ইসরাইলকে স্বীকৃতি : পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে সৌদি আরব?
ইসরাইলকে স্বীকৃতি : পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে সৌদি আরব? - ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত সপ্তাহে শিরোনামে এসেছিলেন এ কথা বলে যে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে কয়েকটি বন্ধুপ্রতীম দেশের কাছ থেকে চাপের মুখে রয়েছে পাকিস্তান।
কয়েকবার প্রশ্ন করা হলেও ইমরান খান ওই দেশগুলোর নাম প্রকাশ না করলেও অনেকে মনে করেন, তিনি আসলে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কথা বলেছেন।
সাক্ষাতকার গ্রহণকারীকে ইমরান খান বলেন, এই প্রশ্নটি বাদ রাখুন। অনেক কথা আমরা বলতে পারি না। তাদের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক আছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সম্প্রতি ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। সৌদি আরবসহ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশও সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে ভাবছে।
ইমরান খঅন আরো বলেন, আসুন আমরা অর্থনীতির দিক থেকে নিজেদের পায়ে দাঁড়াই। তারপর এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারব। তিনি তেল-ধনী উপসাগরীয় দেশগুলোর ওপর ইসলামাবাদের দীর্ঘ দিনের নির্ভরশীলতার দিকে ইঙ্গিত করেন।
কয়েকটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করলেও ইসলামাবাদ তা নাকচ করে দেয়।
ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে বলে কয়েকটি মিডিয়ার খবরবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বানোয়াট হিসেবে অভিহিত করে জানায়, ইসলামাবাদের ওপর এ ধরনের কোনো চাপ নেই।
অন্যদিকে সৌদি আরব এখন পর্যন্ত ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দিলেও ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়ে থাকে যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন রিয়াদের অনুমোদন ছাড়া রেড লাইন অতিক্রম করেনি।
সরকারি কোনো সত্যতা নেই
করাচিভিত্তিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকি বলেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে প্রায়ই লেখালেখি করেন, তেল আবিবের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য ইসলামাবাদের ওপর রিয়াদের চাপ সৃষ্টির সম্ভাবনাটি উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সিদ্দিকি আনাদুলুকে বলেন, সৌদি আরবের চাপের বিষয়টি আমরা প্রত্যাখ্যান করতে পারি না। তিনি বলেন, পাকিস্তান যদি ইহুদি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তবে কৃতিত্ব যাবে রিয়াদের কাছে।
তিনি সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এমবিএস বেশ হিসাবি। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিপ এরদোগান যা বলেছিলেন, সে কথা মনে করে দেখুন। তিনি বলেছিলেন, ডিসেম্বরে কুয়ালামপুরের শীর্ষ সম্মেলনে ইমরান খান যোগ দিলে সৌদি আরব সব পাকিস্তানি শ্রমিককে ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল।
পাকিস্তান শেষ মুহূর্তে ওই সম্মেলনে যোগ দেয়নি সৌদি আরবের চাপের কারণে। উল্লেখ্য, ওই সম্মেলনকে বিকল্প ওআইসি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল।
সিদ্দিকি বলেন, পাকিস্তানি কর্মকর্তারা, এমনকি সাবেক কর্মকর্তারা পর্যন্ত ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে কোনো চাপ আছে কিনা তা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি।
তবে কোনো দেশ যদি চাপ দিয়ে থাকে, তবে তার মধ্যে কি সৌদি আরব থাকতে পারে?
সৌদি চাপ নেই
ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে. জেনারেল (অব.) তালাত মাসুদ বলেন, ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে পাকিস্তানকে চাপ দিচ্ছে না সৌদি আরব।
তিনি আনাদুলু এজেন্সিকে বলেন,একেবারে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্যই আরব দেশগুলো ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানকে এ ব্যাপারে প্রলুব্ধ করতে সৌদি আরব সামান্যই কিছু করতে পারে। মোটামুটিভাবে আমি বলতে পারি, কোনো চাপ নেই।
সৌদি আরবে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত শহিদ আমিনও একই অভিমত প্রকাশ করে বলেন, সৌদি আরব কেন চাপ দেবে? তিনি অবশ্য স্বীকার করেন, আবু ধাবি ও মানামা রিয়াদের সম্মতিতেই তেল আবিবের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।
তবে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কারণে রিয়াদের এই কাজটি করা কঠিন হবে। কারণ সৌদি আরব মুসলিমবিশ্বের নেতা। ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলে তারা অনেক সমস্যায় পড়ে যাবে।
ইসলামাবাদ চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না
তবে সৌদি আরব যদি পাকিস্তানকে চাপও দেয়, তবুও ইসলামাবাদ তাতে নতি স্বীকার করবে না বলে মাসুদ জানান।
তিনি বলেন, বিষয়টি সৌদি আরবও জানে। তিনি বলেন, ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলে যে চরমপন্থীদের প্রত্যাঘাত সৃষ্টি হবে, তা দুর্বল ইমরান খান সরকার সামাল দিতে পারবে না।
উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে পাকিস্তানের ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। সৌদ আরব, আমিরাত, কাতার ও কুয়েত থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাঠায় প্রবাসী পাকিস্তানিরা। সৌদি আরব ও আমিরাতেই আছে ৩০ লাখের বেশি পাকিস্তানি। সৌদি আরবেই বাস করে ১.৯ মিলিয়ন পাকিস্তানি। তারা বছরে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় পাঠায় পাকিস্তানে। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসে ৩.৪৭ বিলিয়ন ডলার।
আবার এসব দেশ থেকে পাকিস্তান বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল আমদানি করে। ২০১৯.২০ অর্থ বছরে এসব দেশে বিপুল পরিমাণে পণ্য রফতানি হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইয়েমেন যুদ্ধ, কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ ইত্যাদি কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কে ভাটা পড়েছে।
সূত্র : আনাদুলু এজেন্সি