আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তানের পরিকল্পনা
আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তানের পরিকল্পনা - ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সাথে বিশদ বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা আনার জন্য গত দুই বছরে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের পর্যালোচনা করা হয়।
বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম সফরকালে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সাথে তিনি বৈঠক করেন। প্রেসিডেন্ট ঘানির আমন্ত্রণে দিনব্যাপী এই সফরে যান প্রধানমন্ত্রী খান।
একটা শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, ঐক্যবদ্ধ, গণতান্ত্রিক, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধশালী আফগানিস্তান গড়ার ব্যাপারে পাকিস্তানের সহায়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী খান। তিনি তার দীর্ঘদিনের মত পুনর্ব্যক্ত করে বলেন যে, আফগানিস্তানের সমস্যার কোন সামরিক সমাধান নেই এবং আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক পথেই এর সমাধান হতে হবে।
আলোচনার সাথে জড়িত সব পক্ষের প্রতি ইমরান খান সহিংসতা কমানোর আহ্বান জানান যাতে একটা অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছানো যায় এবং বেসামরিক মানুষের প্রাণক্ষয় বন্ধ হয়। একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক, ব্যাপকভিত্তিক ও সামগ্রিক রাজনৈতিক সমঝোতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শান্তি প্রক্রিয়ায় আফগানদের নেয়া সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানাবে পাকিস্তান। শান্তি প্রক্রিয়া ভেস্তে দেয়ার জন্য চেষ্টা চলছে বলেও সতর্ক করে দেন তিনি।
ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর জেনারেল লে. জেনারেল ফায়েজ হামিদও প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলেন। বৈঠকের পরে ইমরান খান আশরাফ ঘানির সাথে মিলে সংবাদ সম্মেলন করেন। ইমরান খান বলেন যে, পাকিস্তান সহিংসতা কমানোর জন্য এবং আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
“পাকিস্তানের জনগণ আর সরকারের একটাই উদ্বেগ রয়েছে, সেটা হলো আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কারণ এই দেশের জনগণ চার দশক ধরে দুর্দশায় ভুগছে”। তিনি বলেন, তালেবানদের আমেরিকার সাথে আলোচনায় বসানো এবং চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে এবং এখন আফগান-অভ্যন্তরীণ আলোচনার ব্যাপারে পাকিস্তান যদিও তার ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু আফগানিস্তানে এখনও সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে, যেটা উদ্বেগের বিষয়।
ইমরান খান আফগান সরকারকে আশ্বস্ত করে বলেন যে, শান্তি অর্জনের জন্য পাকিস্তান সম্ভাব্য সব উপায়েই আফগানিস্তানকে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, “আপনাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সহায়তা করবে পাকিস্তান”।
আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আফগান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইমরান খান বলেন যে, তিনি অন্তত বিগত ৫০ বছর ধরে আফগানিস্তান সফরের পরিকল্পনা করে আসছেন। “আমাকে এই ঐতিহাসিক কাবুল শহরে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি খুবই খুশি। আমাদের দেশের সাথে এই দেশের ঐতিহাসিক যোগাযোগ রয়েছে”।
প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিও জোর দিয়ে বলেন যে, আফগানিস্তানের জনগণ শান্তি ছাড়া আর কিছু চায় না। তিনি বলেন, “আমাদের মূল্যবোধ এবং এই ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে একটা সামগ্রিক রাজনৈতিক সমঝোতা আর টেকসই শান্তি হলো দেশের একমাত্র ভবিষ্যৎ। আমাদের সবাইকেই এটা বুঝতে হবে যে, সহিংসতা ফিরিয়ে আনাটা কোন সমাধান হতে পারে না”।
প্রেসিডেন্ট ঘানি আরও বলেন যে, তিনি পাকিস্তান সফর করতে পারলে সম্মানিত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একটি ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করেছে। এর শিরোনাম হলো “দুই দেশ ও বিস্তৃত অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য ইসলামিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তান আর ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের অভিন্ন ভিশন”। এই উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যমুখী সহযোগিতার অংশীদারিত্বকে সামনে এগিয়ে নেয়া এবং দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং জনগণের পর্যায়ে বিনিময় বাড়ানো।
দুই নেতা নিরাপত্তা ও শান্তি সম্পর্কিত বিষয়ে কমিটি গঠনের ব্যাপারে সম্মত হন। প্রধানমন্ত্রী খান বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে বিনিময়ের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন যে, ১৬-১৮ নভেম্বর তার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা আব্দুল রাজাক দাউদের কাবুল সফরকালে দুই দেশের বাণিজ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) নিয়ে দর কষাকষি শুরু হয়েছে, এপিটিটিএ, কাস্টমস অ্যাসিস্ট্যান্স এগ্রিমেন্ট নিয়ে অগ্রগতি হয়েছে, এবং দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সূত্র : দ্য নিউজ