মুখ থুবড়ে পড়ছে মোদির আত্মনির্ভর ভারত?
নরেন্দ্র মোদি - ছবি : সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতকে আত্মনির্ভর করার উদ্যোগ, যা ব্যাপকভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করার লক্ষ্য হিসেবে দেখা হয়, গতি পাচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে। কারণ গত মার্চে উদ্যোগটি শুরু হওয়ার পর থেকে চীন থেকে আমদানি না করে বাড়ছে।
চীন কেবল ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ও আমদানির উৎস হিসেবেই বহাল থাকছে না, সেইসাথে নতুন সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত বছর মোট আমদানি বৃদ্ধি যেখানে হয়েছিল ১৩.৭ ভাগ, সেখানে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি বছরের ছয় মাসে বেড়েছে ১৮.৩ ভাগ।
এর অন্যতম কারণ ভারতের আমদানির প্রকৃতিতে নিহিত রয়েছে। ভারতের আমদানির অর্ধেকের বেশি হলো তৈরী পণ্য। আর মোদির ‘ভোকাল ফর লোকাল’ স্লোগানগুলো দিতে সহজ, কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগ খুবই কঠিন।
চীনের অর্থনৈতিক উপস্থিতি কমানোর জন্য ভারত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, শত শত মোবাইল অ্যাপস নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি চীনা বিনিয়োগের ওপর বিধিনিষেধ, ৩১ বছর বয়স্ক সমীর থাডানিসহ ভারতের অনেক ব্যবসায়ীর কাছে চীনা পণ্য আমদানি হ্রাস করা কঠিন বিষয়।
থাডানির কোম্পানি সেনতাই মেটালস চীন থেকে তালা, চেইন, বকলেস আমদানি করে থাকে। এগুলো উচ্চমানের বিলাসবহুল ব্যাগে ব্যবহৃত হয়। এগুলো রফতানি হয় ইউরোপে। তিনি আশঙ্কা করছেন, তিনি যদি ভারতে তৈরী বিকল্প সামগ্রী ব্যবহার করেন, তবে তার ক্রেতারা হাতছাড়া হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ভারতীয় ফিটিংস চীনাদের মতো মানসম্পন্ন নয়। ফিটিংস যদি চাকচিক্যপূর্ণ না হয়, তবে পুরো ব্যাগটিই বাতিল হয়ে যায়।
একই অবস্থায় পড়েছেন সৌরেভ পটনিস। তার কোম্পানি ফ্যাবরিনক্স পোটনিস পা-চালিত হ্যান্ডওয়াশিং স্টেশন প্রস্তুত ও রফতানি করে। তিনি এপ্রিল থেকে দেশে তৈরী বিকল্প খুঁজছেন। কিন্তু পাননি। তিনিও আমদানি করে থাকেন চীন থেকে।
৩৫ বছর বয়স্ক এই ভদ্রলোক বলেন, চীনা সামগ্রীর মতো মানসম্পন্ন কিছু এখান কেউ তৈরী করে না।
ভারতীয় অর্থনীতিতে কয়েকটি খাতে অবশ্য চীনা আমদানি হ্রাস পেয়েছে। তবে তা সরকারি নীতির কারণে নয়, বরং করোনাভাইরাসের কারণে।
সন্তোস কাম্বলের বিজক্র্যাফট সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড বছরে ৩০ লাখ ব্যাগ তৈরী করতে পারে। কিন্তু করোনার কারণে তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। তারা চীন থেকেই তাদের পণ্য আমদানি করত।
দলিত ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টি ইন মহারাষ্ট্রের সভাপতি কাম্বলে বলেন, মহামারি হ্রাস পাওয়া মাত্রই চীনা পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। তিনি বিশেবর সবচেয়ে বড় সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, ভারতকে এই সুযোগ গ্রহণ করতে হবে।
গত সপ্তাহে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ঘোষণা করে যে দেশটি তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রায়োগিক মন্দার কবলে পড়ছে। টানা দ্বিতীয় কোয়ার্টারের মতো দেশটির সঙ্কোচন হচ্ছে, এবার হচ্ছে ৮.৬ ভাগ। এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটিরে এপ্রিল থেকে জুনে সঙ্কোচিত হচ্ছে ২৪ ভাগ।
এছাড়াও মোদি সম্প্রতি দাবি করেছেন, ভারতের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পর্যায়ে রয়েছে এবং ২০২৪ সাল নাগাদ তার দেশের অর্থনীতির আকার হবে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের। বর্তমানে তা রয়েছে ২.৮ ট্রিলিয়ন ডলারের। অবশ্য মঙ্গলবার অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রবৃদ্ধি ৪.৫ ভাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
ভারত সরকার অবশ্য এখনো আত্মনির্ভরতার পথেই হাঁটতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভারতকে ছাড়াই ১৫টি দেশ রিজিওন্যাল কম্প্রেহেনসিভ ইকোনমিক প্রগ্রামের (আরসিইপি) সই করার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, তার দেশ আত্মনির্ভরতার দিকে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ভারতের এই নীতির ফলে দেশটির ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকার ২৬৫ বিলিয়ন ডলারের করোনা প্রণোদনার কথা ঘোষণা করলেও এখনো তা উদ্যোক্তাতাদের হাতে আসেনি বলেও তারা জানান।
আবার মোদি সরকার বারবার শিল্পপতিদের জন্য সহজ, স্বল্প বয়ের ঋণের কথা বললেও দেশটির ব্যাংকিং খাত মারাত্মক চাপের মুখে থাকায় তা কার্যকর করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
দলিত চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের কাম্বলে বলেন, সরকারের উচিত স্লোগানগুলো কার্যকর করা। তিনি বলেন, ক্রেতারা দেশীয় জিনিস খুব একটা চায় না। এমনকি ভারতে তৈরীর জন্য বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোরও প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন।
সূত্র : এসসিএমপি