দোটানায় সৌদি আরব : দুটি হারানোর শঙ্কা!
মোহাম্মদ বিন সালমান - ছবি সংগৃহীত
সর্বশেষ উন্নয়নের অন্তরালের যে খবর তাতে জানা যায়, ইসরাইলের নিরাপত্তা আশ্রয়ে থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত চাইছে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্য মুসলিম দেশগুলোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নেতা হতে। এতে আরব বিশ্বে সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রক প্রভাবের যেমন ক্ষতি হবে তেমনি দেশটির জনগণের মৌলিক ভাবনা থেকে বিচ্যুত হয়ে ক্রমেই এক নিপীড়ক রাজতন্ত্রে পরিণত হবে সৌদি শাসন। এর চেয়ে সৌদি আরবের সাথে ঐতিহ্যগতভাবে মুসলিম ব্রাদারহুড ও অন্যান্য ইসলামী সংগঠনগুলোর যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক ছিল সেটি পুনর্নির্মাণ করা গেলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত এবং রাজতন্ত্রের পতনের ঝুঁকি অনেকখানি কমে আসবে বলে ধারণা করছে সৌদি রাজতন্ত্রের ক্ষমতাবলয়। নতুন মূল্যায়ন অনুসারে ইরান-তুরস্ক দুই শক্তির মোকাবেলা করতে গিয়ে ইসরাইলের নিরাপত্তা আশ্রয়ে যাওয়ার যে মূল্য সৌদি আরবকে দিতে হবে সেটি দেশটির আদর্শগত চেতনা এবং অখণ্ডতার বিবেচনায় অনেক বেশি।
নতুন ভাবনা অনুসারে সৌদি আরব আবার উম্মাহর মৌলিক এজেন্ডায় ফিরে আসতে পারে। ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতা দেয়ার ইস্যুকে আলোচনা-সমঝোতার সামনে নিয়ে আসবে। মুসলিম ব্রাদারহুডকে নির্মূল করার কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে আগের মতো রাষ্ট্র গঠনে সহযোগিতার সম্পর্ক নির্মাণ করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলের সহযোগিতায় তুরস্কের ক্ষমতা থেকে এরদোগান ও একে পার্টিকে আগামী নির্বাচনে বিদায় করে কামালপন্থী উগ্র ধর্মনিরপেক্ষ পিএইচপিকে ক্ষমতায় আনার যে কার্যক্রম চালাচ্ছে তা থেকে সরে আসবে রিয়াদ। আঙ্কারাও সৌদি শাসনের সামনে বিদ্যমান ঝুঁকি অপসারণে সহায়তা দেবে। বিশেষত, ইয়েমেনে হুথিদের সাথে অব্যাহতভাবে চলমান যুদ্ধ অবসানে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। সিরিয়ায় প্রতিনিধিত্বমূলক একটি ব্যবস্থা এবং শরণার্থীদের পুনর্বাসনে অভিন্ন ভূমিকা পালন করবে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে ফাতাহ ও হামাসের ব্যাপারে গঠনমূলক সহায়তা প্রদান করবে দুই দেশই।
এটি বাস্তবে রূপায়িত হলে মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি বলয়ে এখন যে বিভাজন রয়েছে, তা অনেকখানি কেটে যাবে। আমিরাতের ইসরাইলের এক্সটেনশন হিসাবে রাখা ভূমিকা উম্মাহর বড় ক্ষতির কারণ হতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক-সৌদি যৌথ শক্তি অনেক ইস্যুর নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
এ বিষয়গুলো সহজভাবে বাস্তবে রূপ নিতে পারবে এমনটি প্রত্যাশা করা যায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি সম্পর্কে যে ধারণা করা যায় তাতে এই অঞ্চলকে প্রত্যক্ষভাবে চীন-রাশিয়ার প্রভাব বলয়ের একতরফা নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখার জন্য ন্যাটো মিত্র তুরস্ক ও কৌশলগত আমেরিকান মিত্র সৌদি আরবের মধ্যকার দূরত্ব ঘোচানোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ওয়াশিংটনের সামনে।
আর বাইডেন প্রশাসন যদি ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তিতে ফেরত গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ভূমিকাকে প্রধান করে তুলতে চায় সেক্ষেত্রে চীন-রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধির একটি ঝুঁকিও থেকে যেতে পারে। ফলে বাইডেন প্রশাসনের জন্যও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সৌদি-তুরস্ক সমঝোতার বিষয়টিকে সমন্বয় করে মধ্যপ্রাচ্য নীতি বিন্যাস করা আমেরিকান স্বার্থ অনুকূল বিবেচিত হতে পারে।
তবে কৌশল পরিবর্তনের কাজ সৌদি আরবের জন্য একেবারে সহজ হবে না। এর মধ্যে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে গিয়ে গোপন বৈঠক করেছেন সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের সাথে। ব্যক্তিগত জেটে সেখানে তিনি ইসরাইলি গোয়েন্দা প্রধানকেও নিয়ে যান। সেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও উপস্থিত ছিলেন। ইসরাইলি পত্রিকা হার্টজ এ বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়নি কেবল এই ইঙ্গিতটি দিয়েছে যে এটি সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক নির্ধারণে ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। সম্ভবত সৌদি নীতি প্রণেতারা এখন ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার ব্যাপারে দু’টি রাস্তাই খোলা রাখতে চাইছেন। তুর্কি সৌদি কৌশলগত সমঝোতা হলে তার রূপ হবে এক রকম, আর ইসরাইলের নির্দেশিত পথ সৌদি ভাগ্য নির্ধারণ করলে সৌদি রাজতন্ত্রে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা হবে ভিন্নমুখী। এই পথ নির্ধারণে বাইডেন প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে।
mrkmmb@gmail.com