ধে ড্রোন ছাড়াও আধুনিক সমরাস্ত্র দিয়ে ইসরাইল আজারবাইজানকে সহায়তা দিয়েছে। অর্থাৎ আজারি সেনা ছাড়াও তুর্কি ও ইসরাইলি ড্রোন আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।
৯-১০ নভেম্বর যুদ্ধে আজারিরা অনেক ভূখণ্ড ছিনিয়ে নিয়েছে এবং আর্মেনিয়া সব ফ্রন্টে চরমভাবে পরাজিত হয়েছে। রাশিয়ার হিসাবে, উভয় পক্ষে পাঁচ হাজার সেনা মৃত্যুবরণ করেছে এবং কয়েকশ’ সাধারণ নাগরিক নিহত ও আহত হয়েছে। যুদ্ধের সময় আজারবাইজান আর্মেনিয়ার ৭০ শতাংশ অস্ত্র, গোলাবারুদ ধ্বংস করে দেয়। বিমান ও ট্যাঙ্ক ধ্বংস হয়েছে। এই রকম পরিণতি আর্মেনীয় বাহিনী চিন্তাও করতে পারেনি। রাশিয়ার সামরিক হেলিকপ্টারকে আজারবাইজান গুলি করে নামিয়েছে। এতে দু’জন রাশিয়ান পাইলট নিহত হন। তাহলে কি রাশিয়া আর্মেনিয়ার পক্ষ নিয়ে সম্মুখসমরে সহায়তা করেছে?
রুশ নেতা পুতিনের নেতৃত্বে নতুন যুদ্ধবিরতি আর্মেনিয়ায় ব্যাপক অসন্তোষ, ভাঙচুর ও বিক্ষোভ মিছিলের জন্ম দিয়েছে। তাদের প্রধানমন্ত্রীর অফিস ভাঙচুরের সময় অফিস লুট হয়েছে। ১০ নভেম্বর স্থানীয় সময় ১টা থেকে চুক্তিটি বলবৎ হয়। চুক্তির ধারা তৈরি করতে তুরস্কও কাজ করেছে। চুক্তির মূল বিষয়গুলোতে রয়েছে, যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত দুটি দেশ যে অবস্থানে ছিল সেখানেই থাকবে। এটি প্রথম শর্ত। পরাজিত বিধায় আর্মেনিয়ার ওজর আপত্তি বেশি বিবেচনা করা হয়নি। চুক্তিটি মূলত আর্মেনিয়ার যুদ্ধে পরাজয় এবং আত্মসমর্পণের দলিল। চুক্তিতে বলা আছে, আর্মেনীয় বাহিনী পরাজয় স্বীকার করেছে। আজারবাইজানের উন্নত অস্ত্র ও কৌশলের কারণে আর্মেনিয়া শর্তহীনভাবে চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে। নতুবা এতদিনে তার আরো খারাপ পরিণতি হতো। চুক্তির অন্যতম শর্ত হলো- আঘাদান অঞ্চল, যেটি আজারবাইজানের, সেটি ২০ নভেম্বরের মধ্যে কোনো শর্ত ছাড়া ফেরত দেয়া। লাচিন করিডোরে ১৯৬০ জন রুশ সেনা পাহারায় থাকবে। কোনো ভারী অস্ত্র নিয়ে সেনারা আজারবাইজান ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারবে না। শান্তিরক্ষার মিশনটি পাঁচ বছর বলবৎ থাকবে এবং এরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরো পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়বে।
চুক্তির শর্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা দেখভালের জন্য একটি ‘পিসকিপিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১৫ নভেম্বর আর্মেনিয়া কালোবাজার রিজিওন বুঝিয়ে দিয়েছে এবং ১ ডিসেম্বরের মধ্যে লাচিন রিজিওন আজারবাইজানকে বুঝিয়ে দেবে। তবে পাঁচ কিলোমিটার প্রশস্ত লাচিন করিডোর হিসাবের বাইরে থাকবে। এটি আর্মেনিয়া ও কারাবাখকে সংযুক্ত করেছে। তবে সুশা শহর আজারবাইজানের অধীনে থাকবে।
এই মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ শহরটি ৭ নভেম্বর আজারবাইজান উদ্ধার করেছে। চুক্তি মতে, জাতিসঙ্ঘ উদ্বাস্তু হাইকমিশনের মাধ্যমে কারাবাখ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন বাড়িঘরে ফিরবে। যুদ্ধবন্দী ও মৃতদেহ উভয় দেশ ফিরিয়ে দেবে। নাকিচেভান স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সাথে আজারবাইজানের সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় এলাকা আর্মেনিয়া ছেড়ে দেবে। সেখানে রাস্তা নির্মিত হবে এবং রাশিয়ান সেনারা নিরাপত্তায় থাকবে। মোটামুটি কারাবাখের মাঝের অংশে রাশিয়ানরা নিরাপত্তা বিধান করবে। চুক্তিতে আরো বলা হয়েছে, অতীতে যেসব আজারি সেখানে বসবাস করেছে তারা নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যাবে। তুরস্কও আজারবাইজানে শান্তিরক্ষী হিসেবে সেনা মোতায়েন করবে। এ বিষয়ে ১৮ নভেম্বর তুর্কি পার্লামেন্ট মতামত জানিয়েছে। আপাতত এক বছরের জন্য তুরস্কের শান্তিরক্ষী বাহিনী আজারবাইজানে মোতায়েন থাকবে। মস্কো জানিয়েছে তুর্কি সেনারা আজারবাইজানের অভ্যন্তরে থেকে কার্যক্রম চালাবে এবং নাগরনো কারাবাখ এলাকায় ঢুকবে না।
