ভারতের স্বার্থ বনাম চীন-ইরান-পাকিস্তান জোট
ভারতের স্বার্থ বনাম চীন-ইরান-পাকিস্তান জোট - ছবি : সংগৃহীত
তিন আঞ্চলিক জায়ান্ট পাকিস্তান, চীন ও ইরানের অবস্থান তিন আঞ্চলিক জোনে- দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে। অথচ তিন দেশই ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।প্রাচুর্যপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ ও মধ্য এশিয়ার সাথে ঐতিহাসি ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত ও নিরাপত্তা অবস্থানের কারণে ইরান গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হয়ে আছে।অর্থনৈতিক শক্তি, ভেটো শক্তি, বৈশ্বিক প্রভাব, কানেকটিভিটি সৃষ্টিশীলতার কারণে চীন পরবর্তী বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছে।মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পরমাণু শক্তির অধিকারী পাকিস্তানের রয়েছে বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ব্যাপক অভিজ্ঞতা। অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা উভয় দিক থেকে উদীয়মান আঞ্চলিক কেন্দ্র,এর সম্পর্কের ঘনিষ্ঠ ইতিহাস, এর ভূরাজনৈতিক আঞ্চলিক গুরুত্ব তাকে ত্রয়ী সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।
এই তিন দেশ ভৌগোলিকভাবে, ভূরাজনৈতিকভাবে, প্রতিবেশ-কৌশলগতভঅবে চরম গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক অঞ্চলে অবস্থান করছে। তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক রিজার্ভ, নৌপথ, ভূগোল ও সঙ্ঘাত সারা বিশ্বে প্রভাব ফেলে। পাকিস্তান-চীন-ইরানের কৌশলগত ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলো ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে মীমাংসা করতে পারে। আফগান ইস্যু সব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোর সর্বোচ্চ গুরুত্বপ্রাপ্ত বিষয়।
আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার প্রতি চীন ও ইরানের আগ্রহ
একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তান উভয় আঞ্চলিক রাষ্ট্রের সর্বোত্তম স্বার্থ রয়েছে। গোলযোগপূর্ণ আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তান অনেক ভুগেছে। আফগানিস্তান নিয়ে চীন ও ইরানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উদ্বেগও রয়েছে। এর আগে আফগানিস্তানের সমাধানের ব্যাপারে পাকিস্তান ও ইরান একই সমতলে ছিল না, কারণ পাকিস্তান ছিল তালেবানপন্থী, ইরান ছিল নর্দার্ন অ্যালায়েন্সপন্থী। ইরান ও পাকিস্তান একে অপরকে পছন্দ করত না।
আফগানিস্তানে চীনের বিপুল স্বার্থ রয়েছে। চীন চায় আফগানিস্তানকে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় আনতে। এই দেশটির মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে প্রবেশ করতে চায় চীন। চীন মনে করে আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতা ও গোলযোগ জিনজিয়াঙ ও মধ্য এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণেই এই তিন দেশকে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এই তিন দেশের কাছে আফগানিস্তানে মার্কিন উপস্থিতি অনুকূল নয়। আর আফগানিস্তানে বিদেশী অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে চীন ও ইরান।
এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ক
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি এশিয়ার শান্তি ও ভারসাম্য বিঘ্নিত করে। ফলে পাকিস্তান ও চীন ও ইরানকে তাদের পারস্পরিক স্বার্থে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে হবে।যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তিচুক্তির জন্য পাকিস্তানকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। পাকিস্তান-রাশিয়া সামরিক মহড়া আঞ্চলিক সহযোগিতায় রুশ সম্পৃক্ততার পথ প্রদর্শন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র তার কায়েমি প্রতিরক্ষা স্বার্থে আফগানিস্তানে দীর্ঘ উপস্থিতি বজায় রাখায় ভারত সর্বাত্মকভাবে আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের ভারতের দিকে ঝোঁকা এবং আফগানিস্তানে ভারতের বর্ধিত ভূমিকা পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়েছে।
পাকিস্তান, চীন ও ইরান আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ভারতের সাথে প্রতিযোগিতা করছে
ইরানের সাথে ভারতের সম্পর্ককে পাকিস্তান ও চীনের সাথে সম্পর্কের মতো উত্তেজনাকর মনে না করা হলেও যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের স্বার্থেই ইরানের বিরুদ্ধে ভারত ও ইসরাইলকে ব্যবহার করতে পারে। ভারত-ইরান অনেক চুক্তি এখনো পেপারওয়ার্ক ছাড়া আর কিছুই নয়। এছাড়া ইরান-পাকিস্তান-ভারত গ্যাস পাইপলাইন চুক্তি থেকে ভারতকে বের হয়ে আসতে বাধ্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তান-চীন-ইরান সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন নীতি সবসময়েই ভারতের অনুকূলে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব হ্রাস ও এই অঞ্চলের একমাত্র আঞ্চলিক শক্তি হওয়ার ভারতীয় স্বপ্ন থামাকে একত্রিত হতে পারে পাকিস্তান-চীন-ইরান।
এশিয়ার বাকি রাষ্ট্রগুলো অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী নয় বা প্রতিরক্ষার দিক থেকে আলোচনায় আসার মতো নয়। এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্র-ভারতীয় চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে পারে। পাকিস্তান-চীন-ইরান ত্রিজোট এককভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে এগিয়ে নিতে মার্কিন সম্পৃক্ততা প্রতিরোধ করতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশ এখন ভারতকে বাদ দিয়ে চীনের সাথে যোগ দিচ্ছে, ওইসব দেশকে ভারত ভয় দেখাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনাকর সম্পর্কের বিবেচনায় ইরানকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকেই বেছে নেবে ভঅরত। ফলে ইরানের উচিত হবে পাকিস্তান ও চীনের সাথেই জোটবদ্ধ হওয়া।
সূত্র : গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস