অঘটন ঘটিয়েই চলেছেন ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প - ছবি : সংগৃহীত
নির্বাচনে হেরে গিয়েও বিদায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন নানা অঘটন ঘটিয়ে চলেছেন। তিনি হোয়াইট হাউজে থাকবেন কাঁটায় কাঁটায় আরো দুই মাস। এ সময়ে আরো কী অঘটন ঘটান, এটাই ভয়ের কারণ। ইতোমধ্যে তিনি তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপারকে বরখাস্ত করেছেন। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে সুরক্ষিত নির্বাচন’ বলায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রধান ক্রিস ক্রেবসকেও বরখাস্ত করেন তিনি। গোলান উপত্যকায় ইসরাইলি সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণাপত্রে সই করেছেন ট্রাম্প। সেই গোলানে শেষ সময়ে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেওকে পাঠিয়েছেন। ইসরাইলের দখলকৃত ফিলিস্তিনের এই অবৈধ ইহুদি বসতিতে পম্পেওর ভ্রমণকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম নজিরবিহীন ঘটনা বলে বর্ণনা করেছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনেরও পরিপন্থী। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলি জবর দখলকে স্বীকৃতি দেয়নি।
বিশ্বের অন্যতম সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসির ওপর প্রচণ্ড রেগে আছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজ ছাড়ার আগে ফাউসি ট্রাম্পের রোষানলে পড়ে বরখাস্তের শিকার হন কি না অনেকে আশঙ্কা করেছেন।
গত ২০ অক্টোবরের লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, করোনাভাইরাসই কি ট্রাম্পের কপাল পুড়বে? সেটিই সত্যে পরিণত হয়েছে। করোনা মহামারী মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্যই নির্বাচনে হেরে গেছেন ট্রাম্প। এটাই তার হারার প্রধান কারণ। অন্য দিকে করোনা মহামারী বাইডেনের জয়ের অন্যতম প্রধান কারণ। করোনা বাইডেনের দিকে ভোট ঠেলে দিয়েছে। করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আড়াই লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। ট্রাম্পকে অস্থিরমতির বলে উল্লেখ করেছিলাম লেখায়। এখন পর্যন্ত তার আচরণে সেটাই দেখা যাচ্ছে। বাইডেন বৃহস্পতিবারও বলেছেন, ট্রাম্পের পুরো আচরণ আমেরিকার জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠেছে। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা না করায় মহামারীতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে বড় সত্য হচ্ছে, হোয়াইট হাউজ ট্রাম্পের হাতছাড়া হয়ে গেছে। এর মালিকানা এখন জো বাইডেনের হাতে।
ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য বাইডেনের ট্রানজিশন টিম বিদায়ী সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছে না। কোনো প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করে জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্টেশন (জিএসএ)। এবার সেই প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো সংস্থার সাথেই কাজ করতে পারছেন না তিনি। নিয়মিত গোয়েন্দা ব্রিফিংও পাচ্ছেন না। তবে ট্রাম্পের সাবেক ও বর্তমান কিছু কর্মকর্তা ইতোমধ্যে বাইডেনের ট্রানজিশন টিমের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনও বসে থাকেননি। ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতি তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। তার প্রশাসনের জন্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিচ্ছেন। নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করে মন্ত্রিসভা ঠিক করছেন। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করেছেন।
স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে বৈঠক করেছেন। ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে ভ্যাকসিন বিতরণ নিয়ে বৈঠক করেছেন। রাজ্যের গভর্নরদের সাথে বৈঠক করেছেন। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেয়ার পর তার করণীয় ঘোষণা করেছেন। প্রথম কাজ হবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা। এ ছাড়া ট্রাম্পের নেয়া নীতিমালা দ্রুত সংস্কার, যে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা প্রত্যাহার, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অনুদান দেয়া আবার শুরু করা, শিশু বয়সে যারা বৈধ কাগজ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া, প্রেসিডেন্ট ওবামার কিছু নীতির পুনর্বহাল, বর্ণভিত্তিক বৈষম্য উচ্ছেদ করতে প্রশাসনে ভিত তৈরি ইত্যাদি জরুরি পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে জো বাইডেন তার বিজয়ী ভাষণে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ঐক্য, সহনশীলতা ও সহযোগিতার সমাজ গড়ে তোলাই হবে আমার কাজ। তিনি বলেন, আর বিভাজন নয়, বিভেদ নয়, ঐক্য চাই। কোন রাজ্য নীল আর কোন রাজ্য লাল, তা দেখব না। আমি দেখব যুক্তরাষ্ট্রকে। কে আমাকে ভোট দিলো আর কে দিলো না, তা নয়। আমি সবার প্রেসিডেন্ট হতে চাই। আমরা বিজ্ঞানকে অনুসরণ করব।’
ট্রাম্পের ফল না মানার তৎপরতার বিরুদ্ধে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ট্রাম্পের এ তৎপরতায় নির্বাচনীব্যবস্থায় অনাস্থা বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে দুর্বল করবে।
জো বাইডেনের বিজয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছেন। বলছেন, আমাদের আমেরিকা, তাকে আমরা ফিরে পেয়েছি। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রাসী আচরণ, বর্ণবাদ উসকে দেয়া, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের কর্মকাণ্ডে নিন্দা না জানানো এবং সর্বশেষ করোনা মহামারীকে উপেক্ষা করায় আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু এবং লাখ লাখ মানুষ বেকার হওয়ায় এক অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে এখন পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, এটিই যুক্তরাষ্ট্র এবং বাইরের দুনিয়ার মানুষ আশা করছে। কারণ এবারের নির্বাচনে বাইডেন-কমলা জুটি বাজিমাত করেছেন।