কমলালেবুর চেয়ে ৮ গুণ বেশি ভিটামিন সি আমলকিতে
কমলালেবুর চেয়ে ৮ গুণ বেশি ভিটামিন সি আমলকিতে - ছবি : সংগৃহীত
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আমলকির ব্যবহার সর্বত্র। চুলের জেল্লা বৃদ্ধি, রুক্ষতা কমানো, ত্বকের উজ্জ্বলতা, পেটের গোলযোগ দূর, শরীর চাঙ্গা এমন হাজারও সমস্যার সমাধান করে আমলকি। মা ঠাকুমাদের বানানো আমলকির আচার কিংবা মোরোব্বা, অথবা সকালে কাঁচা আমলকি, ভাতে সিদ্ধ -খেতেই পারেন। শীতকালে কেন জরুরি আমলকি খাওয়া? এর কী কী গুণাগুণ আছে জানেন?
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান থাকার জন্য বিপাকের হার বাড়ে। ভাইরাল এবং ব্যাক্টেরিয়াল আক্রমণের জন্য সর্দি কাশির সঙ্গে যুঝতে সাহায্য করে। আমলকি, গুড় আর সন্দক লবণ দিয়ে ক্যান্ডি বানিয়েও খাওয়া যায়। দিনে তিন চারবার খাওয়ার পরে খাওয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
প্রচুর পরিমাণে ক্রোমিয়াম থাকায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিসের রোগীরা ভাববেন না চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধের বদলে এগুলো খাওয়া যেতে পারে। বরং ওষুধের পাশাপাশি রোজকার ডায়েটে রাখতে পারেন আমলকি।
ভিটামিন সি-তে ভরপুর
কমলালেবুর চেয়ে আট গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে আমলকিতে। বেদানার চেয়ে ১৭ গুণ বেশি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। এক গ্লাস পানিতে দু চামচ আমলকি পাউডার, দু’চামচ মধু দিয়ে খেলে সর্দি কাশিতে খুব আরাম হয়। দিনে তিন চারবার খেতে হবে।
চুল এবং ত্বকের স্বাস্থ্য মজবুত রাখে
অসময়ে চুল পেকে যাওয়া আটকাতে পারে আমলকি। এছাড়া চুলের গোড়া মজবুত করতে, খুস্কি দূর করতে এবং ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া কমাতেও সাহায্য করে আমলকি।
হজম শক্তি বাড়ায়
পাচন ক্রিয়ায় খুব সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বদ হজম এবং অ্যাসিডিটিতেও খুব কাজে দেয়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
তুলসীর গুণাগুণ
ডা: এম এ রাজ্জাক
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জগতের সব কিছুই তাঁর প্রিয় মানবের উপকরার্থে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের জানা, চেনা, দেখা ছাড়াও অসংখ্য যাতের তরুলতা বৃক্ষরাজি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এর কয়টির গুণাগুণইবা আমরা জানতে পারি। আর এর ব্যবহার করে মানবের উপকারে আনা গেছে? কালের বিবর্তনে- অনেক উদ্ভিদের অনেক উপকারী দিক জানতে সক্ষম হয়েছেন পণ্ডিতগণ। তেমনই অসংখ্য গুণের অধিকারী একটি ছোট বৃক্ষ ‘তুলসী’। প্রবাদ আছে, যে বাড়িতে তুলসীর বন আছে। সেখানে কোনো ভাইরাস সংক্রমণজনিত রোগ হয় না।
তুলসীর বহুল ব্যবহারে মূলে প্রগাঢ় বৈজ্ঞানিক যুক্তিও নিহত আছে। আধুনিক মতে তুলসী এন্টি ব্যাক্টিরিয়াল। তুলসী গাছের স্পর্শ পাওয়া হাওয়া শুধু পবিত্রই নয়, তা সংক্রামক ব্যাধিকে দূরে রাখে। ভারত উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকে এ ধারণা বদ্ধমূল। তুলসী দুর্গন্ধহারক, পচন নিবারক, সর্বপ্রকার রোগ বীজ বিধ্বংসী। তুলসীর ২-৪টি পাতা পানির মধ্যে দিয়ে পানির সব দোষত্রুটি নষ্ট করা যায়। ভোজদ্রব্যে বা নৈবেদ্য এর ৪-২টি পাতা দিয়ে রাখলে তা কোনোরূপ জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয় না এবং ভালো থাকে দীর্ঘ দিন।
আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এটি ২-৩ ফুট উঁচু হয়। সাধারণত ১-৩ বছর পর্যন্ত বাঁচে। তুলসীর যেমন অনেক গুণ তেমনি অনেক নামে চিনে, আবার এর অনেক ধরনও পরিলক্ষিত হয়। আমাদের দেশে দেখতে পাই-
বন তুলসী/দুলাল বা বাবুই তুলসী/তোকমারী বা একে তোকমা বলা হয়, গোলা তুলসী/রাম তুলসী/বনজরি/ফানিজ্জক/কর্পর তুলসী/শ্বেত তুলসী।
ব্যবহৃত অংশ : অনেক ভেষজের কোনো কোনো নির্ধারিত অংশ ব্যবহার হয়। তুলসীর সব অংশই ব্যবহার হয়। ফুল, বীচি, পাতা, কাণ্ড, ছাল, শিকড় সবই ঔষধি গুণ সম্পূর্ণ বিশেষ বিশেষ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
গুণাগুণ : বাস্তবিক পক্ষেই তুলসী বৃক্ষ গুণে ভরপুর। অপরিসীম উপকার সাধনের একটি ভেষজ উদ্ভিদ। যার তুলনা শুধুই তুলসী। হিন্দুদের প্রতিটি দেবপূজাতেই তুলসী অত্যাবশ্যক। বৈষ্ণবগণের নিকট তুলসী পাতা অতি পবিত্র। বিষু অমৃত মন্থনকালে জীবসমূহের উপকারার্থে সর্ব ঔষধিরস দিয়ে তুলসীকে সৃষ্টি করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তুলসী তলার মাটিকে তাদের হরির ধুলা বলে অভিহিত করে থাকেন। একজন বিদ্যুৎ বিষয়ক বিজ্ঞানী জানান- তুলসী বৃক্ষের বৈদ্যুতিক শক্তি এত প্রবল যে, জগতের কোনো বৃক্ষরই এরূপ শক্তি নেই। তুলসী মানব দেহের বিদ্যুৎ প্রবাহের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে সক্ষম এবং অবস্থা বিশেষে তা বৃদ্ধি করতেও সক্ষম।
বজ্রাহত অচেতন ব্যক্তির সর্বাঙ্গে দ্রুত/সত্বর তুলসীর রস মর্দন করলে তৎক্ষণাৎ তার দেহে বৈদ্যুতিক প্রবাহ সৃষ্টি হয়ে তার জ্ঞান সঞ্চার হয়। ঘরে ব্যবহৃত বজ্রনিবারক লৌহ শলাকা অপেক্ষা নাকি তুলসী শক্তিশালী।
এর মূল ধারণ করলে বজ্রাহত হওয়ার ভয় থাকে না। পাতা যুক্ত তুলসীর ডাল হাতে থাকলে তার গায়ে কখনোই মশা কামড়াতে পারে না। তুলসীর রস গায়ে মাখলেও মশা কামরাতে পারে না।
এটি যে স্থানে রোপিত থাকে তার চারদিকের প্রায় দু’শ গজ স্থানের বায়ু শোধিত থাকে। তুলসী তলার মাটি পর্যন্ত তুলসীর গুণ প্রাপ্ত হয়ে থাকে। বায়ু তুলসীর গন্ধবহন করে যে স্থানে গমন করে তার দশদিক ও চতুর্বিধ প্রাণী পবিত্র হয়। এর গন্ধ দ্বারা বায়ু ওষুধি গুণসম্পন্ন হয়। এর পাতা যে স্থানে পতিত হয়, সে স্থান পবিত্র হয়ে যায়।
তুলসীর রস শরীরে দূষিত রক্ত সংশোধন করে। এটি বাত রক্ত ও গলিত কুষ্ঠরোগে পরম উপকারী। প্রতিদিন তুলসী পাতার রস সেবন করলে এ ধরনের রোগী সুস্থ থাকতে পারে। শ্বাসকষ্টে বেশ ফলপ্রদ, শিশুদের ক্ষেত্রে আরো কার্যকরি। রোগী চিৎ হয়ে শোতে গেলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট তৎসহ যদি সার্দ, হাঁচি, কাশি থাকে এবং জ্বর। চিৎ হয়ে শুইলে বিকালে, রাতে।
জ্বর, ঠাণ্ডা, হাঁচি সর্দ্দি, নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াতে। ছোট থেকে বয়বৃদ্ধ এবং অচির ও চিররোগের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ রোগী ভালো আছেন। কেউ সম্পূর্ণ ভালো। কারো পুরাতন শ্বাসকষ্টে যারা শীত ছাড়াও ইনহেলার বা নেবুলাইজার দিতে হতো দিনে ১ থেকে ৫-৭ বার, তারাও ভালো আছে আল্লাহর মেহের বাণীতে। ঙপরসঁস এর কাজ লক্ষণ মিললে কোনো প্রকার কাজ হয়নি এমনটা আমার মনে আসে না।
লেখক : প্রভাষক তানজিম হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ। চেম্বার : দি সিটি হোমিও ইন্টারন্যাশনাল, ২৩ জয়কালী মন্দির রোড, ঢাকা। ফোন : ০১৯১২৮৪২৫৮৮