ভুটানে চীনের গ্রাম : ভারতের দাবি কতটুকু সত্য
ভুটানে চীনের গ্রাম : ভারতের দাবি কতটুকু সত্য - ছবি সংগৃহীত
ভারতীয় কিছু মিডিয়ায় মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, ভুটানের ভূখণ্ডের দুই কিলোমিটার ভেতরে একটি গ্রাম নির্মাণ করেছে চীন। এই মিডিয়াগুলো দাবি করেছে যে, দোকলাম অচলাবস্থার পর প্রথমবারের মতো এই গ্রাম দেখছে বলে দাবি করেছে। সীমান্ত ইস্যু এবং চীন-ভারত সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা এই রিপোর্টগুলোকে নাকচ করে দিয়েছেন। আর স্যাটেলাইট ছবি বলছে যে, এই গ্রামটি চীনা ভূখণ্ডের ভেতরই অবস্থিত।
কিছু ভারতীয় মিডিয়ায় এমনকি এই রটনাও ছড়ানো হয়েছে যে, ভুটানের ভেতরে চীন কোন গ্রাম নির্মাণ করেছে কি না। এই গ্রামটিকে ‘পাংদা গ্রাম’ নামে উল্লেখ করা হচ্ছে।
এনডিটিভি বৃহস্পতিবার বলেছে যে, চীন “একটি ঝর্নার পাশে একটি আবাসিক এলাকা… এবং ঘরবাড়ি, পরিস্কার রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য জিনিসপত্র নির্মাণ করেছে”। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে যে, ২০১৭ সালের পর এই প্রথম দোকলাম অঞ্চলের কাছে চীনের আবাসিক এলাকা নজরে পড়লো, যেটা কৌশলগতভাবে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ”।
তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের সরকারী তথ্য মতে ইয়াদোং কাউন্টির কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ২৭টি পরিবারের ১২৪ ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ইয়াদোং কাউন্টির দুইনিয়া এলাকার শাংদুই গ্রাম থেকে পাংদা গ্রামে স্থানান্তরিত হয়েছে।
ইয়াদোং কাউন্টি চীনের দক্ষিণপশ্চিম সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এই এলাকার পূর্বে ভুটান আর দক্ষিণে রয়েছে সিকিম আর পশ্চিমে ভারত। ২০১৭ সালে দোকলাম অচলাবস্থার কারণে চীন-ভারত উত্তেজনা বেড়ে গিয়েছিল, যেটা ঘটেছিল ইয়াদোংয়ের সীমান্ত এলাকায়।
তবে, পাংদা গ্রাম কাউন্টি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। অনলাইন মানচিত্র সরলরেখার হিসেবে দুই জায়গার দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার।
ভারতে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত ভেটসোপ নামগেল স্থানীয় সংবাদ সংস্থা দ্য হিন্দুকে বলেছেন যে, ভারতীয় মিডিয়ায় ভুটানের সীমানার ভেতরে চীনা গ্রাম নির্মাণের যে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, সেটা ঠিক নয়। “ভুটানের ভেতরে কোনো চীনা গ্রাম নেই”।
চায়নিজ একাডেমি অব সোশাল সায়েন্সের চায়নিজ বর্ডারল্যাণ্ড স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো ঝাং ইয়োংপান বলেন, “পাংদা গ্রাম চীনের মধ্যে পড়েছে”।
পাংদা গ্রামের অবস্থান ইয়াদোং নদীর পশ্চিম পাড়ে। নদীর দুই পাড় দক্ষিণে দোকলাম পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এটা চীনা ভূখণ্ডের মধ্যে পড়েছে। ভারতীয় মিডিয়া যে মানচিত্রের উল্লেখ করেছে, সেটা ঠিক নয়।
সিংঘুয়া ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ইন্সটিটিউটের গবেষণা বিভাগের ডিরেক্টার কিয়ান ফেং গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, “চীন আর ভুটানের মধ্যে সীমান্ত বিবাদ খুবই নগন্য, কিন্তু ভারতের বাধার কারণে এটা আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত করা হয়নি”।
কিয়ান বলেন ভারত নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী মনে করে এবং ভুটানকে নিজেদের প্রভাব বলয়ের অংশ মনে করে। চীন আর ভুটান যখন সীমান্ত ইস্যু নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসেছে, তখনই নাক গলিয়েছে ভারত।
কিয়ান বলেন, ভারতীয় মিডিয়া এই ইস্যুটিকে অতিরঞ্জিত করে এমন একটা ধারণা তৈরির চেষ্টা করছে যে, “চীন ভুটানের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে ক্ষুদ্র দেশের উপর চাপ দিচ্ছে” এবং চীন আর ভুটানের মধ্যে বিবাদের বীজ বপন করছে। “তবে ভুটানের সরকারী প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, তারা ভারতের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছে, এবং চীনের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে”।
চীনের নিজস্ব মিডিয়াতেও পাংদা গ্রামের ২৭টি পরিবারের ঘরবাড়ি দেখানো হয়েছে। এই গ্রামে এখন সড়ক ও তথ্য নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে দ্রুত। এখানে পাবলিক স্কয়ার, গ্রাম কমিটি, স্বাস্থ্য কক্ষ, পুলিশ রুম, কিন্ডারগার্টেন, সুপারমার্কেট, প্লাস্টিক রানওয়ে সবকিছু নির্মিত হয়েছে।
চীন তার সব প্রতিবেশীর সাথেই স্থল সীমান্তের বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলেছে, শুধু ভারত আর ভুটান ছাড়া। অন্যদিকে ভারতের সাথে তার বেশির ভাগ প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত বিবাদ রয়েছে।
সূত্র : গ্লোবাল টাইমস