নিজ বাড়িতে ফিরছে আজেরিরা
নিজ বাড়িতে ফিরছে আজেরিরা - ছবি : সংগৃহীত
আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে এক সপ্তাহ আগে। রাশিয়া এই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্ততা করেছে। চুক্তি অনুযায়ী কারাবাখের কিছু কিছু এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন দখলদার আর্মেনীয়রা। সেইসব জায়গায় ফিরে যাচ্ছেন আজারবাইজানিরা। ২৮ বছর পর নিজভূমে ফেরার স্বপ্ন সফল হচ্ছে তাদের। যদিও চুক্তিতে লেখা ছিল ১৫ নভেম্বর থেকে এলাকা ছাড়বে আর্মেনীরা। কিন্তু তা পুরোপুরি না হওয়ায় আর্মেনিয়ার প্রতি মানবিকতার নজির রেখে আরো ১০ দিন সময় দিয়েছেন আজেরি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। তবে ইতিমধ্যেই আপার কারাবাখের শুশা ও কলবাজার অঞ্চল ছেড়ে চলে গেছে হাজার তিরিশেক আর্মেনীয়।
উল্লেখ্য, শুশা শহর ভৌগোলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রক্তাক্ত ইতিহাস। ১৯৯৩ সালের যুদ্ধে কয়েক হাজার আজেরিকে উৎখাত করে এই শহরের দখল নেয় আর্মেনীয়রা।
অন্য দিকে ক’দিন আগেই একটা ভিডিও ভাইরাল হয়। যাতে দেখা যায় শুশার এক ভগ্নপ্রায় মসজিদের মিনারে উঠে আযান দিচ্ছেন এক আজেরি সেনা জওয়ান।
আবার অন্যদিকে দেখা যায় নিজেদের বসতবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে এলাকা ছাড়ছে কলবাজারের আর্মেনীয়রা। যাতে আজেরিরা ফিরে এসে ওইসব বড়িতে বসবাস করতে না পারেন। বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার কারণ, এসব বাড়ি তারা নিজের রক্তঘামে অর্জিত অর্থ দিয়ে কেনেনি। প্রায় ৩০ বছর আগে আর্মেনিয়া যখন ওই এলাকাটি দখল করে, তখন এগুলো আজারবাইজানি মুসলমানদের সম্পত্তি ছিল। দখলের পর আর্মেনিয়া সরকার বাড়িগুলো নামমাত্র মূল্যে সেখানে আসা আর্মেনীয়দের হাতে তুলে দিয়েছিল।
২৮ বছর আগে যুদ্ধ শুরু হলে প্রাণে বাঁচতে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে চৌদ্দ পুরুষের ভিটে ছেড়ে পালিয়ে যান হ্যামলেট মেহেরমোভ। এখন তিনি নাতি-নাতনিদের নিয়ে নিজের ভিটেতেই ফিরতে চাইছেন। তার স্ত্রী সুগায়েত মেদেতোবা বলেন, এই দিনটার জন্যই ২৮ বছর ধরে আল্লাহ্র কাছে আহাজারি করেছি। এও জানালেন, কলবাজারেই তার শ্বশুরবাড়ি এবং বাপেরবাড়ি। তাই পাহাড়ের কোলঘেঁষা কলবাজারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাদের আবাল্য স্মৃতি। তার কথায়, অবশেষে আল্লাহর মেহেরবানিতে আমরা খুব শিগগিরই কলবাজার ফিরে যাব। এই আনন্দে তার চোখের কোণে চিকচিক করে উঠল এক বিন্দু অশ্রু।
সাম্প্রতিক যুদ্ধে আজারবাইজানের পক্ষে সমর্থন দেয়া তুরস্ক ওই চুক্তিকে ‘আজারবাইজানের বিজয়’ বলে উল্লেখ করেছে। চুক্তির পর আজারবাইজানের নাগরিকরা আনন্দ-উল্লাসে মেতেছে। উল্টো দিকে আর্মেনিয়ায় হয়েছে বিক্ষোভ। উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি। এমনকি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা সার্ভিসের সাবেক প্রধান আর্তুর বেনেৎসিয়ানকে ১৪ নভেম্বর গ্রেফতারও করা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকৃত যেসব এলাকা আজারবাইজানকে ফেরত দেয়া হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব জায়গা থেকে আর্মেনীয় বংশোদ্ভূতরা দলে দলে ঘরবাড়ি ছেড়ে আর্মেনিয়ার দিকে চলে যাচ্ছে। অনেকে যাওয়ার আগে আগুন দিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে বলেও এক খবরে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
সূত্র : পুবের কলম ও অন্যান্য