চীন-ভারতের চাপে কঠিন অবস্থায় নেপাল

চীন-ভারতের চাপে কঠিন অবস্থায় নেপাল - ছবি সংগৃহীত
নেপাল মনে হচ্ছে ভারত ও চীনের নতুন যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। কৌশলগত অবস্থানে থাকা এই দেশটিতে ভূরাজনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে দুই দেশ। বৃহৎ দুই প্রতিবেশীর সামনে দেশটি স্যান্ডউইচের মতো চাপ খাচ্ছে। এ থেকে কিভাবে বের হবে তা তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তিত্ব নেপাল সফর করেছেন। ফলে দেশ দুটির কাছে নেপালের গুরুত্ব ব্যাপকভাবে ফুটে ওঠেছে।
চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে নেপাল সফরে যাচ্ছেন ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক। এর দুই দিন পরেই সফরে আসছেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
কাঠমাণ্ডু পোস্টের মতে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা দুই দিনের সফরে আসছেন। অন্যদিকে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেঙ্গের সফর হবে ২৯ নভেম্বর, এক দিনের জন্য।
ওয়েই এমন সময় সফরে আসছেন, যখন দেড় মাসের মধ্যে ভারতের তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তার পরপর নেপাল সফর শেষ হবে। তাছাড়া এই সময়টাতে নেপালের ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (এনসিপি) মধ্যেও দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে চলে গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি এবং নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত হাউ ইয়ানকির মধ্যে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠকে ওয়েই-এর সফরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কূটনীতিক এবং বিশেষজ্ঞরা দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সফর বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে নেপালের মধ্যে দুই বড় প্রতিবেশীর ক্রমবর্ধমান কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ হিসেবে দেখছেন।
এক মাসের মধ্যে ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান সামান্ত গোয়েলের নেপাল সফরের বিপরীতে ভারসাম্য রক্ষার জন্য চীনের মন্ত্রী সফরে আসছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়েইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে, এবং গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেপাল সফরের পর ওয়েই-ই সবচেয়ে সিনিয়র নেতা যিনি নেপাল সফরে আসছেন।
শি’র সফরকালে নেপাল ও চীন দুই দেশের গতানুগতিক ‘সমন্বিত অংশীদারিত্ব’কে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বের’ পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
চীনা প্রেসিডেন্ট একই সাথে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতারও প্রস্তাব করেন।
চীনে নিযুক্ত নেপালের সাবেক রাষ্ট্রদূত মহেশ মাসকেইয়ের মতে, ক্ষমতাসীন এনসিপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে বেইজিং বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। তাছাড়া ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কৌশলগত জোটের ব্যাপারেও বেইজিং নেপালের অবস্থান জানতে চায়।
গত মাসে ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী ভারত মার্কিন সামরিক স্যাটেলাইটেও প্রবেশ সুবিধা পাবে।
তাছাড়া বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে নেপালের প্রকল্পগুলোর ধীর অগ্রগতি নিয়েও চীন অখুশি বলে ধারণা করা হয়, যদিও ২০১৭ সালে নেপাল ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি স্বাক্ষর করে।
সূত্র : নিউ স্ট্রেইট টাইমস