চীনকে দমনে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট ফ্লিট!
যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট ফ্লিট! - ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন নৌমন্ত্রী কেনেথ ব্রিথওয়েট গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছেন যে তার দেশ নতুন একটি বহর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, আমরা ভারত ও প্যাসিফিক মহাসাগরের জন্য ওই বহর প্রতিষ্ঠা করব। আমরা ইন্দো-প্যাকমে আমাদের অবস্থান সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। আমরা সিঙ্গাপুর, ভারতের মতো আমাদের অন্য মিত্রদের বিষয়টি দেখছি।
গত চার বছর ধরে যারা ভারত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপগুলোর দিকে নজর রাখেন তারা এতে অবাক হবেন না। কয়েক বছর আগেই প্যাসিফিক কমান্ডকে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডে পরিবর্তন করে। আর এতে করে এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বেশি গুরুত্বারোপকেই ফুটিয়ে তুলেছে। এই মহাসাগর চীনা অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখান দিয়েই চীনের বেশির ভাগ বাণিজ্য হয়ে থাকে। ভারত মহাসাগরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আরো অনেক কার্যকরভাবে চীনকে সংযত করতে পারব।
এই প্রেক্ষাপটে কেবল এই দায়িত্ব পালনের জন্যই যুক্তরাষ্ট্র একটি নৌবহর গড়ে তুলেবে,সেটাই স্বাভাবিক। এখন সবার মনে প্রশ্ন, এই নৌবহরের ঘাঁটি কোথায় হবে? তবে মার্কিন নৌমন্ত্রী এই প্রশ্নের জবাব দেননি। তবে তা ভারতেও হতে পারে বলে ক্রমবর্ধমান হারে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে মৌলিক চুক্তি হয়েছে, কয়েক বছর ধরে তারা আইনগত, লজিস্টিকগত ও কারিগরি সহায়তা বিনিময় করছে। বিশেষ করে ২০১৬ সালে লজিস্টিক এক্সচেঞ্চ মেমোরেন্ডাম অব এগ্রিমেন্ট (এলইএমওএ) সই করার ফলে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সহযোগিতা আরো সহজ হয়ে পড়েছে।
ফার্স্ট ফ্লিট নামের এই বহরটির ঘাঁটি সিঙ্গাপুরেও হতে পারত। কিন্তু ভারতই মনে হয় অনেক বেশি সুবিধাজনক হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। বিশেষ করে ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এ কাজের জন্য কার্যকর বিবেচিত হতে পারে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট ফ্লিটকে সহযোগিতা করতে ভারত সবকিছুই করতে রাজি থাকবে।
আর এই বহরটি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই ভালো হবে বলে ধারণা করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। ভারত চাচ্ছে, ভারত মহাসাগরজুড়ে তার নৌবাহিনীর অবস্থান জোরদার করতে। কিন্তু নিজেদের শক্তিতে তা করতে তারা মারাত্মক সমস্যায় পড়ছে। নৌশক্তিতে পরিণত হতে ভারতের অনেক সময় লাগবে। অথচ প্রয়োজন এখনই। এই কাজ করতে অভিজ্ঞতা আছে, এমন কোনো সাথী খুঁজছে ভারত। আর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নৌশক্তির অধিকারী যুক্তরাষ্ট্র সহজেই ভারতের প্রয়োজন মেটাতে পারে।
আমেরিকার দৃষ্টিকোণ থেকে ট্রাম্পের বোঝা ভাগাভাগি করার নীতি এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প হেরে গেলেও এ ব্যাপারে অনেক কাজ করে গেছেন তিনি। ফলে জো বাইডেনের মনে যাই থাকুক না কেন, তাদের পক্ষে তা থেকে পিছিয়ে আসা কঠিন হবে। তাছাড়া ভারতের সাথে সামরিক জোট গঠনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের উভয় দলের মধ্যেই সমঝোতা আছে। ফলে ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান, যে দলের থেকেই প্রেসিডেন্ট আসুন না কেন, আমেরিকা বিশ্বে তার অন্যতম প্রক্সি রাষ্ট্রটিকে সমর্থন করেই যাবে।
সার্বিকভাবে ফার্স্ট ফ্লিট সম্ভবত আমলাতান্ত্রিক পরিবর্তনে কোনোভাবে প্রভাবিত হবে না। এই বহর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতা আরো বাড়াবে। উভয় দেশই চীনকে সংযত করার অভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে আগ্রহী। এর জবাবে চীনও তার নৌশক্তি বাড়াতে পারে। আর এক্ষেত্রে সে পাকিস্তান, মিয়অনমার ও পূর্ব আফ্রিকান উপকূলীয় দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ক জোরদার করতে পারে।