চুক্তি প্রমাণ করে, ককেশাসের ওই অঞ্চলে রাশিয়া আবার আধিপত্য বিস্তার করল। রাশিয়া এখন সরাসরি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের ওপর হয়তো কর্তৃত্ব করতে পারবে। আরিউক হারুত ইউনিয়ান, এক আর্মেনিয়ার নেতা যুদ্ধবিরতি ও চুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, কারাবাখের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুশার পতনের পর যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। পতনের একদিন পরই পুতিন চুক্তির জন্য আর্মেনিয়াকে চাপ দেন। অর্থাৎ এই স্থানটি এতই কৌশলগত গুরুত্ববহ যে, আরো যুদ্ধ চালালে আজারবাইজান অপ্রতিরোধ্য গতিতে আর্মেনিয়ার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ত, সম্পূর্ণ নাগরনো কারাবাখ তো নিতই।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯২২ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ছিল। রাশিয়ার কিছু অংশ উত্তর ইউরোপ এবং কিছু অংশ উত্তর এশিয়ায়, উত্তরে আর্কটিক সাগর। পুতিন রাশিয়ান ফেডারেশনে নতুন নামে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চাচ্ছেন। সোভিয়েত আমলে ফেডারেল স্টেটগুলোর কোনো ক্ষমতা ছিল না। রাশিয়া ফেডারেশনে স্টেটগুলো একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ক্ষমতা ভোগ করছে। ক্ষমতার জন্য পুতিন চাইলে যেকোনো সময় রাশিয়া ফেডারেশনে সুইচ করতে পারেন। এ বিষয়ে নয়া দিগন্তে এ লেখক লেখা ‘পুতিনের চিরস্থায়ী ক্ষমতায়ন’ পড়তে পারেন। শান্তি চুক্তি বলবৎ করার জন্য রাশিয়ার সেনারা বিরোধীয় কয়েকটি এলাকায় ঢুকেছে। দক্ষিণ ককেশাসে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তপ্ত সময়। কেননা ককেশাসের ম্যাপ এবার সত্যিই বদলে গেছে।
এটিকে ফেরাতে বড় এক যুদ্ধের প্রয়োজন, যা এখন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যুদ্ধ, শান্তি চুক্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তুরস্কের ভূমিকা অনন্য। এই তিনটি উপকরণ রাশিয়ার বেলায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই ককেশাস ক্রাইসিস দমনে পুতিনের চেয়ে এরদোগানের ভূমিকা বেশি সম্মানজনক হয়েছে। ১৯৯০ সালে এবং ১৯৮০ সালে আর্মেনিয়ার হামলায় শত হাজার আজারি নাগরিক উদ্বাস্তু হয়েছে, গৃহচ্যুত হয়েছে, তারা ফিরে যাচ্ছে নিজের বাড়ি ঘরে! নৃতাত্ত্বিক আর্মেনীয়রা এখন বলির পাঁঠার মতো কাঁপছে। যদি আজারিরা প্রতিশোধ নেয়া শুরু করে তবে কারাবাখে স্বল্পস্থায়ী গৃহযুদ্ধ হয়ে অনেকে হয়তো মৃত্যুবরণ করবে।
চুক্তিটি মূলত রাশিয়া ও তুরস্ক তৈরি করেছে এবং সেনা মোতায়েন ও করিডোরের সুযোগ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর এখন কিছুই করার নেই। আগেও তারা এ সমস্যায় অংশ নেয়নি, ইউরোপের জন্যও কারাবাখ ১৯৮৮ সাল থেকে একটি বড় সমস্যা। মুসলিম প্রধান আজারবাইজানকে এটি না দিয়ে নৃতাত্ত্বিক আর্মেনিয়দের স্বায়ত্তশাসিত বা স্বাধীন রাষ্ট্র করার ইন্ধন জুগিয়ে, ৩২ বছর ধরে সমস্যাকে জিইয়ে রাখা হয়েছে।
তুরস্কের বড় প্রাপ্তি হলো ট্রান্সপোর্ট করিডোর, এতে পূর্ব দিকের সোনালি ঊষার দুয়ার খুলে গেছে। ফলে সহজ বাণিজ্য তুরস্কের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে চমক দেখাবে। তুরস্কের পূর্ব প্রান্ত, কাস্পিয়ান সাগর আজারবাইজানে সহজ যোগাযোগের কারণে অঞ্চলে সমৃদ্ধির পথ সুগম করবে এবং পুরো মধ্য-এশিয়ায় তুরস্কের বাজার সম্প্রসারিত হবে।
আর্মেনিয়ার জন্য তেমন কোনো লাভ নেই, পরাজয়ের গ্লানিই সম্বল। চুক্তির পরও নাগরনো কারাবাখের বিরাট অঞ্চল তাদের হাতে থাকছে। সেখানে বড় শহর স্টেপেনাকার্টও আর্মেনিয়ার ভাগে রয়েছে।
চুক্তিতে যেসব কথা থাকুক না কেন, আর্মেনিয়ানরা যেন তাদের এলাকা নিরাপদ মনে করে সেটি নিশ্চিত করা না গেলে আবারো তুষের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে পারে। উদ্বাস্তুদের নিরাপদে ফিরে যাওয়া, বাড়িঘর পুননির্মাণে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সহায়তা, মানবিক সহায়তা প্রদান, অরাজনৈতিক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ছাড়া অন্যদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, উভয় দিকের বহিরাগত ও ভাড়াটে যোদ্ধাদের বিদায় করে দেয়া, কোনো দেশ যেন ব্যাপকহারে মানব বিধ্বংসী অস্ত্র সংগ্রহ না করতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি বিষয়।
‘শান্তি চুক্তির’ বেসাতিতে ক্রেমলিন দারুণ লাভবান হয়েছে। রুশ সেনাবাহিনীকে আরো প্রশস্ত এবং শান্তিরক্ষার ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করার কৌশলে ওরা বিজয়ী হয়েছে। দক্ষিণ ককেশাসে কৌশলগত গুরুত্বে রাশিয়ার মোড়লিপনা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রবাহের গতি নির্ণয় করবে। কোনো পশ্চিমা দেশের সাথে দেশের সাথে সংঘর্ষ ছাড়া রাশিয়ার প্রতিরোধবিহীন এই পদক্ষেপ পুরনো সোভিয়েত রিপাবলিক ইউক্রেন, বেলারুস ও মসলদোভাকে সতর্ক করেছে। শান্তির নামে নাগরনো কারাবাখ এখন রাশিয়ান ফৌজরাই মূলত শাসন করবে। কয়েক দশক ধরে রাজনীতি ও কূটনীতি যা পারেনি কয়েক সপ্তাহের যুদ্ধে রাশিয়া সেটা অর্জন করল।
রাশিয়া ও তুরস্ক উভয় শক্তি আন্তর্জাতিক ‘গেম চেঞ্জারে’র মঞ্চে কৃতী নায়ক হিসেবে নাম কুড়াল। মিসরের সিসি, লিবিয়ার হাফতার, সৌদি আরব ও আমিরাতের শাসকদের জন্যও এটি এক সতর্কবার্তা। ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিচিতি হয়েছে কাগুজে বাঘ। আফগানিস্তানের ইস্যুভিত্তিক অবস্থানও তাদের চাইতে ভালো। ২০১৪ সালের বসন্ত থেকে পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হাইব্রিড যুদ্ধ শুরু করেছেন যেন দেশটি মস্কোর কব্জা থেকে ছুটে না যায়। এই যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সামরিক অভিযান, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ ও তথ্যপ্রবাহকে ব্যবহার করছেন। সবচেয়ে বড় যে বিষয় তা হলো, ইউক্রেনের অধিকাংশ জায়গা রাশিয়ার বলে দাবি করা হচ্ছে। কারাবাখ শান্তি চুক্তি ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়াকে আরো শক্তিশালী করবে।
গত ১০০ বছরে এই প্রথম ককেশাসে তুর্কি ও রাশিয়ান সেনারা বিচরণ করছে। এর আগেও লেনিন ও কামালপাশা ককেশাসে পছন্দ-অপছন্দের রূপরেখা নিয়ে কথা বলেছিলেন, বিচরণ করেছিল সেনারা। এখন ২০২০ সালে এরদোগান ও পুতিন সেই ধারাকে পুনরুজ্জীবিত করলেন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার