সালামের ৮ ফায়দা
সালামের ৮ ফায়দা - ছবি : সংগৃহীত
সালাম অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা, অভিবাদন, স্বাগতম, দোষ-ত্রুটিমুক্ত, আনুগত্য প্রকাশ ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম সালাম। মুসলমানদের পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের একমাত্র মাধ্যম সালাম বিনিময়। ছোট্ট একটি শব্দে নিহিত রয়েছে অনেক মধুময় দরদ, অগণিত মায়া-মহব্বত ও ভালোবাসা। সালামের মাধ্যমে স্থাপিত হয় বন্ধুত্ব, অর্জিত হয় ভালোবাস এবং লাভ হয় নিরাপত্তা। সালাম দাতা যেন পরোক্ষভাবে বলে আমি তোমার হিতাকাক্সক্ষী, নিরাপত্তা দানকারী ও কল্যাণকামী। আমার পক্ষ থেকে তুমি ভয়-ভীতি ও চিন্তামুক্ত থাকতে পারো। গুডমর্নিং, হায়-হ্যালো ইত্যাদি ইসলামী অভিবাদনের শব্দ নয়। আসসালামু আলাইকুম জান্নাতিদের অভিবাদন।
পৃথিবীর আদি থেকেই সালামের প্রচলন হয়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আদম আ:কে সৃষ্টি করে বললেন, যাও ওই দলটিকে সালাম দাও। তারা হলেন ফেরেশতাদের উপবিষ্ট একটি দল। তারা তোমার সালামের জবাবে কী বলে তা মনোযোগসহকারে শ্রবণ করো। কারণ, তারা যে জবাব দেবে তা-ই হবে তোমার ও তোমার বংশধরদের সালামের জবাব। অতঃপর আদম আ: তাদের কাছে গেলেন এবং তাদের উদ্দেশে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। ফেরেশতারা জবাবে বলেন, আসসালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ। মহানবী সা: বলেন, তারা ওয়ারাহমাতুল্লাহ বৃদ্ধি করেছে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত- হাদিস নং- ৪৪২১)
১. উত্তম আমল : ইসলামী ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সুদৃঢ় ও অটুট রাখার উত্তম মাধ্যম সালাম বিনিময়। এতে ব্যক্তির উন্নত আচার-আরচণ ও উত্তম স্বভাবেরও প্রতিফলন ঘটে। আর এটি ইসলামের উত্তম আমল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত, জনৈক সাহাবি রাসূলুল্লাহ সা:কে জিজ্ঞেস করেন, ইসলামের কোন আমলটি সবচেয়ে উত্তম? রাসূলুল্লাহ সা: প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘অনাহারিকে খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত হাদিস নং ৪৪২২)
২. ভালোবাসা বৃদ্ধি হয় : সালামের মাধ্যমে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। মহানবী সা: বলেন, ‘মুমিন হওয়া ছাড়া জান্নাতে যাওয়া যাবে না, আর পারস্পরিক ভালোবাসা ছাড়া মুমিন হওয়া যাবে না। আমি তোমাদেরকে বলব কিসের ফলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো সালাম দেয়া।’ (মিশকাত-৩৯৭ পৃষ্ঠা)
৩. জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয় : মহানবী সা: বলেন, চারটি কাজ যে ব্যক্তি করবে সে নির্বিঘ্নে জান্নাতে যেতে পারবে। যেমন তিনি বলেছেন- অনাহারিকে খাদ্য দাও, সালাম দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ পড়ো; অতঃপর নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (কুরতুবি প্রথম খণ্ড-২০৮ পৃষ্ঠা, আহমদ ২/২২৯)
৪. আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হয় : মহানবী সা: হজরত জিবরাইল আ:কে জিজ্ঞেস করেন, আল্লøাহ তায়ালা হজরত ইবরাহিম আ:কে কী গুণের কারণে খলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন? হজরত জিবরাইল আ: উত্তরে বলেন, তিনটি কারণে আল্লাহ তায়ালা হজরত ইবরাহিম আ:কে খলিল বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ১. মানুষকে খাওয়ানো; ২. সালাম দেয়া এবং ৩. রাতে নামায পড়ার কারণে (কুরতুবি-পঞ্চম খণ্ড-৩০৪ পৃষ্ঠা)
৫. আল্লাহর গুণ প্রচার হয় : সালাম দেয়ার অর্থ আল্লাহর নাম প্রচার করা। সালাম আল্লাহ তায়ালার একটি গুণবাচক নাম। ভূ-বাসীর জন্য আল্লাহ তায়ালার এ নাম নির্ধারণ করেছেন। (কুরতুবি)
৬. জান্নাতিদের সাদৃশ্য হয় : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতকে এমন তিনটি বিষয় প্রদান করেছেন, যা পূর্ববর্তী কোন উম্মতকে দেননি, তা হলো- ১. সালাম দেয়া যা জান্নাতিদের অভিবাদন, ২. ফেরেশতাদের ন্যায় সারিবদ্ধ হয়ে ইবাদত করা ও ৩. আমিন বলা। তবে আমিন হজরত মুসা ও হজরত হারুন আ:-এর যুগে ছিল। হজরত মুসা আ: একদা ফিরাউনের জন্য বদদোয়া করতে ছিলেন, তখন হজরত হারুন আ: বলেন- আমিন! (ইবনে হুজাইমা-১৫৮৬)
৭. কর্তব্যকাজ সম্পাদন করা হয় : সালাম দেয়া ও তার উত্তর দেয়া হলো মুমিনের কর্তব্যকাজ পালন করা। মহানবী সা: বলেন, ‘একজন মুমিনের ওপর অপর মুমিনের ছয়টি কর্তব্য রয়েছে- ১. কোনো মুমিন অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সেবা-যত্ন করা ও খোঁজ-খবর নেয়া, ২. কোনো মুমিন মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করা, ৩. কোনো মুমিন ন্যায়সঙ্গত কোনো কাজে আহ্বান করলে তার ডাকে সাড়া দেয়া, ৪. কোনো মুমিন সালাম দিলে সালামের উত্তর দেয়া, ৫. হাঁচি দিলে হাঁচির উত্তর দেয়া, ৬. উপস্থিত ও অনুপস্থিত উভয় অবস্থায় তার কল্যাণ কামনা করা।’ (মিশকাত হাদিস নং-৪৪২৩)
৮. ইসলামের প্রতীক : সালাম ইসলাম প্রবর্তিত সর্বশ্রেষ্ঠ সম্ভাষণরীতি, যা শুধু পরস্পরের জন্য দোয়াই নয়: বরং ইসলামের প্রতীকও বটে। সালাম দেয়া সুন্নত, আর জবাব দেয়া ওয়াজিব।
জামে সগির গ্রন্থে রয়েছে- সালামের জবাব দেয়া ফরজে আইন। প্রিয়নবী সা:-এর সহচররা অধিক পরিমাণে সালাম দিতেন। এ প্রসঙ্গে তোফায়েল ইবনে উবাইইবন কাব রা: থেকে বর্ণিত- তিনি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা:-এর কাছে আসা-যাওয়া করতেন এবং তার সাথে সকালে বাজারে যেতেন। তিনি বলেন, যখন আমরা সকালে বাজারে যেতাম হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা:-এর অভ্যাস ছিল যে, তিনি যখনই কোনো সাধারণ দোকানদার, বিক্রেতা, নিঃস্ব বা অন্য কোনো লোকের কাছ দিয়ে গমন করতেন, তখন তাদের সালাম দিতেন। তিনি শুধু সালাম দেয়ার জন্য বাজারে যেতেন (মুয়াত্তা, বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান)
লেখক : প্রধান ফকিহ, আল জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী