ঘন ঘন অ্যান্টাসিড খান? হতে পারে যেসব বিপদ
ঘন ঘন অ্যান্টাসিড খান? - ছবি সংগৃহীত
নিমন্ত্রণবাড়ির ভূরিভোজ তো অনেক দূরের ব্যাপার, অনেকেই আছেন যারা আলু সিদ্ধ-ভাত খাওয়ার পরও অ্যান্টাসিড খান! এমনকী দুপুর ও রাতের খাবারের পরও গ্যাস-অ্যাসিডিটির ওষুধ খাওয়া অনেকের অভ্যাস। এভাবে কি সত্যিই মুড়িমুড়কির মতো অ্যান্টাসিড খাওয়া যায়? নাকি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিত্যদিন অ্যান্টাসিড সেবনের তীব্র কুপ্রভাব রয়েছে? জানাচ্ছেন বিশিষ্ট গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট ডাঃ সত্যপ্রিয় দে সরকার।
তেলে-ঝালে বাঙালি। সেইসঙ্গে বিয়ে, উপনয়ন ও নানারকম অনুষ্ঠান সারা বছর ধরে লেগেই থাকে। ফলে মাসের মধ্যে বেশ কয়েক দিন ভালোরকম ভূরিভোজ হয়েই যায়। তাই আমরা বাঙালিরা অ্যান্টাসিডকে বড়ই আপন করে নিয়েছি। এটি ছাড়া আমাদের এক মুহূর্ত চলে না।
অতিরিক্ত তেল-ঝাল-মশলা যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ঢেকুর, বুক জ্বালা, গলায় টক পানি উঠে আসা কিংবা পেটের ওপরের অংশ প্রধানত ফুলে ওঠে। আর তখনই আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই টপাটপ অ্যান্টাসিড খেয়ে নিই। শুধু বড়রা নয়, অনেক বাচ্চাকেই তাদের মায়েরা চামচে বা ওষুধের ছিপিতে করে মুখে তরল অ্যান্টাসিড ঢেলে দিয়ে থাকেন। ডাক্তারি মতে ছয় বছরের নিচের বাচ্চাদের অ্যান্টাসিড না দেয়াই ভালো।
এবার অ্যান্টাসিড নিয়ে একটু আলোচনায় আসা যাক। এতে মূলত চার ধরনের উপাদান যুক্ত থাকে। ১) সোডিয়াম, ২) অ্যালুমিনাম, ৩) ম্যাগনেশিয়াম, ৪) ক্যালশিয়াম।
যেসব অ্যান্টাসিডে সোডিয়াম থাকে সেগুলি মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করলে নানারকম সমস্যা শুরু হতে পারে। প্রেশারের রোগী, কিডনি ও লিভার ফেলিওরের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের অ্যান্টাসিড থেকে শত হস্ত দূরে থাকা উচিত।
নিয়ম না মেনে ইচ্ছামতো অ্যান্টাসিড খাওয়া শুরু ও বন্ধ করলে যে সমস্যাটি দেখা দেয় তার নাম রিবাউন্ড হাইপার অ্যাসিডিটি, অর্থাৎ অ্যাসিড ক্ষরণের পরিমাণ তাদের বহুগুণ বেড়ে যায়।
যে সব অ্যান্টাসিডে অ্যালুমিনাম থাকে তা বহুদিন ব্যবহারের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়াও ক্যালশিয়াম সরে গিয়ে হাড় নরম হয়ে যায়। শরীরে ফসফেটের পরিমাণ কমে যেতে পারে। কিডনির সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদি এরকম হয় তাহলে তা প্রাণসংশয়ের কারণ পর্যন্ত হতে পারে।
ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত অ্যান্টাসিড বেশি খেলে ডায়ারিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তাদের রক্তে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। কারণ অসুস্থ কিডনি রক্তে জমে থাকা ম্যাগনেশিয়াম শোষণ করে বের করতে পারে না।
ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড বেশি খেলে বমি বমি ভাব বা বমি পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায় ও কিডনিতে ক্যালশিয়ামের স্টোন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
ক্যালশিয়াম যুক্ত অ্যান্টাসিডের কারণে মিল্ক অ্যালকালি সিনড্রোমও দেখা দিতে পারে। শরীরে ক্যালশিয়াম বৃদ্ধির ফলে রক্তে ক্ষারের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অ্যান্টাসিড অ্যাসিডিক ওষুধ যেমন ডিগক্সিন (হার্ট ফেলিওরের জন্য ব্যবহৃত হয়), আইএনএইচ (টিবির জন্য), এপটয়েন (এপিলেপসির) প্রভৃতির কার্যক্ষমতা কমিয়ে এইসব ওষুধকে রক্তে মিশতে বাধা দেয়।
দীর্ঘদিন অ্যান্টাসিড খাওয়ার ফলে ঘন ঘন ডায়ারিয়া, সামান্য আঘাতে শরীরের যেকোনো জায়গার হাড় ভেঙে যেতে পারে। কখনো কখনো অ্যান্টাসিড সেবনের পর শরীরে অ্যালার্জিও বের হতে পারে। যেমন গায়ে লাল র্যাশ, নিশ্বাসের কষ্ট ও প্রেশার কমে যায়। শ্বাসের কষ্ট ও প্রেশার কমে যাওয়ার ঘটনা অবশ্য খুব কমই ঘটে। তবে যদি ঘটে তাহলে তা থেকে প্রাণহানি পর্যন্ত হতে পারে।
যারা অ্যান্টি প্লেটলেট ড্রাগ বা রক্ত তরল করার ওষুধ খান তাদের কখনো অ্যান্টাসিড খাওয়া উচিত নয়। এতে রক্তপাতের আশঙ্কা বেড়ে যায়। সবশেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আপনাদের জানাতে চাই- আলসার সারাবার ক্ষমতা অ্যান্টাসিডের প্রায় নেই বললেই চলে, এটি খাবার পর রোগী সাময়িকভাবে কিছুক্ষণের জন্য আরাম পান। অ্যাসিডিটি ও কষ্ট কমাবার ক্ষমতা পূর্ণ মাত্রায় রয়েছে পিপিআই বা এইচটুব্লকার জাতীয় ওষুধে। এই ধরনের ওষুধকে আমরা অ্যান্টাসিড বলি না। এগুলো অ্যাসিডের সঙ্গে কোনোরকম বিক্রিয়া করে না, এরা পাকস্থলী থেকে অ্যাসিডের ক্ষরণকে কমিয়ে দেয়।
তবে একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই কোনো ওষুধ খাবেন না। এর ফল কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই খুব খারাপ হয়ে থাকে।
সূত্র : বর্তমান